রমজান শেষে আর মাত্র দুই একদিন পরেই উদযাপিত হতে যাচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। এবার ঈদের ছুটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাংলা নববর্ষের ছুটি। ফলে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে ভ্রমণে আসবেন অন্তত ৩-৪ লাখ পর্যটক। এই নিয়ে প্রতিবারের মতো এবারও ঈদের ছুটিতে পর্যটনকেন্দ্রগুলো পর্যটক বরণে প্রস্তুত হচ্ছে। দিচ্ছে নানা ধরনের আকর্ষণীয় প্যাকেজ ও ছাড়।
ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকে ইতোমধ্যে কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস ও কটেজে প্রায় ৬০ শতাংশ রুম অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক) এর সাধারন সাধারন নুরুল কবির পাশা বলেন, কক্সবাজারে পর্যটকদের সেবা দেয়ার জন্যে আমরা প্রস্তুত। এবার ঈদে কক্সবাজারে অন্তত ৩-৪ লাখ পর্যটক আগমনের সম্ভাবনা রয়েছে। আগত পর্যটকদের হয়রানিরোধে জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ, ট্যুরিষ্ট পুলিশ ও টুয়াক সমন্বয় করে কাজ করবে। ইতিমধ্যে অধিকাংশ হোটেল রিসোর্টে অগ্রিম বুকিং সম্পন্ন হয়েছে। অনেক হোটেলে বিশেষ ছাড়ও চলছে। আশা করছি এই ঈদে পর্যটকরা খুবই আনন্দ ও স্বাচ্ছন্দ্যে কক্সবাজার ভ্রমণ করতে পারবেন।
কক্সবাজার কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল-মোটেল জোনের সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, ঈদে কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকরা সাড়া দিয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় হোটেল-মোটেলের ৬০ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়েছে।
এবারের ছুটিতে পর্যটকরা যেন হয়রানি না হয় সে লক্ষে টুরিস্ট পুলিশ, জেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের সমিতির অন্তর্ভুক্ত কোনো হোটেলের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার অভিযোগ পেলে তার সদস্যপদ বাতিল করা হবে। পর্যটকদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে আমরা প্রস্তুত।
হোটেল স্বপ্নীল সিন্ধুর শরীফ আদনান বলেন, ঈদের পরের দিন থেকে আমাদের হোটেলে প্রায় শতভাগ বুকিং আছে। এবারের ঈদুল ফিতর ও পহেলা বৈশাখের ছুটি থাকায় বুকিং বেড়েছে। আমরা আশা করছি এবারে কক্সবাজারে ৩ লাখ পর্যটক সমাগম হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগের চেয়ে দেশীয় পর্যটকের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। তবে বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিশেষ করে মূল্যস্ফীতির নেতিবাচক প্রভাব পর্যটন খাতেও পড়েছে। এছাড়া আবহাওয়া অতিরিক্ত গরম থাকলেও পর্যটকের সংখ্যায় প্রভাব ফেলবে। তাছাড়া মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের কারণে সেন্টমার্টিনে পর্যটক যাতায়াত বন্ধ রয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বান্দরবানের ঘটনা। এসব বিষয় সামগ্রিকভাবে পর্যটনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে এবারের ঈদে গতবারের চেয়ে কম ব্যবসা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে ব্যবসায়ীদের আশা এবার ভালো ব্যবসা হবে।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস ও রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সেলিম নেওয়াজ বলেন, বিগত বছরগুলোতে রোজার ১৫ দিনের মধ্যে হোটেলের ৬০ ভাগ কক্ষ বুকিং হতো। এবার রোববার পর্যন্ত মাত্র ৪০-৪৫ শতাংশ রুম বুকিং হয়েছে। তারপরও আমরা আশাবাদী, কয়েকদিনের মধ্যে পর্যাপ্ত বুকিং হবে। ব্যবসাও ভালো হবে।
ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক) সভাপতি তোফায়েল আহমেদ বলেন, এবারের ঈদুল ফিতর ও পহেলা বৈশাখের ছুটিতে কক্সবাজারে অন্তত ৩-৪ লাখ পর্যটক সমাগম হবে বলে আমরা আশা করছি। পর্যটকদের বরণ করে নিতে আমাদের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। কক্সবাজারের প্রায় হোটেল বুকিং হয়ে গেছে। পর্যটকরা যেন হয়রানি না হয় সেটির লক্ষে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
কক্সবাজার বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক গোলাম মোর্তজা হোসেন বলেন, ঈদের একদিন আগে থেকে কক্সবাজার রুটে চাপ রয়েছে। ঈদের পরের দিন থেকে কক্সবাজারে দৈনিক ২০টি ফ্লাইট আসবে ২০টি যাবে। এবারের ঈদে ছুটিতে পর্যটকদের টিকিটের চাহিদা বেশি। ইতোমধ্যে আমরা ফ্লাইট বাড়ানোর পরিকল্পনা করছি।
কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনের মাস্টার মেহেদী হাসান বলেন, পর্যটকদের জন্য স্পেশাল বিশেষ ট্রেন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে প্রথমবারের মতো স্পেশাল কমিউটার ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ঈদের পরদিন থেকে টানা ১০ দিন পর্যন্ত চাপ থাকবে।
এদিকে পর্যটকের নিরাপত্তায় কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, পর্যটকের সেবা নিশ্চিত ও নিরাপত্তায় সচেষ্ট রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। পর্যটন স্পটগুলো এবং সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে পোশাকধারীদের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা থাকবেন।
পর্যটক হয়রানি বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) ইয়ামিন হোসেন বলেন, পর্যটকদের হয়রানি বন্ধে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিয়ে থাকে জেলা প্রশাসন। তারপরও হোটেলে অতিরিক্ত ভাড়া কিংবা চালকের হাতে হয়রানির অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ভোরের আকাশ/মি