logo
আপডেট : ২৪ এপ্রিল, ২০২৪ ২০:৫৪
তীব্র গরমে হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর চাপ
ইসমাইল হোসেন

তীব্র গরমে হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর চাপ

মহাখালী আইসিডিডিআরবি হাসপাতাল। ছবি-ফোজিত শেখ বাবু

টানা দাবদাহে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। দেখা দিয়েছে জ্বর, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ার প্রকোপ। রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে রোগীর চাপ। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। চারদিকে খাঁ খাঁ রোদ। টানা দাবদাহে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। সাধারণ মানুষ বলছেন, প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছি। তৃষ্ণায় গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। গরমে নাভিশ্বাসের মধ্যেই দেখা দিয়েছে নানা রোগের প্রকোপ। হাসপাতালগুলোতে বেড়েই চলেছে রোগীর চাপ। অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আসা রোগীদের বেশিরভাগই শিশু।

চিকিৎসকরা বলছেন, তীব্র গরম ও সিজনাল ফ্লুর কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকে। গরমের তীব্রতা না কমা পর্যন্ত শিশুদের প্রতি বিশেষভাবে যত্ন নিতে হবে। খুব দরকার না হলে ঘর থেকে বাইরে বের না হওয়ার পাশাপাশি বেশি করে তরল খাওয়ার পরামর্শ চিকিৎসকদের। রাজধানীর মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর চাপ গত বছরের তুলনায় অনেকটা কম। সাড়ে তিনশ বেডের এ হাসপাতালটিতে প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।

আইসিডিডিআর,বি প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. জোবয়ের মুহাম্মদ চিশতী ভোরের আকাশকে বলেন, ‘আইসিডিডিআর,বি কখনও কোনো রোগীকে ফিরিয়ে দেয় না। যা আমারা গত বছর করেছি। এ বছর রুগীর চাপ নেই বল্লে চলে।

আমাদের বিছানার সংখ্যা মাত্র ৩৫০টি, কিন্তু রোগীর সংখ্যা বাড়ায় অতিরিক্ত ৫০০ বিছানা তৈরি করা হয়েছে। এখন দৈনিক প্রায় পাঁচশত থেকে ছয়শত রোগী ভর্তি থাকছেন। গতকাল বুধবার আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালে এ দিন ডায়রিয়া রোগীর চাপ দেখা গেয়েছে ।

আইসিডিডিআর,বির কমিউনিকেশন ম্যানেজার (মিডিয়া) তারিফুল ইসলাম ভোরের আকাশকে বলেন, ‘আজ বুধবার বেলা ১২ টা পর্যন্ত ১৮৫জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। আগের দিন মঙ্গলবার ৫২৪ জন ভর্তি হন। এছাড়া ২২ এপ্রিল ৫০০ জন, ২১ এপ্রিল ৫২২ জন, ২০ এপ্রিল ৫৪৩ জন, ১৯ এপ্রিল ৪৫৬ জন, ১৮ এপ্রিল ৪৪৫ জন, ১৭ এপ্রিল ৪৩২ জন এবং ১৬ এপ্রিল ৪৭৪ জন ডায়রিয়া রোগী সহ অন্য অন্য রুগী ভর্তি হন।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ মুহূর্তে ঢাকা দক্ষিণের যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া, জুরাইন, সায়েদাবাদ, গাজীপুর, নরসিন্দি, রাজশাহী, ঢাকা উত্তরের মোহাম্মদপুর ও মিরপুর এলাকা থেকে কিছু রোগী আসছে।’

একাধিক প্রতিষ্ঠানটির চিকিৎসকরা ভোরের আকাশকে বলেন, ‘গরমে জন্য পানি ও খাদ্যবাহিত রোগ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে নির্দিষ্ট কিছু এলাকা থেকে কিছু রোগী আসছে। এক্ষেত্রে ওই এলাকাগুলোতে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ পরিহার করতে পারলে রোগটির প্রকোপ কমানো সম্ভব হবে। এ জন্য পানি পানে সতর্কতা ও বাইরের খোলা খাবার না খাওয়ার পারামর্শ দেন তারা।’‘গ্রীষ্মের গরমের শুরুতে বরাবরই ডায়রিয়া ও কলেরা রোগী বেশি ভর্তি হন এ হাসপাতালে। তবে অন্যবারের তুলনায় এবার রোগীর সংখ্যা অনেক কম।’

মহাখালী আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে আসা সিকুলিয়া গজীপুর থেকে আসা একজন শিশুর মা ভোরের আকাশকে বলেন, আমার ছোট ছেলেটি গত দশ দিন যাবোত অসুস্থ ডায়রিয়া হয়েছে, আমি দশ দিন আগে এসেছিলাম আজ আবার এসেছি । গরম এর জন্য আমার ছেলেটি অসুস্থ হয়েছে।

মাত্রাতিরিক্ত গরমের কারণেই এমনটা হচ্ছে বলে জানান চিকিৎসকরা। বাসি খাবার এড়িয়ে চালার পাশাপাশি তরল খাবার গ্রহণের পরামর্শ চিকিৎসকদের। তীব্র গরম ও সিজনাল ফ্লুর কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকে। গরমের তীব্রতা না কমা পর্যন্ত শিশুদের প্রতি বিশেষভাবে যত্ন নিতে হবে।’

মহাখালী আইসিডিডিআরবি হাসপাতালের ”ডা. বাহারুল আলম”বলেন, আমাদের এখানে এখন ও ও ভাবে ডায়রিয়ার প্রকাপ দেখা দেয়নি। অস্বাভাবিক কিছু দেখা যাচ্ছে না। শীত কালে এখানে একটু বেশী চাপ থাকে। এখানে ৫ বছরের নিছে শিশু রোগী বেশী দেখা যায়। আমাদের এখানে ডাইরিয়াটা বেশি দেখা হয়। এখন ও ডায়রিয়ার প্রোক্রকপটা ওভাবে দেখা যাচেছ না। আমাদের এখানে বরাবরই ৬৫ পারসেন্ট শিশু বাচ্ছা বরাবরই শীতকালে গীয়ে এটা ৭০ পারসেন্ট হয়ে যায়।

এসময় রুগীদেরে উদ্দেশ্যে বলেন, পানি ফুটিয়ে খাওয়ার জন্য, হাত ধুয়া, গার্জীয়ান এর হাত থেকে যেনো কোনো জীবানু না ছড়ায়। ডায়রিয়ার লক্ষন দেখা দিলে সাথে সাথে নিয়ম অনুযায়ী সিলাইন খাওয়া।
প্রচণ্ড গরম এবং বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবার। আরেকটি কারণ অনেক জায়গায় ওয়াসার পানির লাইনের সঙ্গে স্যুয়ারেজ লাইন এক হয়ে যাচ্ছে। যা চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। ফলে পানি দূষণ বাড়ছে। বিষয়টি নিয়ে ওয়াসাকে জানানোও হয়েছে। ডায়রিয়া রোগীদের জন্য করণীয় সম্পর্কে ডা. আলমগীর ভোরের আকাশ বলেন, যখনই কারও ডায়রিয়া শুরু হবে, তাকে সঙ্গে সঙ্গে স্যালাইন খাওয়ানো শুরু করতে হবে। পাশাপাশি তরল খাবার যেমন, চিড়ার পানি বা ডাবের পানি খেতে দিতে হবে। বাইরের জুস বা অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিহার করতে হবে। তারপরও রোগীর অবস্থার যদি অবনতি হয় নিকটবর্তী হাসপাতালে নিতে হবে। সবাইকে এই হাসপাতালেই চিকিৎসা নিতে হবে, বিষয়টা এমন নয়। কাছাকাছি কোনো সরকারি হাসপাতালে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

ভোরের আকাশ/ ইস