logo
আপডেট : ২৪ জুন, ২০২৪ ১৬:৪৮
কালের পরিক্রমায় হারিয়ে যাচ্ছে ‘দেশি খেজুর’
শিরিন জামান, চুয়াডাঙ্গা

কালের পরিক্রমায় হারিয়ে যাচ্ছে ‘দেশি খেজুর’

ক্যাপশন: গাছে গাছে দোল খাচ্ছে পাকা খেজুরের কাঁদি

কাঁদি ভরা খেজুর গাছে/পাকা খেজুর দোলে/ছেলেমেয়ে, আয় ছুটে যাই/মামার দেশে চলে। পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের ‘মামার বাড়ি’ কবিতার এ লাইনগুলোর কথা মনে পড়ে যায় খেজুর গাছে ঝুলে থাকা কমলা রঙের কাঁদি ভরা খেজুর দেখে।

 

জেলার ৪ উপজেলা জীবননগর, দামুড়হুদা, সদর ও আলমডাঙ্গায় ২ লাখ ৬৬ হাজারের মতো খেজুরগাছ রয়েছে। বছরে দুইবার ফলন আসে খেজুর গাছে, শীতকালে ফলন দেয় মিষ্টি আর সুস্বাদু রস, আর গ্রীষ্মকালে দেয় কমলা রঙের খেজুর। এখন গ্রীষ্ম কাল, তাই চুয়াডাঙ্গা ৪টি উপজেলার বিভিন্ন রাস্তা-ঘাট, খাল-বিল এবং বাড়ির আনাচে-কানাচে খেজুর গাছে শোভা পাচ্ছে কমলা রঙের খেজুর। যদিও কালের পরিক্রমায় হারিয়ে যাচ্ছে আবহমান গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য খেজুরের গাছ। গৌরব আর ঐতিহ্যের প্রতীক মধুময় খেজুর গাছ এখন আর দেখা যাচ্ছে না আগের মতো।

 

জেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, থোকায় থোকায় খেজুর গাছে ঝুলছে পাকা আধাপাকা খেজুর। তা দেখে প্রতিটি মানুষের চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন এলাকা ও সরকারি সড়কের খেজুর গাছের খেজুরগুলো স্থানীয় ছেলে-মেয়েরা পেড়ে তা খেতে শুরু করেছেন। তবে এখনো পুরোপুরি খাওয়ার উপযোগী হয়নি খেজুরগুলো, এখন খেতে অনেকটায় কষ কষ, পাকলে তা মিষ্টি হবে। কিছু দিন পর পাকলে খাওয়ার উপযোগী হবে এবং অনেকেই এই পাকা খেজুর বাজারে বিক্রি করছে।

 

বাজারে বিদেশি হরেক রকমের খেজুর পাওয়া গেলেও এখন আর ‘দেশি খেজুর’ চোখে না পড়ায় দিনে দিনে ক্রেতাগণ ভুলে যাচ্ছে দেশি খেজুরের কথা। গ্রাম বাংলার খেজুরের রস খাওয়ার কথা কারোরই ভোলার নয়। তবে দেশের খেজুরগুলো যখন পাকার উপযোগী হয় তখন গ্রামের ছেলে-মেয়ে, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীরা ভোর হতে না হতেই খেজুর সংগ্রহের জন্য গাছ তলায় গিয়ে আনন্দ উল্লাসের মধ্য দিয়ে খেজুর খাওয়ার দৃশ্য এখনও অমলিন।

 

খেজুর এক ধরনের তাল জাতীয় শাখাবিহীন বৃক্ষ। এর বৈজ্ঞানিক নাম ফিনিক্স ড্যাকটিলিফেরা। মানব সভ্যতার ইতিহাসে সুমিষ্ট ফল হিসেবে এর গ্রহণযোগ্যতা পাওয়া যায়। অনেক বছর পূর্বে থেকেই এর চাষাবাদ হয়ে আসছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে।

 

তথ্যসূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে যে জলবায়ু রয়েছে তা খেজুর চাষের জন্য অনেকটাই উপযোগী। কিন্তু বিদেশি খেজুর চাষের পাশাপাশি দেশীয় ঐতিহ্যবাহী খেজুর গাছকে যদি বাংলার মাটিতে টিকিয়ে রাখা যায় তাহলে খেজুরের রস, গুড় এবং খেজুর ঘাটতি থাকবে না।

 

চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকা বেলগাছি গ্রামের বাসিন্দা কৃষক বশির আহাম্মেদ ভোরের আকাশকে বলেন, খেজুর গাছ যে কেবল ফল দেয় তা কিন্তু নয়। শীত মৌসুমে খেজুর গাছ থেকে রস পাওয়া যায়। যা দিয়ে গুড় তৈরি হয়। খেজুরের রসও কিন্তু সবাই পছন্দ করে। খেজুর রস ও গুড়ের তৈরি পিঠাতো বাঙালির ঐতিহ্যের অংশ। খেজুর গাছের পাতা দিয়ে পাটি ও কাঁচা ঘরের বেড়া তৈরি করা হয়। এছাড়া খেজুর পাতা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

 

দামুড়হুদা উপজেলার দেউলী গ্রামের খেজুর গাছি আব্দুর রশিদ মোল্লা বলেন, খেজুরের রস সংগ্রহ এবং খেজুর উৎপাদন এটি একটি গ্রামবাংলার প্রাচীনতম ঐতিহ্য। একসময় এই গ্রামে অনেক দেশীয় খেজুর গাছ ছিল। বাল্য কালের কথা মনে পড়ে, সকাল হলেই খেজুর সংগ্রহে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের মধ্যে বেশ আনন্দমুখর আয়োজন দেখা যেতো। খেজুর গাছ কমে যাওয়ায় এখন আর সে দৃশ্য চোখে পড়ে না। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে রূপসী বাংলার সেই ঐতিহ্য। যদি সকলের উদ্যোগে এসব খেজুর গাছ টিকিয়ে রাখা যায় এবং নতুন করে খেজুর গাছ রোপন যায় তাহলে পুরনো ঐতিহ্যকে ধরে রাখা যাবে এবং অর্থনৈতিক দিক দিয়ে দেশও লাভবান হবে।

 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চদ্র সাহা ভোরের আকাশকে বলেন, জেলার ৪ উপজেলা জীবননগর, দামুড়হুদা, সদর ও আলমডাঙ্গায় ২ লাখ ৬৬ হাজারের মতো খেজুরগাছ রয়েছে। যার প্রায় অর্ধেকই সদর উপজেলায়। নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত চলে গুড়ের মৌসুম। এই মৌসুমে গড়ে আড়াই হাজার মেট্রিক টন গুড় উৎপাদিত হয়েছে। এখন চলছে গ্রীষ্মকাল, খেজুর গাছের দ্বিতীয় মৌসুম। গাছে গাছে দোল খাছে পাকা খেজুর। গাছে গাছে ঝুলতে থাকা এই খেজুর গ্রাম বাংলার অপরূপ সৌন্দর্য্যকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।

 

ভোরের আকাশ/মি