ভোলার মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট চলছে চিংড়ির রেণু পোনা সংগ্রহের মহোৎসব। এর ফলে গড়ে প্রতিদিন ধ্বংস হচ্ছে কোটি প্রজাতির দেশীয় মাছের পোনা। জেলা মৎস্য বিভাগ, এসব নদ-নদীর মাছ আহরণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হওয়া সত্বেও তা বন্ধে নিচ্ছে না কোন কার্যকরী পদক্ষেপ।
প্রতিদিন কয়েক হাজার নারী-পুরুষ ও শিশুরা মশারি জালের মাধ্যমে বাগদা চিংড়ির রেনু শিকার করছে। বিশেষ এক ধরনের সাদা চামচের পাত্র থেকে বাগদা রেণু বাছাই করে অন্য পাত্রে মজুদ করছে। একটি বাগদা রেণু আহরণের জন্য শত শত অন্য প্রজাতির মাছের পোনা ধ্বংস হচ্ছে।
সূত্রমতে, চৈত্র-আষাঢ় এ দুই মাস বাগদা রেণুর মৌসুম। এ সময়টায় প্রকৃতিগতভাবেই নদীগুলোতে উৎপন্ন হয় বাগদা চিংড়ির রেণু পোনা। দেশের দক্ষিণাঞ্চল জেলাগুলোতে এ পোনার বিশেষ চাহিদা থাকায় ভোলার লক্ষাধিক জেলে একধরনের নিষিদ্ধ মশারি জাল নিয়ে নদীতে রেণু নিধনে কাজ করছেন। এক একটি রেণু পোনা মহাজনের কাছে বিক্রি হয় ২ থেকে ৩ টাকায়, মহাজন বিক্রি করছেন ৭ থেকে ১০ টাকায়।
তিন মাসের এ পেশায় অনেকটা লাভজনক হওয়ায় জেলে পরিবারের নারী-পুরুষ ও শিশুরা ঝুঁকছেন এ পেশায়। কে কত রেণু আহরণ করতে পারবে এ নিয়ে জেলে পাড়ায় চলছে এক ধরনের প্রতিযোগিতা। অথচ এ ধরনের রেণু পোনা আহরণে কোষ্টগার্ড, নৌ পুলিশ এমন কী জেলা মৎস বিভাগের পক্ষ থেকে তেমন কোন উদ্যোগ না থাকায় বিষয়টি নিয়ে চরম হতাশা বিরাজ করছে সংশ্লিষ্ট মহলে।
রেনু শিকারিরা বলছেন, জেলার বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে রেনু পোনাগুলো সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গেই ট্রলার যোগে বরিশালে নিয়ে যান আড়ৎদার। সেখান থেকে খুলনা, বাগেরহাট, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা হয়।
বোরহানউদ্দিন উপজেলার বাগদা শিকারি আব্দুল মান্নান বলেন, ‘বিকেল থেকে ভোর পর্যন্ত রেণু পোনাগুলো নদীর তীরে এসে ভিড় জমায়। এ সময়টায় নদীতে নামতে পাড়লে অনেক রেণু শিকার করা যায়।’
অন্য শিকারি মহিউদ্দিন বলেন, সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত রেণু সংগ্রহ করলে প্রতিদিন জন প্রতি ২ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত উপার্জন করা যায়।
মহিলা শিকারি আকলিমা আরজু রানু বলেন, ‘শুনছি রেনু পোনা ধরা নিষেধ, কিন্তু কেউ কোন দিন আমগোরে বাধা দেয় নাই। বেশি লাভ হওয়ায় সারা দিন নদীতেই পইড়া থাকি।’
তথ্যানুসারে জানা যায়, ভোলার তুলাতুলি, রামদারপুর, রাজাপুর, ধনিয়া, কাচিয়া, চডারমাথা, কাটিরমাথা, ভেদুরিয়া, ভেলুমিয়া, ভোলারখাল, মুনসীর হাট, হাসান নগর, মির্জাকালু, হাকিমুদ্দিন, স্লুইজঘাট, বেতুয়া, ঢালচর, চর কুকরিমুকরি,পাতিলা, চর নিজামসহ জেলার তিন শতাধিক পয়েন্টে প্রায় লক্ষাধিক জেলে প্রতিদিন এই রেনু আহরণ করছেন। পাশাপাশি কোটি কোটি অন্য মাছের রেনু ও ডিম নিধন করছেন। এই পয়েন্ট গুলোতে প্রতিদিন প্রায় এক কোটি রেনু আহরন করে স্থানীয় আড়ৎ এ বিক্রি করছেন রেনু শেকারিরা। স্থানীয় বাজারে যার মূল্য ৮ থেকে ১০ কোটি টাকা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এক শ্রেণির মুনাফা লোভী আড়ৎদাররা বাগদা রেনু শিকারে গরীব জেলেদের উৎসাহ দিচ্ছেন।
বোরহানউদ্দিন হাকিমুদ্দিন বাজারের রেণু পোনা আহরণের মহাজন আবুল বাশার, হানিফ মিয়া ও সুমন হালদার এবং দৌলতখানের জাবু বেপারি ও মান্নান মিয়া বলেন, বাগদা চিংড়ি আহরণ নিষিদ্ধ হলেও জেলেরা শিকার করে বলে আমরা কিনে রাখি।
সদর উপজেলার ইউসুফ ফরাজী ও তুলা তুলির বশির মাঝি বলেন, জেলেরা আমাদের কাছে দাদন নিছে, টাকা শোধ করাতো লাগবো, তাই এই পথ বাইছা লইছি। অবৈধ হলেও কি আর করুম। তাছাড়া মৎস বিভাগতো সব জানে।
এ ব্যাপারে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব তাদের বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, বাগদা রেণু নিধনের ফলে দেশীয় প্রজাতির অনেক মাছ নিধন হচ্ছে। তাই জেলেরা যাতে রেণু শিকার না করতে পারে তার জন্য আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।
ভোরের আকাশ/ সু