তিস্তা ও ঘাঘট নদী বিধৌত পলিমিশ্রিত মাটির কারণে শস্যভান্ডার খ্যাত রংপুরের পীরগাছায় ধান, গম, পাট, আলু, কলা, টমেটো, মরিচ-পেঁয়াজ ও ভুট্টার উৎপাদন হয় বেশি। পাশাপাশি বেগুন চাষ করেও এখানকার কৃষকরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন। বেশি লাভ হওয়ায় বর্তমানে তারা অন্য ফসলের পাশাপাশি বেগুন চাষে ঝুঁকছেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর পীরগাছায় বেগুন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩২৩ হেক্টর জমিতে। অর্জিত হয়েছে ৩২৫ হেক্টর জমি এবং উৎপাদন হয়েছে ১১ হাজার ১৬৩ মেট্রিক টন। কৃষকরা আগাম জাতের বেগুন চাষ করে সফলতা পেয়েছেন।
সরেজমিনে পীরগাছা উপজেলা সদরে পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ৫-৬ টাকা কেজি দরে চিকন বেগুন বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকা কেজি দরে।
আড়তদার সালেক মিয়া বলেন, ‘এবার পীরগাছায় ব্যাপক বেগুনের আবাদ হয়েছে। রংপুরসহ আশেপাশের উপজেলা থেকে এক-দেড় মাস আগেও কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ক্ষেত থেকে আমরা বেগুন কিনেছি। ৫০-৬০ টাকা দরে কিনে নিয়ে এসে পাইকারি ৬৫-৭০ টাকায় বিক্রি করেছি। এখন চাহিদা অনেকটা কমেছে, ফলে দামও কমেছে।’
অন্যদিকে, বেগুন উৎপাদনের জন্য খ্যাত উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের কিশামত ছাওলা গ্রামের বেগুন চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা চলতি বছর শুধু বেগুন চাষ করে অভাবনীয় মুনাফা পেয়েছেন।
ওই গ্রামের কৃষক আব্দুল জলিল বলেন, ‘গত বছরের শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে ২৫ শতক জমিতে হাইব্রিড জাতের পারপোলকিং বেগুন লাগিয়েছি। শুরুর দিকে ৫২ টাকা কেজি দরে বেগুন পাইকারি বিক্রি করেছি। আমি ১ লাখ ৪০ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করেছি। কিছু খুচরো বিক্রি করেছি।’
তিনি আরও জানান, প্রায় ৪০ বছর ধরে বেগুন চাষ করেন। বর্তমানে তার জমিতে বেগুন, শসা, লাউ, ডাটা ও পাটশাক আছে। উৎপাদিত বিভিন্ন সবজি বিক্রি করে প্রায় ৮০ শতক জমি কিনেছেন। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করিয়েছেন, বাড়ি-ঘর করেছেন।
কৃষকরা জানান, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বর্তমান বেশি লাভের আশায় সবজি চাষে ঝুঁকছেন তারা। আগামী বেগুন মৌসুমের প্রস্তুতির জন্য কৃষকরা ক্ষেতের বেগুনসহ গাছ উপড়ে ফেলছেন। ওই ক্ষেতে বোরো চাষ করে আগামী শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে আবারও বেগুন চাষ করবেন তারা।
এ ব্যাপারে পীরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে আলুসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি বেশি বাজারে আসার কারণে বেগুনের দাম একটু কম। তারপরেও কৃষক বেগুন চাষে লাভবান হবেন। কারণ বেগুন একবারে নষ্ট হয় না। দীর্ঘদিন ধরে ক্ষেত থেকে উঠানো যায়।’
তিনি আরও জানান, নিয়ম অনুযায়ী সব কৃষককে কৃষি বিভাগ সহযোগিতা করবে।
ভোরের আকাশ/মি