দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পরেও মাঠের কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে বিএনপি। নানা হিসাব-নিকাশ কষে এক দিন পর্যবেক্ষণ করে দলটি কাল থেকে ফের মাঠের কর্মসূচিতে যাবে। ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত দলটি কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার সিন্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগ ও জাপার যেসব প্রার্থীরা ভোট সুষ্ঠু হয়নি বলে দাবি করছেন ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তাদের নীরব সমর্থন পাবেন বলে মনে করছে বিএনপি।
বিএনপি নেতারা বলছেন, পর্যায়ক্রমে তারা আন্দোলনের গতি বাড়াবেন। ভোট নিয়ে খোদ আওয়ামী লীগ ও জাপার যারা অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন ভোটাধিকার আন্দোলনে তাদের সমর্থন পাওয়ারও আশাবাদ বিএনপি নেতাদের।
এদিকে, ভোট বর্জন করায় ভোটারদের স্যালুট জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। তার অভিযোগ, উপস্থিতির হার নিয়ে সরকার যা মন চায় তাই দেখাবে বলেও অভিযোগ তার।
দলীয় সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কমাতে তৎপর ছিল বিএনপি। দলটি ভোটের তফসিল ঘেষণা প্রত্যাখান করে আন্দোলনে নামে। সর্বশেষ দলটি ভোট বর্জন করে ভোটারদের ভোটকেন্দ্র বিমুখ করতে মাঠে নামে। তারপরও গতকাল রোববার বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়াই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ নির্বাচনে জনগণ প্রকৃত অর্থে ভোট দিতে যায়নি বলে দাাবি করেছে বিএনপি। দলটি ভোটগ্রহণ ঠেকাতে না পারলেও নতুন সংসদ বেশি দিন টিকবে না এমন বার্তা হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের দেয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে নেতাকর্মীদের সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করার পরামর্শ দিয়েছে বিএনপি।
ভোটের পর দলটি কী কর্মসূচি দিতে পারে এমন তথ্য জানতে ভোরের আকাশের পক্ষ থেকে বিএনপির কয়েকজন নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তারা জানিয়েছে- ভোটের পর সার্বিক পরিস্থিতি আজ সোমবার পর্যন্ত দেখবে দলটির নেতারা। এরপর মঙ্গলবার থেকে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি চালিয়ে যাবে দলটি। আন্দোলনে এবার খোদ আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির যেসব প্রার্থী অনিয়মের অভিযোগ করেছেন তাদের নীরব সমর্থন পেতে চায়।
এছাড়া ভোটে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আর ডামি প্রার্থী থাকার কারণে দলটির নেতাকর্মীরা এখন মাঠে বিভক্ত সে সুযোগকে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা বিএনপির।
এছাড়া ইতোমধ্যে ভোট পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা দায়িত্ব পালন করছেন। তারা ভোটে যেসব অনিয়মের প্রমাণাদি পেয়েছে তা সংরক্ষণ করে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে উপস্থাপনের পাশাপাশি জাতিসংঘসহ বিদেশি দূতাবাসগুলোতেও সরবরাহ করবে বিএনপি। কূটনৈতিক তৎপরতা ফের বাড়াবে দলটি। সেখানে সর্বত্র একতরফা ভোট প্রমাণে বিএনপি সমর্থ হবে বলেও মনে করছেন।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ বলেন, আন্দোলন চলবে বলে দল থেকে তাদেরকে ধারণা দেয়া হয়েছে। কাল থেকে ফের কর্মসূচি ঘোষণা হতে পারে। তিনি বলেন, দলের কোনো নেতাকর্মী হতাশ নয়। তারা সবাই মাঠে থাকবেন।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান ভোরের আকাশকে বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে দল কর্মসূচি ঘোষণা দেবে। এ নির্বাচন নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই। তারা ভোটাধিকারের আন্দোলন নিয়ে ভাবছেন। সে আন্দোলনে এবারের ভোটে অংশ নিয়ে যারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন তাদের সমর্থন আশা করেন তিনি।
এদিকে, ‘একতরফা’ ভোট বর্জনের ডাক সফল হয়েছে দাবি করে ভোটারদের ‘স্যালুট’ জানিয়েছে আবদুল মঈন খান। রোববার দুপুর পর্যন্ত ভোটের প্রাপ্ত খবরাখবর জেনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গণমাধ্যমের কাছে এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, বিশ^ব্যাপী দেখেছে এই নির্বাচন বাংলাদেশের মানুষ বর্জন করেছে। ভোটার উপস্থিতির হার নিয়ে সরকার যা মন চায় তাই দেখাবে বলেও অভিযোগ তার।