বিআইডব্লিউটিএ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) সদ্যসাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলামের উত্তোলিত অর্থের খাতভিত্তিক বিবরণ জানতে চেয়েছে দুনীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থার নারায়ণগঞ্জ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাঈদ মোহাম্মদ ইমরান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের উপ-পরিচালকের কাছে এ তথ্য চেয়েছে দুদক। রফিকুল ইসলাম বিআইডব্লিউটিএর নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরে টোলগার্ড (শুল্ক আদায়কারী) পদে কর্মরত ছিলেন এবং দেড় বছর আগে অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) যান।
দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটির চিঠিতে রফিকুল ইসলাম চাকরিতে যোগদানের পর থেকে অবসরোত্তর ছুটিতে যাওয়া পর্যন্ত বেতন-ভাতা, সাধারণ ভবিষ্যৎ তহবিল (জিপিএফ) থেকে অগ্রিম এবং মোটরসাইকেল ক্রয়ের জন্য ঋণবাবদ বিআইডব্লিউটিএর তহবিল থেকে মোট কত টাকা উত্তোলন করেছেন, খাতওয়ারি তা জানতে চাওয়া হয়েছে। দুদক এসব তথ্য চেয়ে ৪ জুলাই বিআইডব্লিউটিএকে চিঠি পাঠায় দুদক। চিঠিতে আগামী ১৬ জুলাইয়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য পাঠাতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর কর্তৃপক্ষ।
বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত অভিযোগ ও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে সিবিএ নেতা রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ২০২১ সালে অনুসন্ধানে নামে দুদক। দীর্ঘ অনুসন্ধানকালে রফিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী শাহিদা বেগমের নামে স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে অন্তত ২০ কোটি টাকার জ্ঞাতআয় বহির্ভুত সম্পত্তির তথ্য পাওয়া যায়। এসব সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে নারায়ণগঞ্জে আবাসিক ফ্ল্যাট, কৃষি ও অকৃষি জমি, শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে দুটি ডকইয়ার্ড, ফরিদপুরে নিজগ্রামে কৃষিজমি এবং বিলাসবহুল গাড়ি।
রফিকের অবৈধ আয়ের মূল উৎস ছিল নিয়োগ ও বদলি-বাণিজ্য। সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে, বিআইডব্লিউটিএর যেকোনো বিভাগে কর্মচারী নিয়োগকালে রফিকের একাধিক প্রার্থী থাকতেন এবং তাদের নিয়োগ নিশ্চিত ছিল। প্রতিটি নিয়োগের ক্ষেত্রে জনপ্রতি সাত লাখ থেকে ১৪ লাখ টাকা পর্যন্ত নিতেন রফিক। এছাড়া কর্মচারীদের পছন্দের স্থলে বদলি এবং পছন্দের নদীবন্দর ও জাহাজে পদায়নের মাধ্যমেও জনপ্রতি ৫০ হাজার থেকে চার লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করতেন রফিক। তবে রফিক একা নন; সিবিএর অন্য একাধিক নেতাও একইভাবে উপার্জন এবং সম্পদ বাণিয়েছেন বলে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে।
প্রায় তিন বছর অনুসন্ধানের পর রফিকুল ইসলাম ও তার গৃহিণী স্ত্রী শাহিদা বেগমের নামে আলাদা মামলা দায়েরের অনুমোদন দেয় দুদক। ২০২৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ের তৎকালীন উপ-পরিচালক (অনুসন্ধান ও তদন্ত-১) ফারজানা ইয়াসমিন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ অনুমোদনের তথ্য জানা যায়। এরপর তাদের দু’জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারায় মামলা হয়।
বিআইডব্লিউটিএ এবং তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রফিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী শাহিদা বেগমের নামে করা মামলা তদন্তকালে তাদের ব্যাংক হিসাবে সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। রফিক দাবি করছেন, এই টাকা তার বৈধ আয় থেকে জমা করা হয়েছে এবং বেতন-ভাতাসহ বিআইডব্লিউটিএর বিভিন্নখাত থেকে পাওয়া। তবে সংশ্লিষ্ট অনেকের কাছেই টাকার অংক ও লেনদেন পরিমাণ বিশ^াসযোগ্য নয়।
দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, দুদকের অনুসন্ধান শুরুর পর রফিক বিলাসবহুল নতুন গাড়িটি বিক্রি করে দেন। এরপর দুটি ডকইয়ার্ডের যাবতীয় সরঞ্জাম বিক্রি এবং ইজারা নেওয়া নদীতীরের জমি বিআইডব্লিউটিএকে ফেরত দেন। নদীতীরের জমি ইজারা দেয়ার এখতিয়ার বিআইডব্লিউটিএর। নিয়ম অনুযায়ী এই সংস্থার কোনো কর্মকর্তা কিংবা কর্মচারী নদীর তীরভূমি ইজারা নিতে পারবে না। কিন্তু আইন ভঙ্গ করে সাবেক সিবিএ নেতা রফিক শীতলক্ষ্যা তীরের জমি ইজারা নিয়ে দুটি ডকইয়ার্ড নির্মাণ করেছিল।
বিআইডব্লিউটিএর এক সময়ের প্রতাপশালী সিবিএ নেতা রফিকুল ইসলামের পৈতৃকবাড়ি ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার চণ্ডীদাসনী গ্রামে। বর্তমানে স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করেন নারায়ণগঞ্জ শহরের আমলাপাড়ায় বহুতল ভবন শাহনাজ গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাটে। বিলাসবহুল ভবনের দোতলার ওই ফ্ল্যাটটি রফিকুলের নিজের কেনা। এছাড়া তার তিন ছেলে নারায়ণগঞ্জে আলাদা আলাদা ফ্ল্যাটে বসবাস করেন।
এসব বিষয়ে জানতে রফিকুল ইসলামের মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
ভোরের আকাশ/মি