logo
আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ১১:৫৭
আট মাস পলিথিনে বন্দি অ্যাম্বুলেন্স, ভোগান্তিতে মুমূর্ষু রোগীরা
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

আট মাস পলিথিনে বন্দি অ্যাম্বুলেন্স, ভোগান্তিতে মুমূর্ষু রোগীরা

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরে পলিথিনে বন্দী রয়েছে এম্বুলেন্স

সিরাজগঞ্জের বেলকুচি ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুটি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে একটি অ্যাম্বুলেন্স প্রায় ৮ মাস ধরে অকেজো হয়ে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় বন্দী হয়ে পড়ে আছে।

 

অন্যটি দিয়ে কোনোরকম সেবা দেওয়া হচ্ছে। সেটাও আবার মাসে কয়েক বার বিকল হয়ে পরে থাকে। এ অবস্থায় মুমূর্ষু রোগীদের জেলা শহর বা ঢাকায় পাঠানো সম্ভব হয় না। এতে রোগীর স্বজনদের অতিরিক্ত টাকা দিয়ে ভাড়ায় চালিত অ্যাম্বুলেন্সের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।


সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বেলকুচি ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরাতন ভবনের পাশে পলিথিন দিয়ে মোড়ানো অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সটি পড়ে রয়েছে। অ্যাম্বুলেন্সের চারটি চাকার মধ্যে দুইটি চাকা নেই। দুর্ঘটনায় অ্যাম্বুলেন্সের সামনের অংশটি পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চলাচলের জন্য অযোগ্য হওয়ায় এটিকে পলিথিনে জড়িয়ে রেখেছে কর্তৃপক্ষ।


উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের জুনে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে একজন রোগী নিয়ে ঢাকায় যায় অ্যাম্বুলেন্সটি। ফেরার পথে টাঙ্গাইলে সড়ক দুর্ঘটনায় অ্যাম্বুলেন্সটির ব্যাপক ক্ষতি হয়। যার কারণে পুরো অ্যাম্বুলেন্সটি একেবারে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। ওখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে এসে অ্যাম্বুলেন্সটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে।


স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েকজন কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিনই কোনো না কোনো মুমূর্ষু রোগীকে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতাল বা ঢাকাসহ বিভিন্ন হাসতালে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে একটি অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। সেটাও মাসে কয়েকবার বিকল হয়ে পড়ে থাকে। তখন রোগীদের অতিরিক্ত টাকা দিয়ে ভাড়া করা অ্যাম্বুলেন্সের ওপর নির্ভর করতে হয়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যায় পড়েন দরিদ্র রোগীদের স্বজনেরা।


হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীর স্বজনরা ভোরের আকাশকে বলেন, এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুটি অ্যাম্বুলেন্স ছিল। এর মধ্যে নতুন অ্যাম্বুলেন্সটি অকেজো হয়ে পড়ে আছে। তাই পুরোনোটি দিয়েই রোগী পরিবহন করা হচ্ছে। তবে সেটির সার্ভিস ভালো নয়। বেশিরভাগ সময় অ্যাম্বুলেন্সটি নষ্ট থাকে। তাই অনেক সময় বাইরে থেকে অ্যাম্বুলেন্স বেশি টাকা দিয়ে ভাড়া নিতে হয় রোগীদের জন্য। এতে খরচ বেশি হচ্ছে। জরুরি রোগী পরিবহন করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। তাই এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দ্রুত একটি নতুন অ্যাম্বুলেন্স দরকার।


স্থানীয়রা ভোরের আকাশকে জানান, যেকোনো রোগীর বেশি খারাপ অবস্থা দেখলে তাকে সঙ্গে সঙ্গে জেলা শহরের হাসপাতালে স্থানান্তর করতে বলা হয়। তবে অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যায় না। বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা ভাড়া লাগে। এতে দরিদ্র রোগীরা বিপদে পড়ে যায়। তাই এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সের সেবা চালু করার দাবি জানিয়েছেন তারা।


স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক আবদুল লতিফ ভোরের আকাশকে বলেন, দুটি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে একটি অকেজো হয়ে পড়ে আছে। সেটি মেরামত করা হলে চালানো যেত। বর্তমানে যে অ্যাম্বুলেন্সটি রয়েছে অনেক সময় সেটারও আবার ইঞ্জিনের কাজ করতে হয়। তখন হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স সেবা কিছুটা সময় বন্ধ থাকে।


বেলকুচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা একেএম মোফাখখারুল ইসলাম ভোরের আকাশকে জানান, দুটি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্য নতুনটি দুর্ঘটনার শিকার হয়ে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। বর্তমানে পুরাতন অ্যাম্বুলেন্সটি দিয়ে রোগী পরিবহন করা হচ্ছে। সেটির সার্ভিস সন্তোষজনক নয়। আমরা একটি নতুন অ্যাম্বুলেন্সের চাহিদা আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। এখন কতদিনে তা পাওয়া যেতে পারে এটা জানা নেই।


সিরাজগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. রাম পদ রায় ভোরের আকাশকে বলেন, অ্যাম্বুলেন্সটি মেরামত করতে অনেক টাকা লাগবে। আমি মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ চেয়েছি, না হলে নতুন একটা অ্যাম্বুলেন্সের জন্যও আবেদন করেছি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অবশ্যই একটা ব্যবস্থা করবেন বলে আশা করছি।

 

ভোরের আকাশ/ সু