চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থেকে দুটি নতুন ট্রেন আগামী জুলাই মাস থেকে সরাসরি ঢাকা চলাচল শুরু করবে। এতে দর্শনা থেকে ঢাকায় যাতায়াতের সময় লাগবে ৫ ঘন্টা ১০ মিনিট, আর চুয়াডাঙ্গা থেকে ঢাকা যেতে সময় লাগবে ৫ ঘন্টা। এদিকে ঢাকা থেকে চুয়াডাঙ্গা-দর্শনায় আসতে একই সময় লাগবে। ফলে যাত্রী ভোগান্তি কমবে আর সময় বাঁচবে ২ থেকে ৩ ঘন্টা।
দর্শনা থেকে সরাসরি ঢাকায় ট্রেন চলাচলের সংবাদে খুশি এলাকার সাধারণ যাত্রীরা। কারণ বর্তমানে খুলনা-ঢাকায় যাতায়াত করা এ রুটের ৩টি আন্তনগর ট্রেনে দর্শনা ও চুয়াডাঙ্গা যাত্রীদের জন্য আসন সংখ্যা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। নতুন ট্রেন দুটি দর্শনা-ঢাকা-ভায়া-রাজবাড়ি চলাচল শুরু করলে চুয়াডাঙ্গা জেলার যাত্রীদের জন্য আসন সংখ্যা বহুগুণে বাড়বে বলে আশাবাদি এলাকাবাসী।
রেলওয়ে (পশ্চিমাঞ্চল) থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঢাকা-দর্শনা রুটে ট্রেন থাকছে দুটি। খুলনা ঢাকাগামী সরাসরি চলাচলকারী তিনটি ট্রেন চিত্রা, বেনাপোল ও সুন্দরবন এক্সপ্রেস বর্তমানে মোবারকগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, দর্শনা, চুয়াডাঙ্গা-ভায়া-রাজবাড়ি ও যমুনা সেতু হয়ে যাতায়াত করে।
এ ট্রেন তিনটি আগামী জুলাই মাস থেকে এ রুট থেকে সরিয়ে নিয়ে যশোরের রুপদিয়া বা পদ্মবিলা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় চলাচল করবে। অন্যদিকে খুলনা থেকে রাজশাহী, উত্তরবঙ্গ চিলাহাটি ট্রেন আগের মতোই চলাচল করবে বলে জানান রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
বর্তমানে দেশে লোকাল, মেইল, কমিউটার ও আন্তঃনগর এই চার ধরনের ট্রেন চলাচল করে। লোকাল ট্রেনের ভাড়া কিলোমিটার প্রতি ৩৯ পয়সা আর আন্তঃনগর ট্রেনের ভাড়া নন-এসি শ্রেণির ভিত্তি ভাড়া ১ টাকা ১৭ পয়সা। আর কিলোমিটার প্রতি এসি শ্রেণির ভিত্তি ভাড়া ১ টাকা ৯৫ পয়সা।
দর্শনা-ঢাকা রুটে প্রথম ট্রেনটি দর্শনা থেকে সকাল সাতটায় ছেড়ে ঢাকা পৌঁছবে দুপুর ১২টায় এবং ঢাকা থেকে দুপুর ১টায় ছেড়ে দর্শনায় পৌঁছবে বিকাল ৪টায়। দ্বিতীয় ট্রেনটি ঢাকা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টায় ছেড়ে দর্শনায় পৌঁছবে রাত ৯টা ৪০ মিনিটে এবং দর্শনা থেকে রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে ছেড়ে ঢাকায় পৌঁছবে পরদিন সকাল ৫টায়।
দর্শনা হল্টস্টেশনে ঢাকায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে দাঁড়িয়ে থাকা এক যাত্রী বলেন, সড়ক লাইনের মতো ট্রেন লাইনও ভাগ হচ্ছে, আগে আমরা টিকিট সময় মতো পোতাম না, ব্লাকে কিনতে হতো, এই দুটি ট্রেন চালু হলে আমাদের সুবিধা হবে যাত্রী-টিকিট সময় মতো পাব বলে আশা করি। এছাড়া ঢাকায় যাওয়ার জন্য সময়ও কম লাগবে।
তবে নতুন দুটি ট্রেন চালু হওয়াতে স্টেশন সংশ্লিষ্ট এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, স্টেশন পার্শ্ববর্তী আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ীদের ব্যবসা কমতে পারে বলেও তারা ধারণা করছেন। চুয়াডাঙ্গা স্টেশন সংলগ্ন এক হোটেল ব্যবসায়ী বলেন, ঢাকার তিনটি ট্রেন যদি এ এ রুটে বন্ধ হয়ে যায়। তাহলে আমাদের ব্যবসা কমবে। কারণ যে দুটি ট্রেন চলাচল করবে ওই সময় কেউ সেভাবে হোটেলে থাকবে না।
এছাড়া দর্শনার স্টেশন এলাকার ভ্যান চালক করিম মিয়া বলেন, দর্শনা থেকে নতুন ট্রেন চালু হলে আমাদের জন্য কষ্টদায়ক। কারণ খুলনা থেকে অনেক যাত্রী দর্শনা বর্ডার হয়ে ইন্ডিয়া যায়। নতুন রুট চালু হলে আমাদের ভাড়াগুলো কম হবে।
ঢাকা জর্জ কোর্টের অ্যাডভোকেট দর্শনার সন্তান আবু সাইদ বলেন, নতুন দুইটা ট্রেন চালু হওয়াতে আমাদের মতো ঢাকাগামী ও ঢাকায় কেন্দ্রীক কাজ থাকা ব্যক্তিদের সুবিধা। কারণ এই দুটি ট্রেন যে সময় চলাচল করবে, একজন ব্যক্তি দিনে ঢাকা যেয়ে কর্ম-কাজ শেষ করে আবার দিনে বাসায় চলে আসতে পারবেন।
নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক একজন টিকিট চেকার (টিটি) বলেন, রেলওয়ে কতৃপক্ষ যে মাস্টার্স প্ল্যান করছে, এটা বাস্তবায়ন হলে আমাদের জন্য অনেক সুবিধা হবে। আমাদের ডিউটি পরিবর্তন হবে এবং আমি মনে করি দর্শনার চেকপোস্টের যাত্রীদের তাদের গন্তব্যে দ্রুত যেতে সুবিধা হবে। আর সব ট্রেনই যেহেতু চুয়াডাঙ্গা হয়ে যাবে, সেক্ষেত্রে সবাই সুবিধা পাবে।
দর্শনা রেলওয়ে বুকিং সহকারী মিন্টু কুমার রায় বলেন, চলতি বছর জুলাই থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ের মাস্টার প্ল্যান চালু হওয়ার সম্ভাবনা আছে। নতুন রুটের কর্যক্রম শুরু হলে আমাদের রেলওয়ে কর্মরত ব্যক্তিদের অনেক সুবিধা হবে। ট্রেনের চাপ কম থাকবে, এতে দুর্ঘটনার হারও কমে আসবে। বিশেষ করে দর্শনা চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া যাত্রীদের সুবিধা হবে। দিনের দিনে ঢাকাতে যেতে পারবে, আবার দিনে কাজ শেষ করে চলে আসতে পারবে। অন্যদিকে ট্রেনের টিকিটও সব সময় সহজে মিলবে।
চুয়াডাঙ্গা স্টেশন মাস্টার মো. মিজানুর রহমান বলেন, শুনেছি বাংলাদেশ রেলওয়ের মাস্টার প্ল্যান চালু হলে এ রুটের তিনটি ট্রেন যশোর হয়ে ঢাকা যাবে। আর আমাদের রুটে নতুন শিডিউল করে দুটি ট্রেন দেওয়া হবে। তবে এ সংক্রান্ত কোনো আদেশ-নির্দেশ এখনো পায়নি।
ভোরের আকাশ/মি