logo
আপডেট : ২৩ মে, ২০২৪ ১৯:১০
সংসারে অভাব, স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যার পর একাই পুঁতে রাখেন আলী
ময়মনসিংহ ব্যুরো

সংসারে অভাব, স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যার পর একাই পুঁতে রাখেন আলী

ময়মনসিংহের ত্রিশালে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যার অভিযোগে আলী হোসেনকে (৩৫) গ্রেপ্তার করেছে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। বুধবার (২২ মে) রাতে গাজীপুরের শ্রীপুর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

 

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) দুপুর আড়াইটার দিকে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মো. শামীম হোসেন। পরে অভিযুক্তকে ১৬৪ ধরায় জবানবন্দির জন্য আদালতে সোপর্দ করা হয়।

 

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, আলী হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষক বর্ণনা দেন। তার কোনো জমিজমা ছিল না। তিনি ছিলেন দিনমজুর। অভাবের সংসারে স্ত্রী আমেনা খাতুন (২৫) এবং দুই ছেলে ছিল। বড় ছেলের নাম আবু বক্কর সিদ্দিক (৪) ও ছোট ছেলে আনাছ (২ বছর ৬ মাস)। আলী হোসেন তার চাচার দেওয়া জমিতে ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছেন। সংসারে সারা বছর অভাব অনটন লেগেই থাকত। ঠিকমতো তার সংসার চালাতে পারত না। তাই সে বিভিন্ন সময় তার স্ত্রী আমেনার নামে এনজিও থেকে টাকা তুলতেন। বেশ কিছুদিন আগে তিনি এনজিও থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার ঋণ নেন। সেই টাকার কিস্তি পরিশোধ করতে না পারায় তাকে এবং তার স্ত্রীকে অপমান করতেন এনজিওকর্মীরা।

 

প্রায়ই হোসেনের স্ত্রী ও দুই ছেলে না খেয়ে দিন কাটাতেন। ঋণের বোঝা, মানুষের অপমান, সংসারের অভাব অনটন থেকে মুক্তি পেতে ২-৩ মাস আগে আলী হোসেন সিদ্ধান্ত নেন তার স্ত্রী ও সন্তানদের হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করবেন। পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক আলী হোসেন ১৬ মে রাতে ঘুমন্ত স্ত্রীকে ডেকে তোলেন এবং ওড়না দিয়ে গলায় পেঁচিয়ে হত্যা করেন। এরপর একইভাবে দুই সন্তানকে হত্যা করেন তিনি। পরে আলী হোসেন তার স্ত্রীর মরদেহ বাড়ির কাছে জমিতে পুঁতে রেখে বাসায় এসে ঘুমিয়ে পড়েন। শুক্রবার সকালে জিনিসপত্র গুছিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যান। তিনি গ্রেপ্তার এড়াতে বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপন করেন। পরে পুলিশ প্রযুক্তির সহায়তায় শ্রীপুর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।

 

এর আগে ২১ মে দুপুরে ত্রিশাল থানাধীন রামপুর ইউনিয়নের কাকচর নয়াপাড়া গ্রামের চাষের জমি থেকে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। থানা পুলিশের পাশাপাশি পিবিআই, সিআইডি প্রযুক্তির সহায়তায় মরদেহের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা করে। কিন্তু মরদেহগুলো অর্ধগলিত হওয়ায় এবং শিশু দুটির মরদেহ মস্তক বিহীন হওয়ায় পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। পরে মরদেহের সঙ্গের কাপড় দেখে পরিচয় শনাক্ত করেন নিহত আমেনার মা। এ ঘটনায় নিহত আমেনা খাতুনের মা হাসিনা খাতুন বাদী হয়ে বুধবার আলী হোসেনসহ অজ্ঞাত পরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন।

 

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মো. শামীম হোসেন বলেন, আলী হোসেনের বিরুদ্ধে ত্রিশাল থানায় ২০১২ সালে ধর্ষণ এবং শ্বাসরোধ করে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়। এ মামলায় ৫ বছর কারাভোগ করেন তিনি। ২০১৭ সালে আগস্ট মাসে জামিন পান তিনি। মামলাটি বিচারাধীন। ওই মামলায় জামিনে বের হয় ফুফাতো বোনকে বিয়ে করেছিলেন তিনি।

 

ভোরের আকাশ/ সু