logo
আপডেট : ১৫ এপ্রিল, ২০২৪ ১৬:০৭
নাব্যতাসঙ্কটের শঙ্কা
মোংলা-ঘোষিয়াখালী চ্যানেলের তীরভূমি দখলের মহোৎসব
মো. কামরুজ্জামান, বাগেরহাট

মোংলা-ঘোষিয়াখালী চ্যানেলের তীরভূমি দখলের মহোৎসব

ক্যাপশন: মাছ চাষ করায় হুমকির মুখে পড়েছে চ্যানেলটি

মোংলা-ঘোষিয়াখালী চ্যানেলের তীরভূমি ও প্লাবনভূমির হাজার একর সরকারি চরভরাটি জমি দখল করে মাছ চাষের মহোৎসবের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কথিত ভূমিহীন ও ভূমিদস্যুরা এসব জমি দখলে নিয়ে বড় বড় খামার করে মাছ চাষ করাসহ বাড়ীঘর নির্মাণ করে বসবাস করছে। এতে সরকারের হাজার কোটি টাকা মূল্যের জমি বেহাত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

 

চ্যানেলের তীরভূমি ও প্লাবনভূমির পানি প্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত হওয়ায় নতুন করে হুমকিতে পড়েছে চ্যনেলটি। এতে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন এবং মোংলা বন্দরও হুমকিতে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাগেরহাট জেলা কালেক্টর, বাগেরহাটের পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিআইডাব্লুটিএ সহ সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা ও নজরদারীর অভাবে এত বিপুল পরিমাণ মূল্যবান জমি বা তীরভূমি বেহাত হতে চলেছে বলে পরিবেশবাদী সংগঠন ও সচেতন মহল মনে করেন।

 

জানা গেছে, মোংলা-ঘোষিয়াখালী চ্যানেলটি ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ। এটি জলবায়ু পরিবর্তন ও মনুষ্যসৃষ্ট প্রতিবন্ধকতার কারণে নাব্যতা হারায়। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে প্রায় ৫ শত কোটি টাকা ব্যয়ে চ্যানেলটি খনন করে উম্মুক্ত করা হয়। চ্যানেলটির নাব্যতা রক্ষায় মূল চ্যানেলটির ৫ কিলোমিটার এলাকা বাদ দিয়ে রোমজাইপুর পয়েন্টে লুফ কাট দিয়ে আলাদা করা হয়। পাঁচ কিলোমিটার এলাকা লম্বা ও প্রায় ৩ শত মিটার চওড়া নদীর মূল অংশ খনন না করায় এটি এখন শীর্ণকায় খালে পরিণত হয়েছে। যা মুজিবনগর ও রোমজাইপুর পয়েন্টের বড়দিয়া, ছোটদিয়া, কুমারখালী মৌজার কালিগঞ্জ এলাকা জুড়ে বিস্তৃত।

 

পাঁচ কিলোমিটার চ্যানেলের অংশে ৬০ এর দশক থেকে নদীর গতিপথ পরিবর্তনের কারণে নদী ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়। এতে প্রায় হাজার একর জমি সরকারি খাস খতিয়ানভূক্ত হওয়ার কথা থাকলেও সেটি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এটি রক্ষনাবেক্ষণেও সরকারের ভূমি ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্টদের নানান অসঙ্গতি রয়েছে বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

 

নদী ভাঙ্গনের পর চরভরাটি জমি এক শ্রেণীর কথিত ভূমিহীন ও ভূমিদস্যুরা রামপালের সেটেলমেন্ট অফিস ও রামপালের সহকারী কমিশনারের অফিসের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে তঞ্চকি কাগজপত্র তৈরি করে রেকর্ড করে নেন। এমনকি তারা কেউ কেউ আদালতে ভূয়া কাগজপত্র জমা দিয়ে জমি হাতিয়ে নিয়েছেন। ব্যক্তি মালিকানা জমি ভেঙ্গে নদীতে বিলিন হয়ে অপর পারে চর পড়লে সেটিও ভূমিদস্যুরা কাগজপত্র তৈরি করে মালিকানায় নিয়ে নেয়। যা তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে বলে সচেতন মহল মনে করেন।

 

নতুন করে মুজিবনগর পয়েন্টে ভূমিদস্যুরা আবারো নদীর তীরভূমি ও প্লাবনভূমি দখল করে বেড়িবাঁধ দেয়া শুরু করেছে। গিলাতলার মিজান মল্লিকের নেতৃত্বে মুজিবনগর গ্রামের শেখ ইলিয়াসের ছেলে শেখ বেলাল, রুস্তুম শেখের ছেলে শেখ মুকুল, শেখ শরিফুল, শেখ সাইফুল ও শেখ সোলাইমানের ছেলে শেখ আরিফ এবং মৃত শেখ মাহাতাবের ছেলে মোজাফফর হোসেন বেড়িবাঁধ দিচ্ছেন।

 

সরেজমিনে গিয়ে অবৈধ বেড়িবাঁধ দিতে দেখতে পান এ প্রতিবেদকসহ সাংবাদিকরা।

 

এ বিষয়ের মল্লিক মিজানুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। অভিযুক্ত শেখ বেলাল, মুকুল, আরিফ ও শরিফুলের কাছে জানতে চাওয়া হয় কেন খাস জমিতে বাঁধ দিচ্ছেন ? এর উত্তরে তারা বলেন, সবাই সরকারি খাস জমি দখল করে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছে। আমরা বাঁধ দিতে গেলে মিজান মাষ্টারের লোকজন বাঁধা দিচ্ছে। সবাই জমি ঘিরেছে, আমরা ঘিরলে দোষ হচ্ছে।

 

এ ব্যাপারে মোংলা-ঘোষিয়াখালী চ্যানেল রক্ষা সংগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব মোল্লা আব্দুস সবুর রানা অভিযোগ করে বলেন, বাগেরহাট জেলা কালেক্টর, সংশ্লিষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিআইডাব্লুটিএ এর নজরদারীর অভাবে হাজার কোটি টাকা মূল্যের জমি বেহাত হয়েছে। নদীর নাব্যতা হ্রাস পাচ্ছে এবং হুমকির মুখে পড়েছে চ্যানেলটি।

 

এ বিষয়ে রামপাল ইউএনও রহিমা সুলতানা বুশরা বলেন, মোংলা ঘোষিয়াখালী চ্যানেলের নাব্যতা রক্ষায় সব কিছু করা হবে। সরকারি জমি অবৈধভাবে দখলকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি জনবল সংকটের কারণে ভূমি ব্যবস্থাপনায় বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে বলে দুঃখ প্রকাশ করেন।

 

ভোরের আকাশ/মি