logo
আপডেট : ১৫ জুলাই, ২০২৪ ১২:১৫
বিও একাউন্ট বন্ধ
ভ্যালুয়েশন কমেছে শেয়ার বাজারের
হেলাল সাজওয়াল

ভ্যালুয়েশন কমেছে শেয়ার বাজারের

পুঁজিবাজারের মন্দাভাব যেন কাটছেই না। দেশের স্টক এক্সচেঞ্জগুলো যেন ভাসছে লেনদেনের ভাটায়। গত দুই মাসে ৩২ হাজারের বেশী বিও একাউন্ট বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে পুঁজিবাজারে নতুন বিনিয়োগ ও টার্নওভার কমে গেছে।

ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন(বিএসইসি)-এর সময়োপযোগি পদক্ষেপের অভাবে বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। এ কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তারা। চলতি জুলাই মাসের দুই সপ্তাহে পুঁজিবাজারে ১৬ হাজার ৪৭৯টি বিও হিসাব বন্ধ হয়ে গেছে। আগের মাসে জুনে বন্ধ হয়েছিল ১৬ হাজার ৮২টি বিও হিসাব। সিডিবিএল সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

তবে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, নতুন বিও অ্যাকাউন্ট খোলার পর এখনও শেয়ার কেনা হয়নি, এমন বিও হিসাব রয়েছে ৭২ হাজার ৪৫৮টি।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত ১১ জুলাই পুঁজিবাজারে মোট বিও হিসাব ছিল ১৭ লাখ ৫৮ হাজার ৬৬৭টি। গত ৩০ মে ছিল ১৭ লাখ ৯১ হাজার ২২৮টি। সর্বশেষ তথ্যমতে, সক্রিয় বিও হিসাবগুলোর মধ্যে ১৩ লাখ ৬ হাজার ১৬৮টিতে কম-বেশি শেয়ার ছিল। তবে ৩ লাখ ৮০ হাজার ৪১টিতে কোনো শেয়ার ছিল না।

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, চরম অস্থিরতায় কাটছে বর্তমান পুঁজিবাজার। বিভিন্ন কোম্পানির লেনদেন কমে গেছে উল্লেখযোগ্যহারে। কমিশন পুঁজিবাজারে কখনো ফ্লোর প্রাইস প্রয়োগ করছে। কখনো উঠিয়ে নিচ্ছে। কমিশনের এমন সিদ্ধান্তের কারণে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাজারে। পাশাপাশি ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) ও মার্চেন্ট ব্যাংকসহ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বাজার থেকে বিনিয়োগ তুলে নিয়ে সাইড লাইনে চলে গেছে। তারা নতুন করে বিনিয়োগে আসছে না। বাজার স্থবির হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মনে পুঁজিবাজার নিয়ে আস্থাহীনতা দেখা দিয়েছে। কবে নাগাদ বাজার পরিস্থিতি ভালো হবে এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। তবে তারা বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজারে ফেরাতে কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছেন বলে জানান।

অপরদিকে বিনিয়োগকারীর অভাবে ফাঁকা হয়ে আসছে ব্রোকারেজ হাউজগুলো । খোজ নিয়ে জানা যায় বিনিয়োগকারী নেই; তাই ব্রোকারেজ হাউজগুলোর ব্যবসাও নেই। ক্ষতির মুখে পড়ে অফিসবন্ধ করে দিচ্ছেন অনেকেই। এদিকে গতকাল সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস লেনদেনের শুরুতে শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়েছে। সবকটি মূল্য সূচকের বড় পতনের পাশাপাশি দাম কমার তালিকায় রয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। পাশাপাশি লেনদেনও ধীরগতি লক্ষ করা গেছে। দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে প্রায় দুইশ প্রতিষ্ঠান।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দাম কমার তালিকায় রয়েছে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান। ফলে মূল্য সূচকও নিম্নমুখী অবস্থায় রয়েছে। সেই সঙ্গে এ বাজারটিতেও লেনদেনে ধীরগতি দেখা গেছে। এদিন শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমার মাধ্যমে। এতে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান সূচক ৬ পয়েন্ট কমে যায়। লেনদেনের প্রথম আধা ঘণ্টাজুড়েই বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমার প্রবণতা অব্যাহত থাকে। এমনকি লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দরপতনের মাত্রা বেড়েছে।

ডিএসইতে গতকাল দাম কমেছে ২৮০টির। ফলে ডিএসইর প্রধান সূচক কমেছে ৪৪ পয়েন্ট। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ১০ পয়েন্ট কমেছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক ৮ পয়েন্ট কমেছে। এ সময় পর্যন্ত ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১৪৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৭৭ পয়েন্ট কমেছে। লেনদেন হয়েছে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ৭৭ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ১৪টির, কমেছে ৫৯টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ৪টির।

এদিকে ডিএসইর বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য, ২০২১-২২ অর্থবছরের সংস্থাটির আয় এসেছে ৩২১ কোটি ৩০ লাখ টাকা, আর ব্যয় হয়েছে ১৪১ কোটি টাকা। ট্যাক্স পরিশোধের আগে তাদের নিট আয় থাকে ১৮০ কোটি ৩০ লাখ টাকা, আর ট্যাক্স পরিশোধের পর থাকে ১২৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

অন্যদিকে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ডিএসইর আয় ছিল ২৩৮ কোটি ২০ লাখ টাকা, ব্যয় ছিল ১৩১ কোটি ২০ লাখ টাকা। ট্যাক্স পরিশোধের আগে নিট আয় ১০৭ কোটি টাকা, আর ট্যাক্স পরিশোধের পর ৮০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। পরিসংখ্যান বলছে, ব্যবসা মন্দায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে ডিএসইর আয় ৪৪ কোটি ১০ লাখ টাকা কমে নেমেছে ৮০ কোটি ৬০ লাখ টাকায়। ফলে সরকারও হারাচ্ছে বড় অঙ্কের রাজস্ব।

দীর্ঘদিন ধরে আস্থার সংকট, লেনদেনে ভাটা, বিনিয়োগকারীদের বাজার ছেড়ে যাওয়া, আর ব্রোকারেজ হাউজগুলোর ব্যবসার মন্দায় টালমাটাল পুঁজিবাজারে দেখা দিয়েছে আস্থার সংকট । এ অবস্থায় আস্থা ফেরাতে কীভাবে কাজ করবে বাজার সংশ্লিষ্টরা এমন প্রশ্ন বিনিয়োগকারীসহ বাজার সংশ্লিষ্টদের। এ বিষয়ে ডিএসই চেয়ারম্যান হাফিজ মুহাম্মদ হাসান বাবু বলছেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটসহ নানা কারণে দেশের পুজি বাজার পরিস্থিতির স্বীকার। শিগগিরই এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠবে বলে আশা তার।

শেয়ার বাজার বিশেষজ্ঞ আবু আহম্মেদ ভোরের আকাশকে বলেন, বর্তমানে শেয়ার বাজারের ভ্যালুয়েশন খুব কমে গেছে। তিনি বলেন বাজারের সূচক প্রায় দুই হাজার পয়েন্ট কমে গেছে এটা একটি ভয়ানক চিত্র। বিও হিসাব বন্ধ হওয়া সম্পর্কে তিনি বলেন অনেক সময় মানুষ মরে গেলে, কেউ বিদেশে চলে গেলে কিছু কিছু একাউন্ট বন্ধ হওয়াটা স্বাভাবিক কিন্তু এ সঙ্গে এত হিসাব বন্ধ হয়ে যাওয়া এটা ভাবনার বিষয়।

তিনি বলেন, যদি লিস্টেড কোম্পানিগুলো ভালো ডিভিডেন্ড দিতে পারে তবে তারা আবার ফিরে আসবে। যারা চলে গেছে তারা ব্যাক্তিগত কারনে গেছে। এখানে কারো কোন হাত নেই। বিনিয়োগ কারীদের কিভাবে ফেরত আনা হবে এটি বিএসইসির ভাবনা। তবে ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত করার বিকল্প নেই বলে জানান তিনি।

ভোরের আকাশ/ সু