logo
আপডেট : ১৯ মে, ২০২৪ ১৬:৫৯
টেকসই উন্নয়নের জন্য সময়োপযোগী আর্থিক ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য: ওয়াসিকা
নিজস্ব প্রতিবেদক

টেকসই উন্নয়নের জন্য সময়োপযোগী আর্থিক ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য: ওয়াসিকা

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা ও টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি, পরিকল্পনাবিদ, শিক্ষাবিদ এবং উন্নয়ন সহযোগীদের একটি শক্তিশালী ও দক্ষ আর্থিক ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা তৈরিতে সহায়তা করার আহ্বান জানিয়েছেন।

 

পাবলিক ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট (পিএফএম) স্ট্র্যাটেজি ২০২৫-২০৩০ তৈরির প্রক্রিয়ার সূচনা করে আজ রোববার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশের আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং দক্ষতায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জনে স্ট্র্যাটেজি প্রণয়নের গুরুত্ব তুলে ধরেন।

 

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “পিএফএম কমকৌশল এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে প্রণয়ন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে যখন বাংলাদেশ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিমন্ডলে আমরা চ্যালেঞ্জ এবং অভূতপূর্ব সুযোগের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছি।”

 

তিনি বলেন- “যেহেতু আমরা কোভিড ১৯ মহামারীর সুদূরপ্রসারী প্রভাবগুলির মোকাবিলা করছি, এটি পর্যায়ক্রমে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য সময়োপযোগী ও কার্যকর আর্থিক ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য।”

 

তিনি বলেন, “পিএফএম কৌশল প্রণয়নের আসুন আমরা আমাদের সর্বাত্মক উদ্ভাবনী মতামত ও সহযোগিতা প্রদানের অঙ্গীকার করি। সকলের অংশগ্রহণে আমাদের কাছে এমন একটি ভবিষ্যৎ গঠনের সুযোগ রয়েছে যেখানে বাংলাদেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা শুধুমাত্র টেকসই এবং দক্ষই হবে না, উপরন্তু ন্যায়সঙ্গত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে যা আগামী প্রজন্মের জন্য টেকসই সমৃদ্ধির ভিত্তি স্থাপন করবে।

 

বিশ্ব ব্যাংক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডা’র সহায়তা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এই উদ্বোধনী আলোচনা সভা আয়োজন করে।

 

অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর বার্নাড হেভেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন, অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সিরাজুন নূর চৌধুরী, বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি (হেড অব কো-অপারেশন) ড. মিকাল ক্রেজান, কানাডা হাই কমিশনের কর্পোরেট/উন্নয়ন সহায়তা প্রধান জো গুডিংস এবং গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স ক্যানাডার সিনিয়র ডেভেলপমেন্ট অ্যাডভাইজর সিলভিয়া ইসলাম। অর্থ বিভাগের যুগ্ম সচিব আবু দাইয়ান মোহম্মদ আহসানউল্লাহ “পাথওয়ে টু পিএফএম রিফর্ম স্ট্র্যাটেজি ২০২৫-২০৩০” এর উপর একটি উপস্থাপনা করেন।

 

ড. মো. খায়েরুজ্জামান বলেন, কার্যকর সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা এবং সুশাসনের প্রচারের লক্ষ্যে সংস্কারের একটি মৌলিক দিক থেকে পিএফএম সংস্কার করা হয়েছে। পিএফএম একটি অপরিহার্য হাতিয়ার যার মাধ্যমে বিদ্যমান সম্পদ, সেবা প্রদান এবং সরকারের নীতি ও উদ্দেশ্যের আলোকে অর্জসমূহ একত্রিত করে। উন্নত সেবা প্রদান এবং টেকসই উন্নয়নে সহায়তা করার জন্য বাংলাদেশ এখন তার পিএফএম সিস্টেমকে প্রযুক্তি-চালিত ও দক্ষ সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থায় রূপান্তর করার জন্য কাজ করছে।

 

তিনি আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে পিএফএম সংস্কারের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধিত হলেও এর থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার জন্য সকল স্টেকহোল্ডারদের কাছ থেকে আরও সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

 

উদ্বোধনী অধিবেশনের পর দুটি কারিগরি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম অধিবেশনে- “সরকারের মূল স্টেকহোল্ডারদের রিফলেকশন” বিষয়ে বক্তব্য দেন, পরিকল্পনা কমিশন সদস্য (সচিব) রেহানা পারভিন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডর সদস্য (শুল্ক, নীতি ও আইসিটি) মো. মাসুদ সাদিক এবং অর্থ বিভাগের সচবি অতিরিক্ত সচিব মো. মফিদুর রহমান। এই অধিবেশনটি সঞ্চালনা করেন অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুর রহমান খান।

 

বিশ্বব্যাংকের লিড গভর্নেন্স স্পেশালিস্ট ( ফিনান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট) সুরাইয়া জন্নাতের সঞ্চালনায় দ্বিতীয় অধিবেশনে- “অন্যান্য মূল স্টেকহোল্ডারদের অভিমত” বিষয়ে বক্তব্য দেন প্রাক্তন কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, ইনস্টিটিউট অফ পাবলিক ফাইন্যান্সের মহাপরচিালক রমেন্দ্র নাথ বিশ্বাস এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের গবেষণা পরিচালক ড. মনজুর হোসেন, অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও স্ট্রেনদেনিং পাবলিক ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম টু এনাবল সার্ভিস ডেলিভারি-এর (এসপিএফএমএস) জাতীয় কর্মসূচি পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য দেন।

 

অধিবেশনে আলোচ্য বিষয়ে বক্তারা বলেন, জনসম্পদকে কার্যকরভাবে পরিচালনা, স্বচ্ছতা বৃদ্ধি, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এবং টেকসই উন্নয়ন সমুন্নত করার জন্য সরকার মনে করে পিএফএম পদ্ধতিকে শক্তিশালী করার কোন বিকল্প নেই। কার্যকরী পিএফএম সিস্টেম শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, সম্পদের দক্ষতা এবং মান সম্মত জনসেবা নিশ্চিত করার জন্য পরিচালিত হয়।

 

উল্লেখ্য, গত চার দশকে বাংলাদেশ পিএফএম পদ্ধতির সংস্কারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। কমিটি অন রিফর্ম ইন বাজেট এন্ড এক্সপেন্ডিচার কন্ট্রোল (সিওআরবিইসি) ১৯৮৯ এবং তারপরে বাজেট বাজেটিং এন্ড এক্সপেন্ডিচার কেন্ট্রোল (আরআইবিইসি) প্রকল্পে, ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্টট রিফর্ম প্রজেক্ট (এফএমআরপি), স্ট্রেনদেনিং পাবলিক এক্সপেন্টিচার ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম (এসপিইএমপি), স্ট্রেনদেনিং পাবলিক ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামকে টু এনাবেল সার্স ডেলিভারী (এসপিএফএমএস)।

 

চলমান আর্থিক সংস্কারের বিষয়সমূহ সামনে নিয়ে আসা এবং সংস্কার বিষষ সরকারের অংশগ্রহণকে এগিয়ে নেয়ার জন্য এর আগে ২০০৭ থেকে ২০১৩ এবং ২০১৬ থেকে ২০২১ মেয়াদে দুটি পিএফএম স্ট্র্যাটেজি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

 

উন্নত সেবা প্রদান এবং টেকসই উন্নয়নে সহায়তার জন্য বাংলাদেশ এখন পিএফএম সিস্টেমকে প্রযুক্তি-চালিত, উন্নত কর্মক্ষমতা সংযোজন এবং দক্ষ পাবলিক এক্সপেন্ডিডি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে রূপান্তরিত করতে চায়। পিএফএম স্ট্র্যাটেজি ২০২৫-২০৩০ মূল লক্ষ্য হচ্ছে ইতোপূর্বে বাস্তবায়িত পিএফএম স্ট্র্যাটেজির সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করা এবং স্মার্ট অর্থনীতি ও স্মার্ট নাগরিক তৈরির রাজনৈতক অঙ্গীকার বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখা।

 

ভোরের আকাশ/ সু