logo
আপডেট : ১৩ জুলাই, ২০২৪ ১০:১৭
১০ বছরে অর্ধেকে নেমেছে পাট চাষ
নরসিংদী প্রতিনিধি

১০ বছরে অর্ধেকে নেমেছে পাট চাষ

ন্যায্যমূল্য না পাওয়াসহ বিভিন্ন সংকটে পাট চাষে আগ্রহ নেই কৃষকদের

নরসিংদীতে পাট চাষে আগের তুলনায় খরচ বেড়েছে। সে তুলনায় কম দামে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে চাষিরা আবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। চাষাবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন কয়েক হাজার চাষি। ফলে গত ১০ বছরে জেলায় পাট চাষ কমেছে অন্তত ৫০ শতাংশ। আর দুই দশকে এর পরিমাণ ৭০ শতাংশের বেশি।

পাট চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে গড়ে ১৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। পাট উৎপাদন হয় পাঁচ-ছয় মণ। বাজারে সবচেয়ে ভালো পাটের মণ বিক্রি হয় সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকা। এই দামে কমই বিক্রি হয়। হিসাবে প্রতি বিঘায় চাষ করে অন্তত পাঁচ হাজার টাকা লোকসান দিতে হয়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালে নরসিংদীতে চার হাজার ৪১৪ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছিল। ২০১৫ সালে তা কমে তিন হাজার ৪৩ হেক্টরে দাঁড়ায়। ২০২০ সালে তা নেমে আসে দুই হাজার ৬৮৫ হেক্টরে। সর্বশেষ ২০২৪ সালে জেলার ছয় উপজেলার দুই হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়। তবে ২০১৩ সালের আগে চাষ হওয়া পাটের পরিসংখ্যান দিতে পারেনি কৃষি বিভাগ।

একসময়ে বিস্তীর্ণ মাঠে দোল খাওয়া সবুজ পাট কোথায় হারিয়ে গেলো, কেন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন? এসব প্রশ্নের জবাবে চাষিরা জানিয়েছেন, ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, বীজ সংকট, শ্রমিকের বাড়তি মজুরি, চাষে খরচ বেশি, জাগ দিতে ভোগান্তি, পানির সংকট ও কৃষি বিভাগের উদাসীনতার কারণে চাষাবাদ ছেড়েছেন তারা।

চাষিরা বলছেন, প্রতি বিঘায় পাট চাষে খরচ হয় ১৫ হাজার টাকা। ফলন তুলতে সময় লাগে তিন মাস। এই তিন মাস পরিশ্রমের পর এক বিঘায় পাওয়া যায় ১০ হাজার টাকার পাট। বাকিটা লোকসান দিতে হয়। পরিপক্ব বীজ পেতে ভোগান্তি পোহাতে হয়। একেক প্রতিষ্ঠান একেক বছর একেক ধরনের বীজ বিক্রি করে। প্রায় সব প্রতিষ্ঠানের বীজের প্যাকেটে ১০ শতাংশ অপরিপক্ব থাকে। এখানে কৃষি বিভাগের গাফিলতি আছে। পাশাপাশি কৃষিশ্রমিকের বেশি মজুরি চাষাবাদে অন্যতম বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১০ বছর আগে শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ছিল ১৫০-২০০ টাকা। তখন পাটের মণ বিক্রি হতো ৮০০ টাকায়। বর্তমানে শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে পাঁচ গুণ। পাটের দাম হয়েছে দ্বিগুণ। বাজারে এক হাজার ৬০০ টাকায় মণ বিক্রি করতে হয়।

এ ছাড়া পর্যাপ্ত পানি না থাকায় জাগ দিতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। বাধ্য হয়ে খাল-বিল বা নদীতে জাগ দিতে হয়। সেখানেও বেড়েছে খরচ। এত কিছুর পর বাজারে নিয়ে গেলে ন্যায্যমূল্য পাওয়া যায় না। তবে কৃষি বিভাগ ধানের মতো পাটের দাম নির্ধারণ করে দিলে এবং মাঠ থেকে সংগ্রহ করলে লাভবান হতেন চাষিরা। সেটি করা গেলে আবারও সোনালি আঁশ পাটের সুদিন ফিরে আসতো বলে জানালেন তারা।

২০ বছর আগে ৩০০ শতাংশের বেশি জমিতে পাট চাষ করতেন রায়পুরা উপজেলার হুগলাকান্দি গ্রামের চাষি আহমদ আলী। চলতি বছর ২০ শতাংশ জমিতে চাষ করেছি উল্লেখ করে আহমদ বলেন, ‘পাট চাষ করে ২০ বছর আগে জমি কিনেছিলাম। কিন্তু বর্তমানে শ্রমিকের মজুরির টাকাই ওঠে না। উল্টো লোকসান দিতে হয়। কৃষি বিভাগ আমাদের খোঁজ রাখে না। এজন্য চাষাবাদ কমিয়ে দিয়েছি।’

আহমদের মতো অবস্থা অন্য চাষিদেরও। রায়পুরার জুয়েল মিয়া বলেন, ‘চাষে খরচ লাগে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। এতে লাভ হয় না। লোকসান দিতে হয়। আবার জাগ দিতে সমস্যায় পড়তে হয়। বীজেও সমস্যা থাকে। এত কিছুর পরও যদি ন্যায্যমূল্য পেতাম তাহলে চাষাবাদ করতাম। কৃষি বিভাগ যদি ধানের মতো পাটের দাম নির্ধারণ করে মাঠ থেকে কিনে নিতো তবে আমরা লাভবান হতাম।’

কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধানে ন্যায্যমূল্যে মাঠ থেকে পাট কেনা গেলে কৃষকরা লাভবান হতেন বলে উল্লেখ করেছেন নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আজিজুর রহমান। পাটের সুদিন ফেরানোর চেষ্টা চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পাট বিশ্বব্যাপী সোনালি আঁশ হিসেবে সমাদৃত। এর সুদিন ফেরাতে কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধানে ন্যায্যমূল্যে মাঠ থেকে পাট কেনা গেলে কৃষকরা চাষে যুক্ত হবেন। এ বিষয়ে কৃষি বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবো আমরা।’

ভোরের আকাশ/ সু