বরিশালে তীব্র গরম আর প্রখর রোদে জ্বর, নিউমোনিয়া, বমিসহ বেড়েছে নানা রোগের প্রকোপ। এতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। হঠাৎ বাড়তি রোগীর চাপে হাসপাতালে দেখা দিয়েছে শয্যা সংকট। তীব্র গরম থেকে শিশুদের সুরক্ষিত রাখতে অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ চিকিৎসকদের।
ঈদের পর থেকেই বরিশালে তীব্র দাবদাহ বইছে। গড়ে ৩৬-৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে স্বাভাবিকের তুলনায় তিন থেকে চার গুণ শিশু রোগী প্রতিদিন ভর্তি থাকছে। চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও কর্তব্যরত নার্সদের। বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় শিশু ওয়ার্ড ৪৬ বেডের বিপরীতে ভর্তি রয়েছে প্রায় ২০০ এর অধিক রোগী। শয্যা না পেয়ে হাসপাতালের ফ্লোরে চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেকে।
বরিশালসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে রোগী আসছে প্রতিনিয়তই। শিশু রোগীদের স্বজনরা জানান, তারা বরিশালের বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে এসেছেন। সন্তানের বমি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট নিয়ে প্রথমে নিজস্ব এলাকায় ডাক্তার দেখান। সেখানে কোনো ভালো ফল না পেয়ে বরিশাল মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন। অনেকে আবার ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে শিশুকে খাইয়েছেন। হাসপাতালে আসার পর তারা অনেকেই আগের চেয়ে ভালো আছেন।
হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভিড় বাড়ায় চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে নার্সদের।
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-সেবা তত্ত্বাবধায়ক সাহিদা খানম বলেন, ‘আগের চেয়ে তিন চার গুণ রোগী বেড়েছে। শয্যা না থাকায় অনেকে ফ্লোরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ওয়ার্ডে ২১ জন নার্স রোস্টার ডিউটের মাধ্যমে সোবা চালিয়ে যাচ্ছে। সব ধরনের সহায়তায় আমরা রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি।’
একই অবস্থা হাসপাতালের বর্হিবিভাগেও। সেখানেও আগে গড়ে ২০০-২৫০ জন শিশু চিকিৎসা নিলেও বর্তমানে প্রতিদিন চারজন চিকিৎসক গড়ে সাড়ে ৫শ’ রোগীকে চিকিৎসা দিচ্ছেন।
শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো. নুরুল আলম বলেন, ‘বহির্বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ রোগী বেড়েছে। চাপ সামাল দিতে চার জন চিকিৎসক হিমশিম খাচ্ছে। নিউমোনিয়া দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ, অ্যাজমা, ঠান্ডা, কাশি, যে লেভেলের হওয়ার কথা তার চেয়ে বেশি হচ্ছে। জেলা-উপজেলা থেকেও রোগী আসছে অনেক। তবে জেলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল ও চিকিৎসা সেবা বাড়ালে বরিশালে চাপ কমবে। এর পাশাপাশি ভাইরাস ফ্লু থেকে শিশুদেরকে গরমে কম নেওয়া, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা এবং অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে।’
শয্যা সংকট থাকলেও কোন রোগীকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মো. রেজওয়ানুর আলম। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে হাসপাতালর এক বেডে তিনজন করে থাকছে। ফ্লোরে তো আছে। আক্রান্তদের মধ্যে পেটের পীড়া বেশি দেখা যাচ্ছে। অনেকে আন্দাজে ওষুধ খায়। নিরাপদ পানি পান করে না। এতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ে। গরমে জীবাণু নাড়াচাড়া বেশি দেয়। ডাক্তারদের অ্যালার্ট রাখা হয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসক, ইন্টার্ন চিকিৎসক, মিড লেভেলের চিকিৎসকরা সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। যারা কিছুটা সুস্থ তাদের পাঠিয়ে দিয়ে নতুন করে আবার ভর্তি নিচ্ছি। বেড খালি থাকছে না। গরমের তীব্রতা আরো বাড়লে রোগী আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
ভোরের আকাশ/ সু