logo
আপডেট : ৬ মার্চ, ২০২৪ ১১:০৭
সিরাজগঞ্জে ১৩৩টি ইটভাটার মধ্যে ১৩০টিই অবৈধ 
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

সিরাজগঞ্জে ১৩৩টি ইটভাটার মধ্যে ১৩০টিই অবৈধ 

ইটভাটার কালো ধোঁয়া পরিবেশে বিরূপ প্রভাব ফেলছে

সিরাজগঞ্জ জেলার ৯টি উপজেলায় মোট ইটভাটার সংখ্যা রয়েছে ১৩৩টি। আর এই ১৩৩টি ইটভাটার এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইটভাটা রয়েছে রায়গঞ্জ উপজেলায়। যার সংখ্যা ৬২টি, উল্লাপাড়ায় ৩১টি, শাহজাদপুরে ১৯টি, সিরাজগঞ্জ সদরে ৯টি, তাড়াশে ৬টি, কাজিপুরে ৩টি, কামারখন্দে ২টি ও বেলকুচিতে ১টি।

 


এই ইটভাটাগুলোর মধ্যে কোনোটির লাইসেন্সের মেয়াদোত্তীর্ণ আবার কোনোটির লাইসেন্স নেই ও লাইসেন্স করা হয়নি। এই অবৈধ ইটভাটাগুলো দিনের পর দিন, মাসের পর মাস ও বছরের পর বছর সবাইকে ম্যানেজ করেই চলছে ইট পোড়ানোর কাজ।

 


পরিবেশ সংরক্ষন আইন অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পাহাড়, বন ও জলাভূমির এক কিলোমিটার এলাকা এবং কৃষি জমিতে কোনো ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না বলা থাকলেও এসব কোনো আইনই মানছেন না ইটভাটা মালিকরা। আর এই সব ইটভাটা থেকে যে বিষাক্ত উপাদান ও ধোয়া নির্গত হয় সেটি পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক এবং মানবদেহের স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে।

 


স্থানীয় রাজনীতিবিদ, ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রভাবশালীদের মালিকানার ছত্রচ্ছায়ায় এসব ইটভাটা চলছে। গত বছর কয়েকটি ইটভাটায় পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসন অভিযান চালিয়ে কার্যক্রম বন্ধ ও জরিমানা করলেও কিছুদিন বন্ধ থাকার পর আবার সেগুলো চালু হয়েছে।

 


পরিবেশবাদী সংগঠন ‘ক্লিন সিরাজগঞ্জ, গ্রীন সিরাজগঞ্জ’ এর প্রতিষ্ঠাতা আশিক ইসলাম ভোরের আকাশকে জানান, ইটভাটাগুলো কার্বন কণা সমৃদ্ধ সাসপেন্ডেড পার্টিকুলেট ম্যাটার, কার্বন মনোক্সাইড ও সালফার অক্সাইডের উচ্চ ঘনত্বযুক্ত বিষাক্ত ধোঁয়া নির্গত করে। যা পরিবেশের ভারসাম্য এবং মানবদেহ; বিশেষ করে চোখ, ফুসফুস ও গলার জন্য ব্যাপক ক্ষতিকর।

 


মাহবুবুল ইসলাম পলাশ প্রকৃতি ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করেন। তিনি ভোরের আকাশকে বলেন, পরিবেশ ও জমি দূষণ রোধে সবাইকে একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে। ইটভাটার ধোয়ায় ফসলের ক্ষতি হচ্ছে, ফলমূলের ক্ষতি হচ্ছে। এরকারণে অদূর ভবিষ্যতে এ দেশে খাদ্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এসব অবৈধ ইটভাটার কালো ধোয়ায় কৃষিজমিতে যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে এর কারণে এই অঞ্চলের খাদ্যনিরাপত্তা হুমকীর মুখে পড়বে বলে মনে করছেন পরিবেশবাদীরা।

 


রায়গঞ্জ ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম হোসেন শোভন সরকার ভোরের আকাশকে বলেন, আমরা জেলা প্রশাসনের সকল আইন মেনে ইটভাটা পরিচালনা করছি। শুধু পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। কিছু ইটভাটার লাইসেন্স ছিল না। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে জরিমানা করা হয়েছে এবং বেশ কয়েকটি ভাটা গুড়িয়ে দিয়ে প্রশাসন।

 


রায়গঞ্জ ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক আবু হানিফ খান ভোরের আকাশকে বলেন, ইটভাটা পরিচালনার জন্য অন্যান্য সকল লাইসেন্স আমাদের রয়েছে। পরিবেশের ছাড়পত্র ছিল এখন নেই কিন্তু ছাড়পত্রের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরে আবেদন করা হয়েছে।

 


এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক আব্দুল গফুর ভোরের আকাশকে বলেন, আমরা কাজের তৎপরতা বাড়িয়ে দিয়েছি। নিয়মিত ভাটাগুলোর আইনগত কাঠামো বিশ্লেষন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে বেশ কয়েকটি ইটভাটায় জরিমানা করা হয়েছে এবং গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এ বছর সিরাজগঞ্জের ২১টি অবৈধ ও লাইসেন্স বিহীন ইটভাটায় ৫৮ লক্ষ টাকা জরিমানা করা ও গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

 

ভোরের আকাশ/ সু