logo
আপডেট : ২৭ জুন, ২০২৪ ১৩:৪০
কাজ শেষ না হতেই দেবে গেল সেতুর চারটি পিলার
গাইবান্ধা প্রতিনিধি

কাজ শেষ না হতেই দেবে গেল সেতুর চারটি পিলার

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা বাজার খেয়াঘাটের তিস্তার শাখা নদীর উপর নির্মিত কাঁঠের সেতুটি কাজ শেষ না হতেই দেবে গেল।

 

গত সোমবার রাতে সেতুর মাঝখানের চারটি সিসি পিলার দেবে যায়। এরপরও ঝুঁকি নিয়েই সেতুর ওপর দিয়ে পারাপার হচ্ছেন এলাকাবাসী। নদীর স্রোত বাড়লেই সেতুটি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এলাকাবাসীর অভিযোগ ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের গাফলতির কারণে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই সেতুর মাঝখানের অংশ দেবে গেছে।

 

এলাকাবাসীরা অভিযোগ করে জানান, স্থানীয় লোকজন উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের বেলকা ঘাট থেকে দীর্ঘদিন ধরে নৌকাযোগে নদী পারাপার হতেন। দুই পাশের ইউনিয়নের মানুষের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল নৌকা। এরমধ্যে তিস্তায় হঠাৎ বন্যার কারনে সেতুটির ওপর দিয়ে পথচরীগণ চলাচল করায় সেতুর চারটি খুঁটি দেবে যায়। স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বেলকা ঘাট এলাকায় একটি কাঠের সেতু নির্মাণ করে এলজিইডি। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অর্থায়নের ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় এটি বাস্তবায়ন করে।

 

উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্র জানায়, সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২২ সালের আগস্ট মাসে। পরে ২০২৩ সালের মে মাসে শেষ হওয়ার কথা। ২০০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৬ মিটার প্রস্থের সেতুটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৩০ লাখ টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থেকে এই টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই কাজের দায়িত্ব পায় গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ছানা এন্টারপ্রাইজ নামের এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ।

 

সরেজমিনে জানা গেছে, এ পর্যন্ত সেতুর নির্মাণকাজ প্রায় ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। সিসি পিলারের ওপর দুই পাশে ঢালাই দেওয়া হয়েছে। সেতুর পাটাতনে সিমেন্টের স্ল্যাবের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে কাঠ। কংক্রিটের খুঁটির উপর কাঁঠের পাটাতন বসানো হলেও এখন পর্যন্ত দেয়া হয়নি নিরাপত্তা রেলিং। প্রতিটি পিলারের উচ্চতা দেওয়া আছে প্রায় চার ফুট। এ অবস্থায় সেতুর ওপর দিয়ে শিক্ষার্থীসহ প্রতিদিন স্থানীয় লোকজন যাতায়াত শুরু করেন। সেতু দিয়ে মনুষসহ সাইকেল ও রিকশাও পারাপার হয়।

 

হরিপুর চরের স্কুল শিক্ষক আব্দুল জলিল মিয়া বলেন, আগে এখানে কোন সেতু ছিল না। স্থানীয়রা নৌকায় পারাপার হতেন। এবার কাঁঠের সেতুটি নির্মাণ হবে অনেক আশাবাদী ছিলাম যে নৌকা ছাড়াই পারাপার হতে পারবে এলাকার মানুষ। এখন দেখছি নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই দেবে গেছে সেতু।

 

তদারকির দ্বায়িত্বে থাকা স্থানীয় ঠিকাদার সাগীর খান বলেন, এই প্রকল্পটির মুল ঠিকাদার গাইবান্ধার ছানা এন্টারপ্রাইজ। সাবঠিকাদার হিসেবে তিনি এই কাজটি করছেন। তিনি বলেন, কাজ শেষ না হতেই বন্যা শুরু হয়। তিস্তার নদীতে স্রোতের কারনে খুঁটির নিচ হতে মাটে সরেগিয়ে খুঁটি দেবে যায়। স্টিমেট প্লান মোতাবেক কাজ করা হয়েছে। এই মুর্হুত্বে অনেক পানি কিছু করার নেই। ইঞ্জিনিয়ারের সাথে পরামর্ম করে প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ বলেন, সেতুটি নির্মাণ হলে স্থানীয় মানুষের দুর্ভোগ কমবে। এ নিয়ে উপজেলা প্রকৌশল বিভাগকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। তবুও কোনো কাজ হয়নি। এখন সেতুটি দেবে যাওয়ায় স্থানীয়দের দুর্ভোগ আরও বেড়ে গেল।

 

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল মান্নাফ জানান, সেতু দেবে যাওয়ার কথা শুনেছি। তবে এটা আমার যোগদানের আগের ঘটনা। এ বিষয়ে তেমন কিছু জানেন না তিনি। তিনি বলেন, পিলার দেবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে।

 

এ ব্যাপারে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নিবার্হী অফিসার তরিকুল ইসলাম বলেন, লোকমুখে শুনেছি। খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

ভোরের আকাশ/মি