logo
আপডেট : ১২ আগস্ট, ২০২৪ ১৯:০৩
শিক্ষার্থীদের হাতের রং-তুলির ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে সিরাজগঞ্জের চিত্র
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

শিক্ষার্থীদের হাতের রং-তুলির ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে সিরাজগঞ্জের চিত্র

ক্যাপশন: সিরাজগঞ্জ শহরের কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজের দেয়ালে গ্রাফিতি অঙ্কন ও নানা আলপনা আঁকছেন শিক্ষার্থীরা।

শহর পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার পর এবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে মানুষের মনে স্মরণীয় করে রাখতে শিক্ষার্থীদের হাতের ছোঁয়ায় বিভিন্ন লিখনি ও অপরিষ্কার দেয়াল পরিস্কারে করে গ্রাফিতি অংকনে সেজে উঠছে সিরাজগঞ্জ শহর। এসব ছবিতে ফুটে উঠছে আন্দোলনে যুক্ত থাকা শিক্ষার্থীদের রক্তে রঞ্জিত ইতিহাস। এসব গ্রাফিতিতে বৈষম্য-স্বৈরাচার বিরোধী, গঠনতন্ত্র পুনর্গঠন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নিমার্ণের চাওয়া ও জানা-অজানা লাখো বীরদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ফুটে ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্র মায়াবী মুগ্ধের সেই ডাক, পানি লাগবে, পানি? বীর শহীদ আবু সাঈদের প্রতিচ্ছবি ও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।


সোমবার (১২ আগস্ট) সকালে সিরাজগঞ্জ শহরের বাজার স্টেশন কড়িতলা, কালেক্টর স্কুলএন্ড কলেজের পিছনের দেয়ালে, পৌরসভা কার্যালয়ের সামনের দেয়ালে, পদ্ম পুকুরপাড়, পৌর হকার্স মার্কেটের সামনে দেয়ালে, ইলিয়ট ব্রিজ ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে শহরে মুক্তমঞ্চ, আদালত সড়কের বিভিন্ন দেয়ালে গ্রাফিতি অঙ্কন করা দেখা যায়।


শিক্ষার্থীদের রঙ তুলির আঁচড়ে করা ক্যালিওগ্রাফি-গ্রাফিতিতে চোখ আটকে যাচ্ছে শিশু থেকে বয়োবৃদ্ধ সবার। রোদে এক হাতে রঙয়ের কৌটো, অন্যহাতে তুলি। মাথা বেয়ে বেয়ে চুয়ে পড়ছে ঘাম। তবুও চোখে-মুখে উচ্ছ্বাস শিক্ষার্থীদের।


সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, অপরিচ্ছন্ন প্রতিটি দেওয়াল কালো, সাদা, লাল, নিল, হলুদসহ নানা রঙে জল তুলির আঁচড়ে রাঙাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের কারও হাতে ছিল রঙ-তুলি, আবার কেউ কেউ একে অপরকে পান করাচ্ছেন পানি। অনেকেই আবার দেখিয়ে দিচ্ছেন কোথায় কি রঙ, কোন ক্যালিওগ্রাফি করবেন। সবার চোখেমুখেই যেন ছিল বিজয়ের হাসি।


দেয়ালগুলোয় চোখ বুলিয়ে দেখা যায়, কোথাও শিক্ষার্থীরা লিখেছেন দেশাত্মবোধক গানের অংশবিশেষ, কোথাও নাগরিক কবি শামসুর রাহমানের ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা, কোথাও বিদ্রোহী কবির সেই আগুনঝড়া কবিতার ‘বল বীর, বল বীর, বল উন্নত মম শির। আমাদের দেশের ভাগ্য আমরাই পরিবর্তন করবো,তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা,এ শহর আর কাঁদবে না, অন্যায় আর থাকবে না। শুধু তাই নয়, তাদের দেওয়াল লিখনীতে ঠাঁই পেয়েছিলো, রাজধানীতে আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের পানি বিলিয়ে চলা বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্র মায়াবী মুগ্ধের সেই ডাক, পানি লাগবে, পানি? সেইদিন অর্থাৎ গত ১৮ জুলাই রাজধানীর উত্তরা আজমপুর এলাকায় মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ যখন পানির কেস হাতে নিয়ে ক্লান্ত শিক্ষার্থীদের মাঝে পানি বিতরণ করছিলেন, তখন আন্দোলনকারীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গুলি চালালে একটি গুলি মুগ্ধর কপালে লাগে। মুহূর্তেই সেই বুলেটে নিঃশেষ হয় তার জীবন।


তাদের কার্যক্রমের বিষয়ে জানতে প্রশ্ন শেষ করার আগেই উচ্ছ্বাস নিয়ে বলে উঠলেন, দেশটা আমাদের সবার ভাই। দেশ যেহেতু আমরা স্বাধীন করেছি সেহেতু এ দেশের প্রতিটি স্থাপনা রক্ষা ও এসবের সৌন্দর্য রক্ষার দায়িত্বও আমাদের। এখন থেকে আগের সবকিছু ভুলে আমাদের নয়া উম্মাদনায় দেশ গড়তে হবে। দেশের হয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যেতে হবে।


আসলাম নামের এক শিক্ষার্থী ভোরের আকাশকে বলেন, এতদিন খাতায় অঙ্কন করেছি। আজ শহরের দেয়ালে করছি তাও আবার দ্বিতীয় স্বাধীনতার কাজ। দেশের স্বার্থে কাজ করতে পেরে নিজেদের ধন্য মনে করছি।


শিক্ষার্থী শারমিন খাতুন ভোরের আকাশকে বলেন, সারাদেশের সাথে সমন্বয় করে শান্তিপূর্ণভাবে সিরাজগঞ্জে আমরা গ্রাফিতি ও দেয়াল লিখনের কাজ করছি। এখানে বর্তমান পরিস্থিতিতে আমার ভাইদের ওপর যে নির্যাতন করা হচ্ছে সেই বিষয়ে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে।


কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলতে তারা ভোরের আকাশকে বলেন, আমরা দেশের কাজে নিজেকে অংশীদার করতে পেরে ভাগ্যবান মনে করছি। সবাই স্বার্থ ত্যাগ করে দেশকে ভালোবাসলে এ দেশ একদিন উন্নত দেশে পরিণত হবে।


পথচারী সিরাজুল ইসলাম ভোরের আকাশকে বলেন, এ যেন নতুন এক দেশকে দেখতে পাচ্ছি। বিশেষ করে আমাদের সিরাজগঞ্জ শহরকে নতুন নতুন লাগছে। তরুণদের হাতে গড়া এ দেশ যেন কোন অপশক্তি গ্রাস করতে না পারে। সবাই এগিয়ে আসলে দেশও এগিয়ে যাবে। জেলার বিভিন্ন স্থানে গ্রাফিতি অঙ্কনের কাজের সাথে যারা জড়িত তাদেরকে সাধুবাদ জানাই।

 

ভোরের আকাশ/মি