logo
আপডেট : ২৮ জুলাই, ২০২৪ ১২:০৮
সাংবাদিক তুরাবের মায়ের কান্না কিছুতেই থামছে না
সিলেট ব্যুরো

সাংবাদিক তুরাবের মায়ের কান্না কিছুতেই থামছে না

‘আমার তুরাবকে এনে দাও। পুলিশ কেন আমার ছেলেকে মারল?’ পাঁচ দিন ধরে এভাবেই কিছুক্ষণ পর পর বিলাপ করছেন সিলেটে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত সাংবাদিক এটিএম তুরাবের মা মমতাজ বেগম। আজও তার বিলাপ শোনা গেছে।

সিলেট নগরীর যতরপুর এলাকায় নিহত তুরাবের বাড়ি ঘিরে এখন বিরাজ করছে নীরবতা। কাঁদতে কাঁদতে মা মমতাজ বেগমের চোখের জলও শুকিয়ে গেছে। তুরাবের বড় ভাই আবুল আহসান জানান, তার মা বারবার সন্তানকে ফিরে পাওয়ার আকুতি জানাচ্ছেন। হত্যাকারীর বিচার দাবি করছেন। কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ১৯ জুলাই জুমার নামাজের পর নগরীর বন্দরবাজারে গুলিবিদ্ধ হন দৈনিক নয়া দিগন্তের জেলা প্রতিনিধি ও স্থানীয় দৈনিক জালালাবাদের স্টাফ রিপোর্টার এটিএম তুরাব। বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ভেদ করে একটি গুলি ঢোকে তার শরীরে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে সোবহানীঘাট ইবনে সিনা হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় মারা যান তিনি।

প্রত্যক্ষদর্শী তুরাবের সহকর্মীরা জানান, ১৯ জুলাই বন্দরবাজারের পুরান লেন এলাকায় সংঘর্ষ চলছিল পুলিশের সঙ্গে বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীর। একপর্যায়ে পুলিশ গুলিবর্ষণ করলে তুরাব চিৎকার করে মটিতে লুটিয়ে পড়েন। তুরাব নিহতের ঘটনায় গত বুধবার রাতে কোতোয়ালি থানায় অজ্ঞাত পুলিশ সদস্যদের আসামি করে মামলা করেছেন নিহতের ভাই জাবুর আহমদ। তবে পুলিশ মামলাটি আমলে নিলেও তাদের দায়ের করা নাশকতার মামলার সঙ্গে সমন্বয় করে এর তদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার আজবাহার আলী শেখ।

তিনি জানান, মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়েছে। আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। পাশাপাশি গত ১৯ জুলাই নাশকতার ঘটনায় পুলিশ যে মামলা করে তার সঙ্গে একীভূত করে তদন্ত করা হবে। ওই মামলাটি তদন্ত করা হবে হত্যা মামলা হিসেবেই।

তুরাবের বড় ভাই আবুল আহসান জানান, ১৩ মে বিয়ে করেন তুরাব। বিয়ের এক মাসের মাথায় তাঁর স্ত্রী তানিয়া ইসলাম লন্ডন চলে যান। স্বামীর মৃত্যুর পর সেখানে তানিয়া মুষড়ে পড়েছেন। তুরাবের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর শুনে ওইদিন তানিয়া ভিডিওকলে স্বামীকে একনজর দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট না থাকায় স্বামীকে শেষ দেখাটুকু দেখতে পারেননি।

তুরাবের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ও সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান শামসুল ইসলাম বলেন, নিহতের শরীরে ৯৮টি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। গুলিতে তাঁর লিভার ও ফুসফুস আঘাতপ্রাপ্ত হয়। মাথায় ঢিলের আঘাতও ছিল। এ কারণেই তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে।

এদিকে সাংবাদিক তুরাব নিহতের ঘটনার তদন্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এসএমপি কমিশনার জাকির হোসেন খান। গত বুধবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কী কারণে এবং কীভাবে সাংবাদিক তুরাব নিহত হয়েছেন তার তদন্ত চলছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ভোরের আকাশ/ সু