সাভার উপজেলার হেমায়েতপুরের কাছেই আলিপুর গ্রাম। এই গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ঢাকা-মাওয়া পদ্মা সেতুর মহাসড়কের ধার ঘেঁষেই নজরকাড়া সূর্যমুখী ফুলের হলুদ আঙিনা। সূর্য উঁকি দিতেই আড়মোড়া ভেঙে এই সূর্যমুখী ফুলেরা জেগে ওঠে। আর সেই হলুদ ফুলের হাসিতে নিজেদের বৈকালীন সময় কাটাতে এখানে ছুটে আসেন বিভিন্ন শ্রেণীর পেশার প্রকৃতিপ্রেমীরা। বসন্তের শুরুতে সূর্যমুখীর ফুলের চাষ করে ভাগ্য বদল করছেন প্রান্তিক চাষীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাভারের প্রত্যন্ত অঞ্চলে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সূর্যমুখীর চাষ। স্বল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় বৃদ্ধি পাচ্ছে আবাদ। সাভার ও কেরানীগঞ্জ সীমান্ত এলাকা আলিপুরে বিশাল এলাকাজুড়ে রোপণ করা হয়েছে সূর্যমুখী ফুলের বীজ। এখন প্রতিটি গাছে ফুল ফুটেছে, যা দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে প্রকৃতিপ্রেমীরা ছুটে আসছেন। দুপুরের পর থেকেই সূর্যমুখী বাগান নানা বয়সী মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়। সূর্যমুখী ফুলের এ বাগানটি এখন সৌন্দর্যপ্রেমীদের কাছে দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। পথচারীদের মন কাড়ছে এ সূর্যমুখী ফুল।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, কয়েক বছর আগে এখানে পরীক্ষামূলকভাবে সূর্যমুখীর চাষাবাদ শুরু হয়। বীজ সংগ্রহের জন্যই এখানে চাষ হচ্ছে সূর্যমুখীর। এ বাগানে প্রায় ৪ একর জমিতে এবার সূর্যমুখীর আবাদ করা হয়েছে। এখান থেকে ২০-২৫ মণের মতো বীজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সূর্যমুখী ফুলের এ বাগানে সকাল থেকেই দেখা যায় মানুষের আনাগোনা। প্রতিদিনই এই হলুদ হাতছানিতে শামিল হয় শতশত তরুণ-তরুণী।
পরিবার নিয়ে বাগান দেখতে এসেছেন কলমারচর গ্রামের বাসিন্দা কামরুজ্জামান হীরা। তিনি ভোরের আকাশকে বলেন, সূর্যমুখী ফুলের বাগান ঘুরে দেখলাম। পরিবারের সঙ্গে ছবি তুললাম। বেশ ভালো লাগলো। এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য অবলোকনে শুধু প্রকৃতিপ্রেমীই নয় বরং যে কারও হৃদয় কাড়বে।
জয়নাবাড়ীগ্রাম থেকে আগত শেফালী আক্তার শিলা বলেন, পরিবারের সঙ্গে ঘুরতে এসেছি। স্মৃতি হিসেবে ছবি তুলে রাখলাম। খুব ভালো সময় কাটলো। বাগানে প্রবেশ করলেই মনে হবে, হলুদের আভায় চারিদিকেই যেন ছড়িয়ে আছে অপার মুগ্ধতা। সবুজ মাঠ আর হলুদ ফুলের ওপর মৌমাছি আর পাখির আনাগোনা চোখে পড়ার মতো। সবুজের মাঠে যেন হলুদিয়া রাজ্য।
তিনি বলেন, প্রতিদিন বিকেলে শহরসহ আশপাশের এলাকা থেকে সৌন্দর্য্যপিপাসুরা দলবেঁধে আসছেন এই সূর্যমুখী ফুলের বাগান দেখতে। অপূর্ব এক অনুভূতি যা সচক্ষে না দেখলে বোঝা যাবে না।
হেমায়েতপুরের কৃষক কালাম শেখ বলেন, বাগান দেখতে এসেছি। আগামীতে আমি কয়েক একর জমিতে এই সূর্যমুখীর চাষ করবো। অল্প সময়ে ভালো ফলন ও ভালো লাভ হয় বলে জানতে পেরেছি।
সাভার কৃষি অফিসার শারমিন বলেন, সূর্যমুখী চাষ একটি লাভজনক শস্য। সূর্যমুখী তেলের রয়েছে নানাবিধ স্বাস্থ্যগত গুণাগুণ। দিন দিন সূর্যমুখী বীজের তেলের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর চাষাবাদ জনপ্রিয় করার লক্ষে কাজ করা হচ্ছে। চাষিদের আগ্রহী করার পাশাপাশি তাদের প্রশিক্ষণ, বীজসহ নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে বীজ বপনের মাধ্যমে এ ফুলের চাষ শুরু করা হয়। বীজ বপনের পর থেকে ১০০ দিনের মধ্যে এ ফসল তোলা যায়। এতে তুলনামূলক খরচও কম। সামান্য পরিমাণ রাসায়নিক সার ও দুইবার সেচ দিতে হয়। এ আবাদে একরপ্রতি জমিতে ৪৫ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। আর ভালো ফলন হলে প্রতি একর জমিতে উৎপাদিত বীজ থেকে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা লাভ করা সম্ভব। সূর্যমুখী ফুলের গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
তিনি আরো বলেন, পরামর্শ ও বীজ নিয়ে অনেকেই এখন সূর্যমুখীর আবাদ শুরু করেছেন। দিনকে দিন সাভার ও কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার চাষিরা ব্যক্তি উদ্যোগে সূর্যমুখীর আবাদ শুরু করেছেন।
ভোরের আকাশ/ সু