logo
আপডেট : ২ জুন, ২০২৪ ১২:১০
ঠাকুরগাঁওয়ে কালবৈশাখী ঝড়ে লন্ডভন্ড ৩০ গ্রাম, শিশুসহ ৩ জনের মৃত্যু
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

ঠাকুরগাঁওয়ে কালবৈশাখী ঝড়ে লন্ডভন্ড ৩০ গ্রাম, শিশুসহ ৩ জনের মৃত্যু

হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড়ে ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ২টি ইউনিয়নের ৩০টি গ্রাম লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। এই ঝড়ের কবলে দুইজন নারী ও জমে থাকা পানিতে ডুবে একজন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকালে উপজেলার পাড়িয়া ও বড়বাড়ি ইউনিয়নে কালবৈশাখী ঝড়ের ঘটনা ঘটে।
 
 
নিহতরা হলেন, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পাড়িয়া ইউনিয়নের শালডাঙ্গা গ্রামের পইনুল ইসলামের স্ত্রী ফরিদা বেগম (৪০), একই গ্রামের দবিরুল ইসলামের স্ত্রী জাহেদা বেগম (৫০) এবং একই উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নের লালাপুর নয়াপাড়া গ্রামের নাজমুল ইসলামের আড়াই বছরের ছেলে নাঈম।
 
 
পইনুল ইসলাম বলেন, সকালে ফজরের নামাজ পড়তে মসজিদে গিয়েছিলাম। সেখানে থাকা অবস্থায় ঝড় শুরু হয়। মাত্র ১৫ মিনিটের মতো সে ঝড়ের স্থায়ীত্বকাল ছিল। বাড়িতে ছুটে এসে স্ত্রীকে খুঁজে না পেয়ে ডাকাডাকি শুরু করি। পরে বারান্দায় পড়া টিন ও ছাউনি সরিয়ে দেখি নিচে চাপা পড়ে আছে। তাকে উদ্ধার করে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
 
 
এদিকে ঝড়ের সময় বজ্রপাতের বিকট শব্দে ভয় পেয়ে নিজ ঘরেই স্ট্রোক করে গৃহবধু জাহেদা বেগমের মৃত্যু হয় বলে জানান তার স্বামী দবিরুল ইসলাম। 
 
 
একই সময়ে হওয়া ঝড়ের পর বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নের লালাপুর নয়াপাড়া গ্রামে বাড়ির পাশের গর্তে জমা বৃষ্টির পানিতে পড়ে আড়াই বছরের শিশুর মৃত্যু হয় বলে জানান শিশুটির বাবা নাজমুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমার ছেলে খেলার এক পর্যায়ে ওই গর্তের পানিতে গিয়ে পরে, এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। 
 
 
আজ রোববার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কালবৈশাখী ঝড়ে পাড়িয়া ইউনিয়নের তিলকড়া, শালডাঙ্গা, বঙ্গভিটা, লোহাড়া, বামুনিয়া; বড়বাড়ী ইউনিয়নের বেলহাড়া, বেলবাড়ী, বটের হাট, হরিপুরসহ প্রায় ৩০টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বেশির ভাগ কাঁচা বাড়ির টিনের চালা উড়ে গেছে। অনেক জায়গায় গাছ পড়ে রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। গাছের নিচে চাপা পড়েছে অনেক বাড়িঘর। গাছ ও বৈদ্যুতিক পিলার ভেঙে পড়েছে ঘরের ওপর। 
 
 
পশ্চিম শালডাঙ্গা গ্রামের কৃষক নুর ইসলাম বলেন, হঠাৎ করে ঝড়ো হাওয়া ও ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়। এতে করে আমার দুইটি ঘর ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। এখন রাত্রী যাপন করার কোন জায়গা নেই। 
 
 
তিলকড়া গ্রামের গৃহবধু সুমাইয়া আক্তা বলেন, এর আগে এরকম ঝড় কখনো দেখিনি, ১২ থেকে ১৫ মিনিটের ঝড়ে আমাদের গ্রাম লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। গাছ ও বৈদ্যুতিক পিলার ঘরের উপর পরে ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবাররা সরকারি সহযোগিতার দাবি জানান। 
 
 
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির সহকারী মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম বলেন, ঝড়ে ৪০টির বেশি বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে ও ভেঙে গেছে। সেই সাথে অনেক স্থানে বৈদ্যুতিক তারের ওপর গাছ ভেঙে পড়েছে। এজন্য বিদ্যুৎ সরবরাহে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। সকাল থেকে আমাদের লোকজন মাঠে কাজ করছে। আশা করি শীঘ্রই বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান হবে। 
 
 
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন সোহেল বলেন, ঝড়ে মরিচ, বোরো ধান, পটোলসহ বিভিন্ন ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিসংখ্যান সংগ্রহে মাঠ পর্যায়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা। 
 
 
বালিয়াডাঙ্গী ইউএনও মোছা. আফসানা কাওছার বলেন, কালবৈশাখী ঝড়ে কি ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেই তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। সেই সাথে যারা এই ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তাদেরকে সরকারিভাবে সহযোগিতা করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। 
 
 
ঠাকুরগাঁও-২ আসনের সংসদ সদস্য মাজহারুল ইসলাম সুজন ঝড়ে তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় শোক প্রকাশ করে বলেন, আমি নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছি। দলীয়ভাবে ও সরকারিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোতে সহযোগিতা করা হবে।  
 
 
ভোরের আকাশ/ সু