গাজীপুরের শ্রীপুরে সরকারের প্রায় একুশ বিঘা খাস জমি জবরদখলের অভিযোগ উঠছে এক প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। সরকারের প্রায় সাড়ে ছয়কোটি টাকা মূল্যের খাস জমি দখল করে গ্রিন পেরাডাইস রিসোর্ট ও আহামদিয়া এগ্রোফার্ম গড়েছেন। এভাবে খাস জমি দখল করলেও টনক নড়েনি স্থানীয় ভূমি প্রশাসনের। খাস জমি জবরদখলের ঘটনা ঘটেছে উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের নিজ মাওনা গ্রামে। সরকারের কোটি কোটি টাকা মূল্যের জমির হালনাগাদ কোন তথ্য নেই সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসে।
শুধু খাস জমি নয় ব্যক্তি মালিকানা প্রায় সাড়ে সাত বিঘা জমি জবরদখলের ও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত তৈয়বুর রহমান উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের নিজমাওনা গ্রামের মৃত হযরত আলীর ছেলে। তিনি একজন অবসর প্রাপ্ত প্রকৌশলী। তার স্ত্রী পেশায় চিকিৎসক।
সরেজমিনে বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার নিজমাওনা গ্রামে ৩নং গাজীপুর মৌজায় সি.এস ও এস.এ ৫৩৩ ও ৫৭৬নং দাগে সরকারী খাস জমি রয়েছে। যার আর.এস দাগ নম্বর ৮৪১৫, ৭৪৮৫, ৮৪৮৬, ৮৪৮৭, ৮৪৯২ ও ৮৪৯৩ । এসব দাগে জমির পরিমান ১০ একর ১০ শতাংশ। দাগ গুলোর মধ্যে ৮৪১৫নং দাগের আংশিক সহ ছয়টি দাগের প্রায় সাত একর সরকারী খাস জমি রয়েছে তৈয়বুরের প্রজেক্টের ভেতর অবৈধ দখলে।
স্থানীয়রা জানান, তৈয়বুর এলাকার প্রভাবশালী। তিনি পৈত্রিক ও নিজের কেনা জমির সাথে সরকারী খাস জমি দখল করে খামার রিসোর্ট গড়ে তুলেছেন। একই সাথে তিনি নিজ মাওনা গ্রামের হালিমা খাতুন, তোফয়েল আহাম্মদ, আবু সাইদ, নূরুল ইসলাম গনের প্রায় সাড়ে সাত বিঘা জমি জবর দখল করেছেন। ছয়-সাত বছর ধরে তৈয়বুর গ্রামের বিভিন্ন মানুষের জমি দখল করতে অত্যাচার নির্যাতন করে আসছেন। তার নির্যাতনে আমরা এখন এলাকা ছাড়ার পথে।
ভূক্তভোগী হালিমা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, তৈয়বুর জমির বিরোধে আমার ছেলেকে মারপিট করে। আমার ছেলে প্রায় ছয়মাস ভুগে মারা যায়। আমি কোন বিচার পাইনি। এখন আমার ৪৫শতাংশ জমি দখল করে নিয়েছে।
একই গ্রামের আবুসাইদ জানান, ২০১৯ সাল থেকে তৈয়বুর আমাদের সাথে জমি নিয়ে বিরোধ করে আসছে। আদালতে মামলা রয়েছে। অবশেষে রাতের আঁধারে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আমাদের পাঁচবিঘা জমি জবরদখল করেছে। একই অভিযোগ করে তোফায়েল বলেন, তৈয়বুর আমাদের দেড় বিঘা জমি দখল করে নিয়েছে।
গাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৭,৮ও ৯ নংওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য কামরুন্নাহার বলেন, তৈয়বুর এলাকার চিহ্নিত ভূমি খেকু। সে হামলা মামলা দিয়ে এলাকার মানুষকে নির্যাতন করে। তার য়েছে বিশাল বাহিনী। এ বাহিনী নিয়ে রাতের আঁধারে জমি জবর দখল করে। আমার পরিবারের জমি ও দখল করে নিয়েছে। সে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিয়ে থাকেন,“তার হাত অনেক লম্বা। আমরা তার কিছু করতে পারমো না। থানা পুলিশ কিছু করতে পারবেনা।”
এবিষয়ে বক্তব্য জানতে গত ২৬জুন বুধবার ও ৩০জুন রবিবার দু’দফা তার রিসোর্ট ও খামারে যাই। তিনি ভেতরে থেকেও গনমাধ্যম কর্মীদের সাথে দেখা করেননি। দেননি কোন বক্তব্য। বক্তব্য জানতে মোবাইলে একাধিক বার ফোন করলেও তিনি মোবাইল রিসিভড করেননি। সব শেষ তার বক্তব্য জানতে সোমবার বিকেলে মোবাইলে ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। যে কারণে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
গাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো. সিরাজুল হক মাদবর জানান, ওই গ্রামে তৈয়বুরের বিরোদ্ধে জমি দখলের কথা শুনেছি। তাকে বহুবার মোবাইলে ফোন করেছি। তিনি ফোন ধরেনা। এ বিষয়টির সমাধান হওয়া দরকার।
মাওনা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা আ.ওয়াহাব জানান, সি.এস ও এস.এ ৫৩৩ ও ৫৭৬ নং দাহ সমুহ ১নং খাস খতিয়ান ভূক্ত। এসব দাগ হতে সৃষ্ট আর এস ৮৪১৫, ৭৪৮৫, ৮৪৮৬, ৮৪৮৭, ৮৪৯২ ও ৮৪৯৩ নম্বর দাগগুলো ১নং খাস খতিয়ানভুক্ত। ছয়টি দাগে সরকারের ১০ একর ১০ শতাংশ খাস জমি রয়েছে।
এসব দাগে কোন বন্দোবস্ত নেই। ১৯৮৭ সালের দিকে নিজমাওনা গ্রামের আক্কাছ আলী, বুজরত আলী, আ.কুদ্দুছ, আ.ছামাদ, ইজ্জত আলী, মো. সামসুল হক, মিনহাজ উদ্দিন, হাতেম আলী, মিয়াচান, সরাফত আলী, মোতালেবসহ অন্তত ২৪জন খাস জমি বন্দোবস্তের আবেদন করেছিলেন। তাদের নামে কোন বন্দোবস্তের রেকর্ড নেই। বিপুল পরিমাণ সরকারী খাস জমি জবরদখলে বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি উর্দ্ধতন কতৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে তারা ব্যবস্থা নিবেন।
এ বিষয়ে গাজীপুর জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত হয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) শ্রীপুরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি।
শ্রীপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাইখা সুলতানা বলেন, নিজমাওনা গ্রামে সরকারী খাস ভূমি জবরদখলের বিষয়ে অবগত হয়ে আমি সার্ভেয়ারকে নিয়ে সরেজমিনে গিয়ে ছিলাম। আমরা ওই প্রজেক্টের ভেতরে সরকারি জমির সন্ধান পেয়েছি। পরে তাদেরকে বলে এসেছি তাদের মালিকানা যাচাইয়ের জন্য আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে সমস্ত কাগজপত্র নিয়ে অফিসে আসার জন্য। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্য জমি মাপ যোগ ও চিন্তিত করে সরকারি জমি উদ্ধার করা হবে।
ভোরের আকাশ/ সু