উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সৃষ্ট বন্যায় কৃষকদের ৬২ কোটি ৭৮ লাখ ৩ হাজার ১২৬ টাকা ক্ষতি হয়েছে। জমিতে রোপন করা পাট, তিল, পটোল, আউশ, আমন বীজতলা ও বেগুনসহ অন্যান্য ফসল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
জেলার কাজীপুর, সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুরে ৩৭ হাজার ৪৬ জন কৃষক এবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।
সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ৪৯ হাজার ৭৯০ হেক্টর ফসলী জমি। এসব জমিতে সবজি, মরিচ, পাট, আউশ ধান, তিল ও বীজতলা ছিল। গত জুন মাসের শেষ দিকে যমুনা নদীর পানি বাড়তে শুরু করে। গত ৪ জুলাই যমুনা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে চরাঞ্চল ও নিম্ঞ্চল প্লাবিত হয়। পানিতে নিমজ্জিত হয় জেলার ৫ উপজেলার ৬ হাজার ৫২৫ হেক্টর ফসলী জমি। এর মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩ হাজার ১৮৫ হেক্টর জমির ফসল। এবার বন্যায় জেলার কাজীপুর, সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলায় ৬ হাজার ৫২৫ হেক্টর ফসলী জমি পানিতে তলিয়ে যায়। এর মধ্যে পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে ৩ হাজার ১৮৫ হেক্টর জমির ফসল। এতে ৩৭ হাজার ৪৬ জন কৃষক এবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
সদর উপজেলার মেছরার চরের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক তমিজ উদ্দিন ভোরের আকাশকে বলেন, আমি ৩ বিঘা জমিতে পটল আবাদ করেছিলাম। তা বন্যার পানিতে তলিয়ে জমির সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এতে ২০ হাজার টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে আমার। এখন আমি কিভাবে সংসার চলাবো তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
কাজিরপুর উপজেলার নাটুয়ারপাড়া চরের আব্দুল মজিদ ভোরের আকাশকে বলেন, এবার আমি ২ বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করেছিলাম। বন্যার পানিতে সব পচে নষ্ট হয়ে গেছে।
শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরি গ্রামের কৃষক আবু সুফিয়ান ভোরের আকাশকে বলেন, একদিকে নদী ভাঙ্গনে বসতবাড়ির আংশিক ভেঙে গেছে। অপরদিকে আমার কৃষি জমিতে পানি উঠে সবজি খেত নষ্ট হয়ে গেছে। এ অবস্থায় আমি খুব দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি। তবে এখন পর্যন্ত সরকারি ভাবে কোনো সহায়তা পাইনি।
চৌহালী উপজেলার ভুতেরমোড় গ্রামের কৃষক আব্দুল কাদের ভোরের আকাশকে বলেন, আমি এ বছর ৩ বিঘা জমিতে তিল, পাট ও বিভিন্ন ধরণের সবজি চাষ করেছিলাম। এতে আমার মোট খরচ হয়েছে প্রায় ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা। কিন্তু বন্যায় সব ফসল ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। তাতে আমার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। এখন এই ক্ষতি পুসে উঠতে আমার ২ বছরের বেশি সময় লাগবে। তবে সরকারিভাবে কিছু সহায়তা পেলে কিছু টা ক্ষতি পুষিয়ে উঠতো।
সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ইউনিয়নের চিথুলিয়া গ্রামের কৃষক ফরিদুল ইসলাম ভোরের আকাশকে বলেন, আমি ২ বিঘা জমিতে মিষ্টি লাউ, সিম, কুমড়া এবং দুই বিঘা জমিতে পাট চাষ করে ছিলাম। বন্যায় পাটের তেমন ক্ষতি না হলেও লাউ, কুমড়ার চারা পচে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে আমার প্রায় ৩৫ হাজার টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। এখন আমার এই ক্ষতি কেটে উঠতে অনেক সময় লাগবে। তবে সরকারি ভাবে কিছু সহায়তা দেওয়া হলে অনেক উপকার হবে।
চৌহালী উপজেলার বাহ্মণগ্রামের কৃষক নুরুল ইসলাম ভোরের আকাশকে বলেন, এবার ২ বিঘা জমিতে বেগুন ও ১ বিঘা জমিতে লাউ চাষ করেছিলাম। কিন্তু বন্যার পানিতে সব পঁচে নষ্ট হয়ে গেছে। বন্যায় আমার সব নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সংসার কীভাবে চলাবো তা নিয়ে এখন চিন্তার মধ্যে আছি। সরকারি ভাবে কিছু সহায়তা পেলে কিছু ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারতাম।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রঞ্জিত কুমার সরকার ভোরের আকাশকে বলেন, যমুনার পানি বৃদ্ধি পেয়ে ১১ দিন বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিলো। দেড় সপ্তাহ ধরে যমুনা নদীর পানি কমছে। এ মুহূর্তে যমুনায় পানি বৃদ্ধি পেলেও বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা নেই।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বাবলু কুমার সূত্রধর ভোরের আকাশকে বলেন, এ বছরে চলতি বন্যায় চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের পাট, তিল, আউশ, আমন বীজতলা ও সবজিসহ অন্যান্য ৬ হাজার ৫২৫ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে যায়। এর মধ্যে পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায় ৩ হাজার ১৮৫ হেক্টর জমির ফসল। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারী ভাবে তাদের সহায়তা করার জন্য তালিকা করে মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে কৃষকদের মাঝে বিতরন করা হবে। সহায়তা পেলে কৃষকেরা কিছুটা উপকৃত হবে।
ভোরের আকাশ/ সু