চিনির চেয়ে ৪০ গুণ বেশি মিষ্টি পাতা। আবার একই পাতা শুকিয়ে পাউডার তৈরি করলে মিষ্টতা বেড়ে যায় প্রায় ৫০ গুণ। চিনির চেয়ে বেশি মিষ্টি এই উদ্ভিদটির নাম স্টেভিয়া। তুলশি পাতার মত দেখতে স্টেভিয়ার পাতা ‘মধুপাতা’ বা ‘চিনিপাতা’ নামেও পরিচিত। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত অনেকেই এ পাতা খেয়ে থাকেন চিনির বিকল্প হিসেবে। বেশি মিষ্টি ও ওষুধি গুণ সম্পন্ন হওয়ায় স্টেভিয়া সম্ভাবনাময় শস্য হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট।
রাজশাহীতে সম্প্রতি বাণিজ্যিকভাবে মিষ্টি পাতা জাতীয় ভেষজ গাছ ‘স্টেভিয়া’ চাষ শুরু করেছে ৩ জন উদ্যোক্তা। চিনির চেয়ে ৩০ থেকে ৪০ গুণ বেশি মিষ্টি এর পাতা। আবার একই পাতা ১২ থেকে ২৪ ঘন্টা শুকিয়ে পাউডার তৈরি করলে মিষ্টতা বেড়ে যায় প্রায় ৫০ গুণ। আর ১ কেজি পাতা শুকালে ৩৫০ গ্রাম হয়।
স্টেভিয়াকে অনেকেই প্রাকৃতিক চিনি বলে থাকেন। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত অনেকেই খেয়ে থাকেন, চিনির বিকল্প হিসেবে। বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট ২০০১ সালে থাইল্যান্ড থেকে সংগ্রহ করে। বর্তমানে রাজশাহীর পবার কাশিয়াডাঙ্গার কৃষক আতাউর রহমান, শিতলাই এর মুনতাশির এবং চারঘাটের বালিয়াডাঙ্গার মোহাম্মদ আলী স্টেভিয়ার চাষ শুরু করেছে। সাধারণত কফি বা চায়ের সঙ্গে স্টেভিয়া পাউডার ব্যবহার করা যায়। লেবুর শরবত বা অন্য পানীয় প্রস্তুত করতেও চিনির বিকল্প হিসেবে এর জুড়ি নেই। পাতার গুড়ো দিয়ে মিষ্টান্ন তৈরি করে ডায়াবেটিস রোগীরা খেতে পারবেন। এই ঔষধী পাতায় কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই।
চাষ শুরুর পর থেকে ৮ মাসের মধ্যে ৪ থেকে ৫ বার এই গাছের পাতা আহরণ করা যায়। রাজশাহী অঞ্চলের জলবায়ু ও মাটি স্টেভিয়া চাষের উপযোগী আর এর চাষ পদ্ধতি সহজ এবং উৎপাদন খরচও কম হওয়ায় কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। ডায়াবেটিস রোগীরা চিনির বিকল্প হিসেবে এই পাতা ব্যবহার করতে পারবে বিধায় বাণিজ্যিকভাবে স্টেভিয়া চাষের সম্ভাবনা দেখছে স্থানীয় চাষীরা।
চাষী আতাউর রহমান বলেন, আমি একজন আখ চাষী। আখ চাষের সুবাদে ইক্ষু গবেষণা কেন্দ্র আমাকে একটি মিষ্টি জাতীয় পাতা চাষে উদ্বুদ্ধ করে। তার নাম স্টেভিয়া। এটি একটি মিষ্টি জাতীয় পাতা। এটা সকল খাবারে ব্যবহার করা যায়। এটা চাষও খুব সহজ। ২০২৩ সাল থেকে একটি প্রর্দশনী প্লটে ৩০০ চারা দিয়ে চাষ শুরু করেছিলাম। ২০২৪ সালে ৬০০ চারা দিয়ে প্রর্দশনী প্লট শুরু করেছি এবং ব্যাপকভাবে চারা উৎপাদন হচ্ছে। এটা আমি বানিজ্যিক আকারে চাষ করার জন্য উদ্বুদ্ধ হচ্ছি।
বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট রাজশাহীর উর্দ্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এইচ এম আল-আমিন বলেন, স্টেভিয়া বাংলাদেশে মিষ্টি জাতীয় একটি নতুন ফসল। যা ডায়াবেটিক্স রোগীদের জন্য আর্শীবাদ। এই ফসলটি সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এর পাতা চিনির চেয়ে ৩০ থেকে ৪০ গুণ বেশি মিষ্টি। বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট রাজশাহী উপকেন্দ্রে স্টেভিয়ার তিনটি প্রর্দশনী প্লট রয়েছে। এই প্লট গুলোতে তিনজন চাষী ৬ শতক জায়গায় ৬০০ চারা লাগিয়ে ফসলটির আবাদ করছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট একটি প্রকল্প থেকে এই প্লট গুলোতে সব ধরণের সহযোগীতা করছে। এছাড়া মাঠ দিবস ও ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে এই ফসলটি সকল চাষীদের মাঝে পরিচিত করে দেওয়া হবে।
ভোরের আকাশ/ সু