দিনাজপুরের বীরগঞ্জে সিংড়া ফরেস্ট জাতীয় উদ্যানে অবমুক্তের অপেক্ষায় বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির ১০টি শকুন। প্রতিবছর এ উদ্যানের পরিচর্যা কেন্দ্রে আনা অসুস্থ শকুন সুস্থ হলে তাদেরকে অবমুক্ত করা হয়। এবারও বিভিন্ন জেলা থেকে অসুস্থ অবস্থায় ধরা পড়া বিভিন্ন প্রজাতির ১০টি শকুন অবমুক্ত করা হবে।
গত বছর বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির অসুস্থ ২০ শকুনকে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে উদ্ধার করে পরিচর্যা কেন্দ্রে এনে নীবিড় পরিচর্যা শেষে সুস্থ করে অবমুক্ত করা হয়। তার আগের বছর ১৯টি শকুন অবমুক্ত করা হয়।
জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে অসুস্থ ও আহত অবস্থায় শকুন উদ্ধার করে শকুন রক্ষা এবং বংশবৃদ্ধির লক্ষে বীরগঞ্জ সিংড়া ফরেস্ট জাতীয় উদ্যান কেন্দ্রে নীবিড় পরিচর্যায় রাখা হয়। সুস্থ হলে আবার তাদেরকে অবমুক্ত করা হয় মুক্ত আকাশে।
প্রকৃতির পরম বন্ধু হিসেবে পরিচিত বিলুপ্ত প্রায় এই শকুন শীত মৌসুমে বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে আসে। দীর্ঘপথ পাড়ি দেওয়া এসব শকুন অনেক সময়ই অসুস্থ হয়ে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় পড়ে যায়। আগে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব শকুন উদ্ধার হলেও পরিণতি হতো মৃত্যু। কিন্তু দিনাজপুরে বীরগঞ্জ উপজেলার সিংড়া ফরেস্ট জাতীয় উদ্যানে শকুন উদ্ধার ও পরিচর্যা কেন্দ্র স্থাপনের পর থেকে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে।
বীরগঞ্জ সিংড়া জাতীয় উদ্যানের বন বিট কর্মকর্তা দয়া প্রসাদ রায় বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এবার অবমুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে ১০ শকুন। তবে এই জাতীয় উদ্যানে একটি শকুন অতিথি হয়ে রয়েছে অনেক দিন। বর্তমানে ৯টি শকুন সুস্থ হয়ে চলাফেরা করছে।
দিনাজপুর সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা বশিরুল আল মামুন বলেন, মূলত শীতকালে হিমালয় অঞ্চল থেকে আমাদের দেশে আসে শকুন। অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে আসার পর তারা দুর্বল হয়ে পড়ে। উড়তে না পেরে লোকালয়ে আটকা পড়ে। তাদের উদ্ধার করে আমরা খাদ্য ও চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা করে থাকি। গত বছর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ৪৬টি শকুন উদ্ধার করা হয়েছে। মূলত উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে এদের বেশিরভাগ উদ্ধার করা হয়। বীরগঞ্জ শালবন থেকে ২০টি শকুন অবমুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, অন্যান্য সাফারি পার্কে কিছু শকুন রয়েছে। ২০১৪ সালে প্রকল্পটির যাত্রা শুরু হয়। প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত ২৪৯টি শকুন উদ্ধার করে চিকিৎসাসেবা দিয়ে প্রকৃতিতে অবমুক্ত করা হয়েছে। এবার ১০টি শকুন অবমুক্তের অপেক্ষায় রয়েছে।
শকুনকে বলা হয়, প্রকৃতির ঝাড়ুদার। এটি উপকারী প্রাণী। শকুনের বংশবিস্তার এবং এর অস্তিত্ব রক্ষায় প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। কয়েক বছর থেকে সিংড়া শালবনে শকুনের পরিচর্যা করে ও চিকিৎসাসেবার মাধ্যমে শীত শেষে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। বিলুপ্ত প্রায় প্রাণীটি রক্ষায় তারা কাজ করে যাচ্ছেন। শকুনগুলোর শরীরে বাংলাদেশ লেখা স্যাটেলাইট ট্র্যাকিং ডিভাইস লাগানো হয়েছে। এর মাধ্যমে এদের গতিবিধি ও সর্বশেষ অবস্থান জানা যাবে।
ভোরের আকাশ/মি