ট্রায়াল হলেও আগামী জুনের আগে ট্রেন যাত্রায় অংশ নিতে পারছে না যশোর-নড়াইল তথা এই এলাকার মানুষ। দুই মাস অপেক্ষা করা ছাড়া তাঁদের কিছুই করার নেই। আগামী জুন নাগাদ এই পথে বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচল শুরু হতে পারে। ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত ব্রডগেজ ওই রেলপথে ভাঙ্গা, কাশিয়ানী এবং যশোরের পদ্মবিলা ও সিঙ্গিয়াতে রেলওয়ে জংশন থাকছে। এছাড়া নগরকান্দা, মুকসুদপুর, মহেশপুর, লোহাগড়া, নড়াইল এবং যশোরের জামদিয়া ও রূপদিয়াতে রেলস্টেশন হয়েছে। কাজের অংশ হিসেবে শনিবার ও রোববার দুই দিন ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত বিভিন্ন গতিতে ট্রেন চালিয়ে নির্মাণাবস্থা পরীক্ষা করা হয়।
ট্রায়ালে অংশ নেয়া রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা বলেন, ভাঙ্গা থেকে যশোর অংশের ৮৭.৩২ কিলোমিটার পথ ৮০-১০০ কিলোমিটার বেগে পাড়ি দিয়েছেন তারা। পথে কোথাও কোনো সমস্যার সম্মুখীন হননি তারা। আশা করা যাচ্ছে, এ রুটে আগামী জুনের মধ্যেই বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন পরিচালনা করা সম্ভব হবে।
পরীক্ষামূলক ট্রেনের চালক আব্দুল মান্নান বলেন, সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে আমরা ভাঙ্গা ছেড়ে আসি। সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে যশোরের রূপদিয়া স্টেশনে পৌঁছেছি। এটি ছিল ভাঙ্গা থেকে যশোর ট্রেন যাত্রার প্রথম বাস্তবতা।
পদ্মা সেতুর রেলপ্রকল্পের পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে এ রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ অর্থায়নে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘চায়না রেলওয়ে গ্রুপ’ (সিআরইসি) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। মাঠ পর্যায়ে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালে। শনিবার ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত আমরা দ্রুত গতির এ ট্রেনের ট্রায়াল রান করালাম। কোনো সমস্যা ছাড়াই ট্রায়াল হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করলে জুন থেকে এ রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হবে।
তিনি বলেন, পদ্মা রেল সেতু হয়ে নতুন ট্রেন চলাচলের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় খুশি স্থানীয়রা। তাদের দাবি, এলাকার উন্নয়নের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত সৃষ্টি হয়েছে। রেল লাইনের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য মানুষ হাত নেড়ে নতুন লাইনে রেলগাড়ি চলায় আনন্দ প্রকাশ করেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, পদ্মা সেতুর রেলসংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগের বিপ্লব ঘটল। এ অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে ঢাকার দূরত্ব কমেছে। সহজেই যাতায়াত করতে পারব।
আরেক বাসিন্দা আলমগীর কবির বলেন, পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচলের মধ্যদিয়ে রেল যোগাযোগের মাইলফলক তৈরি হলো। এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন পূরণ হলো। রেল যোগাযোগের মাধ্যমে এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মানও বদলে যাবে।
যশোর স্টেশন মাস্টার আয়নাল হাসান বলেন, এ ট্রেন যশোরবাসীর জন্য প্রধানমন্ত্রীর ঈদের উপহার। পণ্যবাহী (পাথর) ট্রেনটি ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার বেগে যশোরে আসে। যাওয়ার সময় আরও বেশি বেগে গেছে। যাত্রীবাহী ট্রেনের গতি ১০০-১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত পরীক্ষা করা হয়। দুই দিনের পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচলের পর আগামী জুন নাগাদ এ রুটে বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হতে পারে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কোনো ঝামেলা ছাড়াই ট্রায়াল সম্পন্ন হয়েছে। আগামী জুন নাগাদ এই পথে বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচল শুরু হতে পারে। ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত ব্রডগেজ ওই রেলপথে ভাঙ্গা, কাশিয়ানী এবং যশোরের পদ্মবিলা ও সিঙ্গিয়াতে রেলওয়ে জংশন থাকছে। এছাড়া নগরকান্দা, মুকসুদপুর, মহেশপুর, লোহাগড়া, নড়াইল এবং যশোরের জামদিয়া ও রূপদিয়াতে রেলস্টেশন হয়েছে।
ভোরের আকাশ/মি