রাজধানীর সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ভূমিকায় থাকা শিক্ষার্থীরা দিন-রাত কঠোর পরিশ্রম করছেন। সড়কে চলাচল করা অনেকেই তাদের কাজের প্রশংসা করলেও ‘সহসাই নিয়ম ভাঙতে না পারায়’ কারো কারো মধ্যে কিছুটা অসন্তোষও রয়েছে। পাশপাশি রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে চিরচেনা যানজটের দেখাও মিলছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে কবে থেকে আবারও স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরছে ট্রাফিক পুলিশ।
জানা গেছে, ছাত্র-জনতার এক দফা আন্দোলনের মধ্যে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নিজেদের নিরাপত্তাহীনতার কথা তুলে ধরে কর্মবিরতিতে যায় নন-ক্যাডার পুলিশ সদস্যরা। একই সময় দায়িত্ব থেকে নিজেদেও সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা পায় ট্রাফিক পুলিশও। সড়কে চরম বিশৃঙ্খলার আশঙ্কায় জনসাধারণের কথা বিবেচনায় নিয়ে সেখানে শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজে নামে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। গত কয়েকদিন ধরে শিক্ষার্থীদের রাত-দিন সড়ক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার পাশপাশি ট্রাফিকের শৃঙ্খলা ফেরানোর দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। তারপরও সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক চিরচেনা যনজটের চিত্র চোখে পড়েছে।
গতকাল রোববার রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকেই বিরূপ আবহাওয়া উপেক্ষা করে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছেন শিক্ষার্থীরা। বেলা যত বাড়তে থাকে সড়কে পরিবহনের চাপ বাড়লে ব্যস্ত সময় পার করতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। তারপরও বৃষ্টির মধ্যে বাসাবো, মতিঝিল, গুলিস্তান, জাতীয় প্রেস ক্লাব, সচিবালয়, শাহবাগ, পল্টন, মহাখালী, বনানীসহ বিভিন্ন এলাকার সড়কে ছিল যানজট।
তবে শিক্ষার্থীদের প্রশংসা করে মোহাম্মদপুর এলাকার প্রাইভেটকার চালক মো. মোশারফ হোসেন বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েরা অনেক পরিশ্রম করছে। বৃষ্টি উপেক্ষা করেও তারা মানুষের কল্যাণে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। আগে রাস্তায় চলতে গেলে কিছু হলেই পুলিশকে টাকা দেওয়ার ভাবনা মাথায় আসতো। এখন সেই চিন্তা করতে হয় না। তবে আমার ভয় হয়Ñ এতো ধুলোবালির মধ্যে তারা আবার অসুস্থ হয়ে পড়ে কিনা।
রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন সড়কে ট্রাফিক পুািলশের দায়িত্ব পালন করা একাধিক শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের বলেন, গত কয়েকদিন ধরে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে তাদের রাত-দিন কঠোর পরিশ্রম করতে হচ্ছে। তবে দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে তাদের খুব ভালো লাগছে। তারা দেশকে সঠিক পথে আনতে শ্রম দিতে চান।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীরা সড়কে খুব কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করছে। কোনো মোটরসাইকেলে কেউ হেলমেট ছাড়া চলাচল করলে তাকে প্রথমে গতিরোধ করা হচ্ছে এরপর সতর্ক করা হচ্ছে। বাধ্য হয়েই কেউ হেলমেট না পড়ে বের হচ্ছে না। কোন কোন গাড়ির লাইসেন্সও পরীক্ষা করা হচ্ছে। সব কিছুই ভালো চলছে তবে যারা নিয়ম মানতে চান না তারা এসব কার্যক্রম মানতে চাচ্ছেন না।
শহরে শিক্ষার্থীরা যেভাবে যানজট নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন তার জন্য সড়কগুলো কতটা উপযোগী সেই প্রশ্ন তুলে মো. রিপন নামের এক গাড়িচালক বলেন, শিক্ষার্থীরা অনেক কষ্ট করছেন তাতে সন্দেহ নেই। কিন্ত আমাদের সড়কগুলো কি আসলেই নিয়ম মানার জন্য প্রস্তুত? সেটা বিবেচনার সময়ও এখন হয়েছে।
রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে দায়িত্বে থাকা একাধিক ট্রাফিক পুলিশ সদস্য ভোরের আকাশকে বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের কোনো ধরনের বিরোধ নেই। আন্দোলন প্রতিরোধের দায়িত্বেও তারা কেউ ছিলেন না। কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার দুর্নীতি তাদের পুরো বাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তারা তাদের শাস্তি চান। আর কর্তৃপক্ষের থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা পেলেই তারা সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে আবারও দায়িত্বে ফিরবেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স ইনামুল হক সাগর ভোরের আকাশকে বলেন, পুলিশের সব ইউনিটের কার্যক্রমকে স্বাভাবিক করতে আমরা চেষ্টা করছি। ট্রাফিক পুলিশও খুব তাড়াতাড়ি তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরবে।
ভোরের আকাশ/মি