logo
আপডেট : ৬ আগস্ট, ২০২৪ ১১:২৪
শেখ হাসিনার দেশ ছাড়া ঠিক হলো না
সিরাজুল ইসলাম

শেখ হাসিনার দেশ ছাড়া ঠিক হলো না

সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রাজনীতির আইকন মনে করা হয়। তাকে মানবতার জননীও বলা হয়। বিভিন্ন দেশের প্রভাবশালী গণমাধ্যম তাকে নিয়ে অনেক প্রবন্ধ, নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। সাহস, ধৈর্য, উন্নয়ন ও ক্যারিশমাটিক লিডার হিসেবে তাকে সম্মানের সর্বোচ্চ শিখরে বসিয়েছে পত্রিকাগুলো। দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ অনেক নেতা তাকে আইডল মানেন। অনেক বক্তৃতায় তাকে উদাহরণ হিসেবে হাজির করা হয়েছে। এমনকি পাকিস্তানের পত্রিকায়ও তার ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের লাখ লাখ নেতাকর্মীর শেষ ভরসাও তিনি। কোটা সংস্কার আন্দোলন ইস্যুতে শেষ পর্যন্ত তিনি পদত্যাগে বাধ্য হলেন।

গতকাল সোমবার দুপুরে তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি দেশ ছেড়ে গেলেন। এর মধ্য দিয়ে দলের লাখ লাখ নেতাকর্মী চরম বিপদের মুখে পড়লেন। তাদের জানমাল অরক্ষিত হয়ে গেল। আগামীতে হয়তো হামলা-মামলা সহ্য করেই তাদের টিকে থাকতে হবে; যেমনটা প্রায় ১৮ বছর ধরে বিএনপির নেতাকর্মীরা সহ্য করছেন।

এতোদিন পত্রপত্রিকাগুলো কেবল শেখ হাসিনার গুণগান করেছে। তার সমালোচনা কেউ করেনি। হয়তো করার সুযোগ কিংবা সাহস ছিল না। আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ছিল, হতাশা ছিল। হাইব্রিড ও সুবিধাভোগীদের কারণে তারা নিজেদের গুটি নিয়েছিলেন। কেউ কেউ আবার কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন। বিষয়গুলো পত্রপত্রিকায় ওঠে এলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

শেখ হাসিনা একাধিকবার বলেছেন, ‘পত্রিকাগুলোতে কী লেখা হলো সেটা ভাববেন না।’ নিজের কাজ চালিয়ে যান। তিনি অনেক পত্রিকা না পড়ারও পরামর্শ দিয়েছেন। কর্মকর্তাদের দুর্নীতি নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন সম্পর্কে তিনি এই মন্তব্য করতেন। এতে কর্মকর্তারা দুর্নীতিতে আরও উৎসাহিত হতেন বলে মনে করা হয়।

আবার তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথাও বলেছেন। প্রকাশ্যে কেউ কিছু না বললেও পুলিশের সাবেক আইজি ড. বেনজীর আহমেদ; এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমানসহ অনেকের দুর্নীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছেন। খোদ আওয়ামী লীগের অনেক নেতাও দুর্নীতির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

পত্রিকার প্রতিবেদনকে ‘গুরুত্ব’ না দিলেও সাংবাদিকদের অনেক অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা নিজেকে সাংবাদিক পরিবারের মেয়ে বলে পরিচয় দিয়েছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কলকাতার একটি পত্রিকার ঢাকা প্রতিনিধি ছিলেন বলেও তিনি নানা সময় উল্লেখ করেন। সাংবাদিকদের জন্য তিনি কল্যাণ ট্রাস্ট করে দিয়েছেন। এটা নিঃসন্দেহে দলমত নির্বিশেষে সাংবাদিকদের জন্য অনেক উপকারে আসছে।

আবার আসি শেখ হাসিনার দেশত্যাগ সম্পর্কে। দুর্বল গণতন্ত্র এবং রাজতন্ত্রের দেশে নানা ধরনের অভ্যুত্থান হয়ে থাকে। তবে এবার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলো। এই পতনের জন্য তিনিই দায়ী। অহমিকা, মানুষকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে গণঅভ্যুত্থানে তার পতন হলো; সেটা তিনি ইচ্ছা করলেই ঠেকাতে পারতেন। আর সেটা করলে তিন শতাধিক প্রাণহানি হতো না। ছাত্রদের সঙ্গে তিনি বসার যে প্রস্তাব ছিলেন; সেটা আগেই দেওয়া উচিত ছিল।

যদিও তিনি বলেছিলেন ‘তিনি শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলেননি। তার বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে।’ এই কথাটা প্রথমদিনই তার বলা দরকার ছিল। শিক্ষার্থীদের মাথায় হাত বুলিয়ে তিনি সংকট সমাধান করতে পারতেন। কেননা, তিনি শুধু সরকার প্রধান না; তিনি একজন নারী। তিনি একজন মা।


একমাত্র ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে সামরিক হেলিকপ্টারে করে দেশ ছেড়ে গেলেন শেখ হাসিনা। তারা দুজন নিরাপদে চলে গেলেন। কিন্তু তার সন্তানতুল্য যে লাখ লাখ নেতাকর্মী দেশে রয়ে গেল; তাদের কী হবে? এই কথাটি তিনি একটিবারও ভেবেছেন? রক্তপাত বন্ধে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশেই থেকে যেতে পারতেন। হয়তো তার বিরুদ্ধে মামলা হতো। তিনি কারাগারে যেতেন। কিন্তু লাখ লাখ নেতাকর্মী তাকে সামনে রেখে কার্যক্রম চালাতে পারতেন। তারা সংগঠিত থাকতেন। কিন্তু এখন তাদের কী হবে? এবার প্রশ্ন আসতে পারেÑ শেখ হাসিনা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। যুক্তির খাতিরে সেটা মেনেই নিলাম। কিন্তু তিনি তো বলিষ্ঠ নেত্রী। তিনি বলতে পারতেন আমি পদত্যাগ করলেও দেশেই থাকব। আমি দেশ ছেড়ে যাব না।

এর আগেও তিনি নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছেন। ৮০-এর দশকে বিদেশ থেকে দেশে আসার সময় তাকে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। সেই বাধা উপেক্ষা করেই তিনি দেশে ফিরেছিলেন। তিনি না থাকায় দলের কী হবে? দল না ভাঙলেও অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। হামলা-মামলার ভয়ে নেতাকর্মীরা পালিয়ে বেড়াবেন বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।

কেননা, আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতার্মীদের বাসাবাড়ি ও প্রতিষ্ঠানে হামলা চলছে। ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। অনেক মন্ত্রী ও এমপির বাড়িতে হামলা হয়েছে। আগুন লাগানো হয়েছে। আওয়ামী লীগের কার্যালয়গুলো এখন ধ্বংসস্তূপ। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে আওয়ামী লীগকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে।

লেখক : সাংবাাদিক।

ভোরের আকাশ/ সু