উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও মৌসুমের জোয়ারের পানিতে মৎস্য ভান্ডার খ্যাত চলনবিল ভরে উঠেছে। পাশাপাশি বিলঅঞ্চলের নিচু এলাকার সমস্ত খাল-বিল-নালা পানিতে ভরে গেছে।
এ সময় নতুন পানিতে চলনবিলে প্রচুর পরিমাণ দেশি প্রজাতীর শোল, বোয়াল, টেংড়া, পুটি, কৈ, শিং, মাগুড়, পাবদা, মলা, পাতাশী, চিংড়ি, চান্দাসহ নানা রকম মা মাছ ডিম ছাড়ার জন্য আসে। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেনীর অসাধু মৎস্য শিকারীরা বিলের বিভিন্ন পয়েন্টে মাছ ধরার বাদাই জাল ও চায়না দুয়ারী জাল ব্যবহার করছে। এতে নিধন হচ্ছে মা ও পোনা মাছ।
এ দিকে তাড়াশ উপজেলা মৎস্য বিভাগ বলছে, মা মাছ ও রেনুপোনা মাছ অবৈধ ভাবে যারা নিধন করছে তাদের অভিযান অব্যহত রয়েছে। তা ছাড়া মা ও পোনা মাছ নিধনে নিষেধাজ্ঞায় মাইকিং করা হলেও তা মানছেন না এক শ্রেণীর অসাধু মৎস্য শিকারীরা। ফলে বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই রেণুপোনাসহ ডিমওয়ালা মা মাছ নির্বিচারে নিধন হচ্ছে।
সরেজমিনে চলনবিল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিল পারে অসাধু মৎস্যজীবিরা সরকারী বিধি নিষেধ অমান্য করে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল, বাদাই জাল, চায়না দুয়ারী, খৈলশুনিসহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে মা ও রেনু পোনা মাছ শিকার করছেন। এ ছাড়াও সোতি জাল, ধর্মখরা, খেয়া জালের মত অতি সূক্ষ্ম নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মিঠা পানির পোনা ও ডিমওলা মা মাছ ছেঁকে তুলছে।
আর প্রতিদিন চলনবিলাঞ্চলের পাবনা জেলার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুর ও সিংড়া উপজেলার হাট- বাজার গুলোতে প্রকাশ্যে পোনা ও ডিমওয়ালা মাছ অবাধে বিক্রি হচ্ছে।
আর ওই সব মাছ স্থানীয় সচেতন জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তাসহ বিলপাড়ের সচ্ছল পরিবারের ব্যক্তিরা ডিমওয়ালা ও পোনা মাছ কিনতে যেন উন্মুখ হয়ে থাকেন।
বিলপাড়ের কুন্দইল গ্রামের বাসিন্দা মো. মুনসুর রহমান ভোরের আকাশকে বলেন, বর্ষার পানি আসার সাথে সাথে অসাধু মৎস্য জীবিরা বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করে বিলাঞ্চলের দেশি প্রজাতির ডিমওয়ালা ও পোনা মাছ নিধন করে থাকে। ফলে দিন দিন দেশি প্রজাতীর মাছ বিলুপ্ত হতে শুরু করেছে।
তিনি আরো বলেন, বিলপাড়ে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ টি স্থানে ছোট- বড় মৎস্য আড়ৎ রয়েছে। আর এ সব আড়তে শিকার করা পোনা ও ডিমওয়ালা মাছ বিক্রি হয়ে থাকে। সরকারীভাবে ওই সমস্ত মৎস্য আড়তে ডিমওয়ালা ও পোনা মাছ ক্রয়- বিক্রয় নিষিদ্ধ করা হলে ডিমওয়ালা ও পোনা মাছ নিধন অনেকটাই কমে আসতো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন মৎস্যজীবী ভোরের আকাশকে বলেন, বর্তমানে মা মাছের ডিম ছাড়ার সময়। এ সময় রেণু ও পোনায় এলাকা ছেয়ে যায়। তা ছাড়া মাছগুলো নীরব থাকায় শিকারেও সুবিধা হয়।
উপজেলার মান্নান নগর মৎস্য ব্যবসায়ী জহুরুল ইসলাম ভোরের আকাশকে বলেন, চলনবিলে বর্ষার মৌসুমে প্রতিদিন প্রায় লাখ টাকার পোনা মাছ নিধন হচ্ছে। বর্তমানে কারেন্ট জাল, চায়না দুয়ারী ও বাদাই জাল দিয়ে মা মাছ ও পোনা নিধন চলছে। ফলে মাছের বংশ বৃদ্ধি মুখ থুবড়ে পড়েছে।
তিনি আরও বলেন, যদি সরকার কঠোরভাবে মৎস্য আইন প্রয়োগ করে কারেন্ট জাল ও বাদাই জাল ব্যবহার নিষিদ্ধ করে তবে মাছ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। আর এতে দূর হবে মাছের অভাব।
মাছ ক্রেতা আম্বাড়িয়া গ্রামের আশরাফ হোসেন ভোরের আকাশকে বলেন, চলনবিলাঞ্চলে আগের মতো আর মাছ নেই। মাছ কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো বিভিন্ন নদীর নাব্যতা কমে যাওয়া, কারেন্ট, বাদাই ও চায়না দুয়ারী জালের অবাধ ব্যবহার, আবাদী জমিতে সার, কীটনাশক ব্যবহার, অবাধে পোনা মাছ নিধন।
এ বিষয়ে তাড়াশ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মশগুল আজাদ ভোরের আকাশকে বলেন, আইনগত ভাবে ডিমওয়ালা ও রেনু পোনা মাছ ধরা দন্ডনীয় অপরাধ। রেনু পোনা মাছ নিধন প্রতিরোধে আমাদের অভিযান চলছে। এ অভিযান অব্যহত থাকবে।
ভোরের আকাশ/ সু