স্ট্রবেরি শীতপ্রধান দেশের ফল হিসেবে প্রচলন থাকলেও প্রান্তিক কৃষকের কল্যাণে এখন বাংলাদেশেও ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। স্ট্রবেরি বাজার চাহিদা, ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় প্রতিনিয়ত গাজীপুরের শ্রীপুরে কৃষকদের মধ্যে জনপ্রিয় হচ্ছে স্ট্রবেরি চাষ। তাই স্ট্রবেরি চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন স্থানীয় কৃষকেরা। এবার স্ট্রবেরি চাষে সাড়া ফেলেছেন এলাকার চাষিরা। উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তারা সরবরাহ করছেন। তাদের দেখে অনেক কৃষক স্ট্রবেরি চাষের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
শ্রীপুর উপজেলা কৃষি সস্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের গোদারচালা, বরমী ইউনিয়নের বরমা, গাড়ারন, গাজীপুর ইউনিয়নের নিজ মাওনা, গোসিংগা ইউনিয়নের পেলাইদ এলাকায় স্ট্রবেরি চাষ করা হয়েছে। স্ট্রবেরি আকর্ষণীয় বর্ণ, গন্ধ, স্বাদ ও উচ্চ পুষ্টিমানের জন্য স্ট্রবেরি অত্যন্ত সমাদৃত। ফল হিসেবে সরাসরি খাওয়া ছাড়াও বিভিন্ন খাদ্যের সৌন্দর্য সুগন্ধ বৃদ্ধিতেও ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয়ে আসছে। অল্প পুঁজি, স্বল্প শ্রম কিন্তু লাভ অনেক বেশি। এ ফল চাষে অল্প দিনেই সফলতার মুখ দেখেছেন এ উপজেলার অনেক কৃষকরা।
শ্রীপুর উপজেলার গোদারচালা গ্রামের উসমান আলীর ছেলে তোফায়েল আহমেদ তপু তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি লাভ করার পর চাকরির প্রত্যাশায় ঘুরে চাকরি না পেয়ে স্বাবলম্বী অর্জনের লক্ষ্যে বিভিন্ন পথ খুঁজতে থাকেন। পরে স্ট্রবেরি চাষ করে পেয়েছেন সাফল্য। এবার ২ বিঘা জমিতে চাষ করেছেন স্ট্রবেরি। ফল পাকতে শুরু করেছে। প্রতি কেজি স্ট্রবেরি বিক্রি করছেন ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকা করে। স্ট্রবেরি চাষ প্রায় ৪ মাস মেয়াদী লাভজনক একটি ফসল। ৪ মাস পরিশ্রম করলে খরচের চেয়েও ৪ গুণ লাভ করা সম্ভব। স্ট্রবেরি চাষ করে কেবল তিনি নিজেই লাভবান হয়েছেন তাই নয়, অন্যদেরও স্ট্রবেরি চাষে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা দিয়ে উৎসাহিত করেছেন।
শ্রীপুর উপজেলা বরমী ইউনিয়নের বরমা গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম জানান, ভাদ্র মাসের প্রথম দিকে স্ট্রবেরি চাষ শুরু করতে হয়। এ জন্য পাওয়ার টিলার বা ট্রাক্টর দিয়ে ৫ থেকে ৬টি চাষ করে জমির মাটি ঝরঝরে করে নিতে হয়। তারপর সার, গোবর ও ক্যালসিয়ামের অন্য উপাদান ব্যবহার করে জমি প্রস্তুত করতে হয়। বিঘা প্রতি স্ট্রবেরি চাষে খরচ হয় ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা। সব খরচ বাদ দিয়ে লাভ থাকে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা।
উপজেলার কাওরাইদ গ্রামের ফরহাদ বলেন, লোক মুখে শুনে সাইফুল ইসলাম ভাইয়ের স্ট্রবেরি বাগান দেখতে ছুটে এসেছি। বাগান দেখে ভালো লেগেছে। বাগান থেকে নিজে ছিড়ে স্ট্রবেরি খেয়েছি। বেশ ভালো স্বাদ। সাইফুলের বাগান দেখে আমিও বাগান করবো বলে ভাবছি। স্ট্রবেরির বাগান দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছে জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। তারা গাছ থেকে স্ট্রবেরি ছিড়ে খাচ্ছে। এ বাগান দেখে অনেকেই স্ট্রবেরির চাষ করার কথাও ভাবছে।
শ্রীপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা সুমাইয়া সুলতানা বন্যা বলেন, ‘স্ট্রবেরি উচ্চমূল্য এবং পুষ্টিসমৃদ্ধ একটি ফল। উচ্চ ফলনশীল স্ট্রবেরি বাণিজ্যিকভিত্তিতে চাষাবাদ করার মাধ্যমে বেকারত্ব এবং পুষ্টি ঘাটতিও পূরণ করা সম্ভব হবে। নভেম্বর-ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত স্ট্রবেরির চারা রোপণ করা যায়। অল্প বিনিয়োগে বেশি মুনাফা হওয়ায় কৃষকদের আগ্রহ অনেক বেশি।’
ভোরের আকাশ///