বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহারে একটি রাস্তা সংষ্কার করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে পৌরসভা। সান্তাহার রেলগেট থেকে সাইলো সড়ক পর্যন্ত জনস্বার্থে রাস্তার দুইপাশে দুইফিট বাড়তি করলে পরিত্যক্ত রেললাইনের পাশে এগিয়ে পড়ে সড়কটি। এতে সংষ্কার কাজে বাধা বিঘ্নতা আসে রেল কর্তৃপক্ষের।
স্থানীয়রা বলছেন, সড়কটি বাড়তি হলে জনসাধারণের যাতায়াতে ব্যাপক সুবিধা হবে। এদিকে কোন এক সময়ে মালবাহী ট্রেন চললে দুর্ঘটনা আশঙ্কা কথা ভেবে রেলকর্তৃপক্ষ দিয়েছেন নোটিশ? এ কারণে সংষ্কার কাজটি ধীরগতিতে রয়েছে। যার ফলে এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াতে জনসাধারণের পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি। এখন কাজটি সম্পন্ন হওয়া নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছে এলাকাবাসী।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, সান্তাহার রেলগেট থেকে হার্ভে স্কুল মোড় হয়ে সাইলো সড়ক পর্যন্ত এই সড়ক দিয়ে পৌর শহরের লোকজন ছাড়াও সান্তাহার ইউনিয়ন দমদমা, সান্দিড়া সহ কয়েকটি গ্রামের লোকজনেরা প্রতিনিয়ত যাতায়াত করে। চলে ছোট-বড় যানবাহন। সান্তাহার শহরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াতের প্রধান সড়ক এটি। ফলে অতিরিক্ত ব্যবহারের কারনে বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য খানা-খন্দে ভরপুর হয়ে পড়ে। ফলে এই রাস্তা দিয়ে চলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হতো জনসাধারণের। চলতি বছরে জনসাধারণের ভোগান্তি কমাতে সড়কটির সংষ্কারের কাজ করে সান্তাহার পৌরসভা।
জানা যায়, সান্তাহার পৌরসভার বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে এই সড়ক সংষ্কারের কাজ শুরু করেন। চলতি বছরে ২২ জানুয়ারিতে এই সড়কটি উদ্বোধন করেন পৌর মেয়র তোফাজ্জল হোসেন ভুট্টু। উদ্বোধনের পরে জনস্বার্থে সড়কের দুইপাশে দুইফিট বাড়তি করা হয়। যার ফলে আশেপাশে বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙা পড়লে রাস্তা আরও বাড়তি হয়। এখন ছোট-বড় যানবাহনসহ জনসাধারণের যাতায়াতে সুবিধা হচ্ছে। সড়কটি বাড়তি করার ফলে পরিত্যক্ত রেল লাইনের দিকে কিছুটা এগিয়ে যাচ্ছে। ফলে রেলকর্তৃপক্ষ এই রাস্তা সংষ্কারে বাধা বিঘ্নতা সৃষ্টি করছে এমনটাই বলছেন সচেতন নাগরিক।
দমদমা গ্রামের বাসিন্দা সবুজ আহম্মেদ ও শ্যামলী আক্তার জানান, এই রাস্তা দিয়ে দিনে দুই-তিনবার ছেলেকে পড়াতে নিয়ে যেতে হয়। সান্তাহার শহরে আসার প্রধান সড়ক এটি। রাস্তায় ছোট-বড় গর্ত থাকার কারনে খুব অসুবিধা হতো। দীর্ঘদিন পরে সংষ্কার কাজ শুরু হয়েছে। কাজটি শেষ হলে আমাদের ভোগান্তি দূর হবে।
সান্দিড়া গ্রামের অটোরিকশা চালক মানিক হোসেন জানান, সড়কের দুই পাশে বাড়তি করায় আগের থেকে রাস্তাটি বড় হয়েছে। আগে রাস্তার পাশে অটোরিকশা, ভ্যান, রিকশা সিরিয়ালে রেখে যাত্রী তুলতে অনেক সমস্যা হচ্ছিল। একপাশে দিয়ে লোকজন ছোট-বড় গাড়ি নিয়ে যেতে পারতো না। মাঝে মাঝে ধাক্কা লাগতো। এখন থেকে আর সমস্যা হচ্ছে না। দুইপাশে গাড়ি চলার পরেও অনেকটা ফাঁকা থাকছে। এতে জনসাধারণের খুব সুবিধা হচ্ছে। দুর্ঘটনার আশঙ্কা কমে যাবে।
সচেতন নাগরিক আব্দুর রাজ্জাক জানান, জনগণের জন্য সড়কটি বাড়তি করে আগের থেকে অনেক সুবিধা হয়েছে। পরিত্যক্ত এই রেললাইনটি খুবই কম ব্যবহার হয়। বহু আগে রেললাইনের সমস্যা থাকায় একবার মালবাহী ট্রেন পড়ে গেছিলো। বিকল্প লাইন হিসেবে ইয়ার্ডের ভিতর দিয়ে একটা রেললাইন আছে। ওই লাইন দিয়ে মালবাহী ট্রেন মাঝে মধ্যে যায়। তাছাড়া এই পরিত্যক্ত রেললাইনের উপরে বাজারে বিভিন্ন দোকান বসানো হয়েছে। এক্ষেত্রে তাদের নোটিশ না করে যেটা জনস্বার্থে যেটা দশের উপকারে রাস্তাটি করা হচ্ছে সেখানে রেল বাধা দেয়। এরআগে জোড়া পুকুরের মাঝে রাস্তা করতে গিয়ে রেলের অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে পৌরসভাকে। পরে রাস্তাটি হওয়ার পর সেখানে লোকজন হাঁটতে পারছে।
সান্তাহার রেলওয়ে উপ-সহকারী প্রকৌশলী (কার্য) আব্দুর রহমান জানান, ওই রেললাইন দিয়ে মালবাহী ট্রেন এক সময় চলতো। প্রয়োজন অনুয়ায়ী এই রেললাইন ব্যবহার করা হয়। মালবাহী ট্রেন গেলে তখন জনসাধারণের সমস্যা হবে বিবেচনা করেই আমরা সান্তাহার পৌরসভাকে নোটিশ পাঠিয়েছি। যাতে সীমানা ঠিক রাখে।
সান্তাহার পৌরসভা মেয়র তোফাজ্জল হোসেন ভুট্টু জানান, জনস্বার্থে সড়কটি সংষ্কার করে রাস্তাটি দুইপাশে বাড়তি করা হয়েছে। এই রাস্তা দিয়ে পৌর শহরের লোকজনের থেকে ইউনিয়নের লোকজন বেশি ব্যবহার করে। তাদের সুবিধার কথা চিন্তা করেই এটি করা হয়েছে। রাস্তাটি বাড়তি হওয়ায় পরিত্যক্ত রেল লাইনের দিকে একটু এগিয়ে গেছে। তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে মালবাহী ট্রেন ওই রেল দিয়ে চলে না। মাঝে মধ্যে চললেও কোন অসুবিধা হবার কথা নয়। তবে দ্রুত কাজটি সম্পন্ন করা হবে।
ভোরের আকাশ/ সু