রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকার সাধারণ মানুষ ভয়ে-আতঙ্কে পুরো এক সপ্তাহ ঘরবন্দি ছিলেন। এখন চারদিকে তীব্র রোদের ছটা, আকাশে হালকা সাদা মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। এলোমেলো হাওয়ায় দুলছে চারপাশের গাছপালা। এর মাঝে মহাসড়ক ধরে স্বাভাবিক গতিতে চলছে ছোট-বড় যানবাহন। এটিই এখন স্থানীয়দের কাছে শান্ত ও শান্তিময় পরিস্থিতি। এ চিত্র শনিবার সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন যাত্রাবাড়ী, রায়েরবাগ, শনির আখড়া ও কাজলার এলাকার।
তুমুল ঝড়ের পর চারপাশে এখন যেন প্রশান্তির আবেশ। ছয়-সাত দিন আগেও যে এলাকা ছিল বিক্ষোভে উত্তাল। সংঘাত-সহিংসতার আগুন যেন পুড়িয়ে দিচ্ছিল সবকিছু। সেখানকার মানুষের কাছে এখন এমন শান্ত অবস্থা সীমাহীন প্রশান্তির হবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে ঝড় কেটে গেলেও চিহ্ন থেকে যায়। তাই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন যাত্রাবাড়ীসহ পাশ্ববর্তী এলাকায় চোখে পড়ে দুস্কৃতকারীদের পৈশাচিক ধ্বংসলীলার ভয়ংকর চিত্র। সীমাহীন নাশকতার চিহ্ন বুকে নিয়েই এখন শান্ত যাত্রাবাড়ীসহ রায়েরবাগ, শনির আখড়া ও কাজলা এলাকা।
জুনের প্রথম সপ্তাহে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় আসার পরদিন থেকে এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। জুলাইয়ে এসে তাদের সঙ্গে যুক্ত হন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। এতে বিক্ষোভের মাত্রা ও ব্যাপ্তি অনেক বেড়ে যায়। এক পর্যায়ে অচল হয়ে পড়ে পুরো রাজধানী। সংঘাত ছড়ায় সারা দেশে। রাজধানী ঢাকার যেসব এলাকায় বেশি সংঘাত হয় তার মধ্যে অন্যতম যাত্রাবাড়ী-শনির আখড়া। মৃত্যু হয় বেশ ক’জনের। হানিফ ফ্লাইওভারের যাত্রাবাড়ী কাজলা পাড়ের দুটি টোল প্লাজা পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
১৯ জুলাই শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাতে কারফিউ জারি ও সেনাবাহিনী মোতায়েনের পর থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। তবে মানুষের মধ্যে এখনও আতঙ্ক রয়ে গেছে। সেই সঙ্গে রয়ে গেছে ধ্বংসযজ্ঞের নানা চিহ্ন। সরেজমিন যাত্রাবাড়ী, কাজলা ও শনির আখড়া এলাকা ঘুরে ও এসব এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
যাত্রাবাড়ীতে কথা হয় মধ্যবয়সী পলকের সঙ্গে। তিনি এই এলাকায় দীর্ঘদিন যাবৎ ভ্রাম্যমাণ দোকানে ফল বিক্রি করেন। পলক বলেন, ৮ দিন পরে দোকান খুলেছি। গোলাগুলির শব্দে আতঙ্কে ৮ দিন ঘর থেকে বের হইনি। খুব কষ্টে দিন কাটিয়েছি। এখনও ৫টায় পুলিশ দোকান বন্ধ করতে বলে। আমরা নির্ভয়ে ব্যবসা করতে চাই।
একই এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দা রোকন চৌধুরী বলেন, কয়েকদিন যে কী আতঙ্কে দিন পার করেছি বলে বোঝাতে পারবো না। ১৯ ও ২০ জুলাই এক মুহূর্তের জন্যও নিচে নামিনি। এই দুইদিন শুধু বিস্কুট ও পানি খেয়ে থেকেছি। সহিংসতার কথা মনে হলে এখনও শিউরে উঠি। তবে সেনাবাহিনী থাকার ফলে আতঙ্ক কেটে যাচ্ছে। সেনাবাহিনী সাধারণ মানুষের সঙ্গে খুব ভালো ব্যবহার করছে।
একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন কাজলা এলাকার বাসিন্দা গোলাম ফারুক। তিনি জানান, পুরো এক সপ্তাহ পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঘরবন্দি ছিলাম। বাইরে বের হওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি ছিল না। বাসার জানালা দিয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছি। কয়েকটা দিন খুব ভয়ে পার করেছি। আমরা তো এই সহিংসতা-হানাহানি দেখতে চাই না। আমরা বসবাসের জন্য নিরাপত্তা চাই, নিরাপদ পরিবেশ চাই।
ভোরের আকাশ/ সু