দুই সপ্তাহ আগেও সাগরপাড়ের হাজারো ঝাউগাছ যেন হাতছানি দিয়ে ডেকেছে পর্যটকদের। অথচ এখন দেখা মিলছে মাত্র শ খানেক ঝাউগাছ, তা-ও আবার যেকোনো সময় উপড়ে পড়ার অপেক্ষায়। এমনই অবস্থা চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া সমুদ্রসৈকতের। স্থানীয় মানুষদের আশঙ্কা, দুই সপ্তাহের মধ্যেই বিলীন হবে সমুদ্রসৈকতের অবশিষ্ট ঝাউবাগান।
বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত আলী জাহাঙ্গীর বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই জোয়ারের প্রচণ্ড আঘাতে ঝাউবাগান ধসে পড়ছে। সর্বশেষ গত ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সাগরে জোয়ারের পানির উচ্চতা অনেক বেড়ে যায়। এর পর থেকে জোয়ারের পানির তোড়ে একের পর এক ঝাউগাছ উপড়ে পড়তে শুরু করে। গত দুই সপ্তাহে ঝাউবাগানের ৯০ শতাংশ বিলীন হয়ে গেছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে বাঁশবাড়িয়া সমুদ্রসৈকতে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের চান সিকদার খালের উত্তর পাশে সমুদ্রসৈকত ভেঙে প্রায় বিলীন। জোয়ারের তোড়ে গোড়ার মাটি সরে যাওয়ায় কিছু ঝাউগাছ উল্টে পড়ে রয়েছে।
সৈকতে থাকা স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, উপড়ে পড়া অনেক ঝাউগাছ জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে। কয়েকটি উপড়ে পড়া গাছ স্থানীয় বাসিন্দারা কেটে নিয়ে গেছেন।
সমুদ্রসৈকতে কথা হয় সেখানে বেড়াতে আসা সীতাকুণ্ডের একটি ইস্পাত কারখানা মাননিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফরহাদের সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রায়ই তিনি এই সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে আসেন। দু-এক সপ্তাহ আগে যখন এসেছেন, তখনো সাগরপাড়ে সারি সারি ঝাউগাছ ছিল। এবার এসে সমুদ্রসৈকতের চিত্র দেখে তিনি হতবাক। খুব অল্প দিনে একটি বিশাল ঝাউবাগান নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল, ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে।
আরেক পর্যটক জুলকার রুম্মান বলেন, মূলত ঝাউবাগানের কারণেই পর্যটকেরা বাঁশবাড়িয়া সমুদ্রসৈকতে আসেন। বিনোদন স্পটটি রক্ষায় যথাযথ উদ্যোগ না নেওয়ায় ঝাউবাগানটি বিলীন হওয়ার পথে।
স্থানীয় বাসিন্দা আবু তৈয়ব বলেন, বাঁশবাড়িয়া সমুদ্রসৈকত ১০-১৫ বছর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সূত্র ধরে জনপ্রিয় পর্যটন স্পটে পরিণত হয়। এর প্রভাবে স্থানীয় মানুষেরও আয় বেড়েছিল। পর্যটন স্পটটির যে বেহাল দশা হয়েছে, তাতে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অনেকেই আবারও বেকার হয়ে পড়বেন।
উপকূলীয় বন বিভাগ সীতাকুণ্ডের রেঞ্জ অফিসার কামাল হোসেন বলেন, বাঁশবাড়িয়া সমুদ্রসৈকত এলাকায় সাড়ে ১২ একর ঝাউবন ছিল। এখন মাত্র আধা একরের মতো অবশিষ্ট রয়েছে।
জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সীতাকুণ্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী এস এম তারেক বলেন, ঝাউবাগান রক্ষায় আপাতত অস্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। এর জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য যদি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী
বরাবর ডিও লেটার দেন, তবে দ্রুত কাজ করতে সুবিধা হবে।
ভোরের আকাশ/মি