logo
আপডেট : ২৪ মে, ২০২৪ ১৭:১৫
আগামীকাল জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী
হেলাল সাজওয়াল

আগামীকাল জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী

আগামীকাল জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী । এ বছর কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপনের প্রতিপাদ্য ‘অসাম্প্রদায়িক চেতনা এবং নজরুল’। কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সরকার। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিবেন।

 

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় প্রশাসন ও বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে উদযাপন করা হবে দিনটি। বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে এদিন সকাল ৮টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদসংলগ্ন জাতীয় কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে।

 

ঢাকাসহ জাতীয় কবির স্মৃতিবিজড়িত ময়মনসিংহের ত্রিশাল, কুমিল্লার দৌলতপুর, মানিকগঞ্জের তেওতা, চুয়াডাঙ্গার কার্পাসডাঙ্গা এবং চট্টগ্রামে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় ও স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হবে। এ উপলক্ষে নজরুল মালা, নজরুলবিষয়ক আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে স্থানীয় প্রশাসন।

 

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী ১১ জ্যৈষ্ঠ (২৫ মে) উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার থেকে কবির স্মৃতিধন্য ময়মনসিংহের ত্রিশালে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালা। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসন আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ২৩-২৫ মে পর্যন্ত চলবে এ আয়োজন। অপরদিকে নজরুল ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে কবির স্মৃতি বিজড়িত কুমিল্লায় নানা আয়োজনে জন্মবার্ষিকী উদযাপনে নেয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি।

 

১৯৭২ সালের ২৪ মে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে কবি সপরিবারে বাংলাদেশে আসেন। বাংলাদেশ সরকার কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করে এবং জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণা দেন। মৃত্যুর আগপর্যন্ত তিনি বাংলাদেশেই ছিলেন। তার জীবনকাল ৭৭ বছর হলেও ১৯৪২ সালের জুলাইয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর দীর্ঘ ৩৪ বছর ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট মৃত্যুর আগপর্যন্ত তিনি অসহনীয় নির্বাক জীবন কাটিয়েছেন।

 

নজরুল ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে তার লেখনী ধূমকেতুর মতো আঘাত হেনে জাগিয়ে দিয়েছিল ভারতবাসীকে। তার কবিতা, গান, উপন্যাসসহ অন্যান্য লেখনী ছিল পরাধীন ভারতে বিশেষ করে অবিভক্ত বাংলায় সাম্প্রদায়িকতা ও উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বলিষ্ঠ ও সোচ্চার কণ্ঠ। সে কারণে ইংরেজ সরকারের রোষানলে পড়তে হয়। ব্রিটিশ সরকার তার গ্রন্থ ও রচনা বাজেয়াপ্ত করেছে এবং কারাদণ্ড দেয় । কারাগারেও বিদ্রোহী নজরুল টানা ৪০ দিন অনশন করে বিদেশি সরকারের জেলজুলুমের প্রতিবাদ করেছিলেন।

 

তার কবিতা ‘চল্ চল্ চল্’ বাংলাদেশের রণসংগীত। কবির এমন অজস্র রচনা শুধু ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনেই নয়, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর বাঙালিদের দিয়েছে শক্তি ও জুগিয়েছে প্রেরণা। এখনো সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে, সকল আন্দোলন ও সংগ্রামে তার রচিত গান কবিতা আমাদেরকে গভীরভাবে উদ্দীপ্ত করে।

 

সংগীতে নজরুলের অবদান বাঙালিকে চিরদিন স্মরণ রাখতে হবে। সংগীতজনদের মতে, রবীন্দ্রনাথের চেয়ে অনেক বেশী গান রচনা করেছেন নজরুল। এই আধিক্যের সংখ্যাও ১ হাজার ছাড়িয়েছে বলে দাবী করেন বিশিষ্টজনেরা। তার অধিকাংশ গান সুর প্রধান। তার গানে বহু গায়ক সুর-স্বাধীনতা ভোগ করেন। কিন্তু স্বল্প সংখ্যক গান গাওয়া হলেও নজরুলের বেশীর ভাগ গান এখনও গাওয়া হয়নি।

 

নজরুল বেঁচেছিলেন ৭৭ বছর। জন্মের পর থেকে ৪৩ বছর পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবন কাটিয়েছেন। এর মধ্যে সাহিত্য রচনার কাল ছিল মাত্র ২৪ বছর। গবেষকরা বলছেন, সাহিত্য রচনার সময়ের ব্যাপ্তি যাই হোক না কেন, নজরুলের প্রভাব শতাব্দী পেরিয়ে আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক এবং সুদীর্ঘকাল নজরুল প্রসঙ্গ ম্লান হবে না। অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী এই মানুষটি ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ (ইংরেজি সাল অনুযায়ী ২৪ মে ১৮৯৯ সাল) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোলের চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব-কৈশোর-তারুণ্যের জীবনের পরতে পরতে সংগ্রাম করতে হয়েছে তাকে। দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করায় দুঃখ-দারিদ্র্য ছিল তার নিত্যসঙ্গী। ডাকনাম ছিল দুখু মিয়া। বাবার মৃত্যুতে পরিবারের ভরণপোষণের জন্য তিনি শিশু বয়সেই মক্তবে শিক্ষকতা, মাজারের খাদেম এবং মসজিদের মুয়াজ্জিনের কাজ করেছেন।

 

আসানসোলের চুরুলিয়া গ্রামে কবির জন্ম হলেও নজরুলের প্রেম, বিয়ে, গ্রেফতার, সমাবেশ এবং কাব্য ও সংস্কৃতি চর্চাসহ বহু ঘটনার নীরব সাক্ষী বাংলাদেশ। তিনি অমর হয়ে আছেন বাঙ্গালীর হৃদয়ে।

 

ভোরের আকাশ/ সু