logo
আপডেট : ১৫ আগস্ট, ২০২৪ ০৯:২৯
লুট হওয়া অস্ত্রের খোঁজে পুলিশ
গোলাম মুজতবা ধ্রুব

লুট হওয়া অস্ত্রের
খোঁজে পুলিশ

গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর সারাদেশে পুলিশের বিভিন্ন থানা, ফাঁড়ি থেকে কী পরিমাণ অস্ত্র খোয়া গিয়েছে- তার সঠিক পরিসংখ্যান তৈরির কাজ করছে পুলিশ। পাশাপাশি খোয়া যাওয়া অস্ত্র উদ্ধারেও চালাচ্ছে নানা ধরনের তৎপরতা। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশা, খুব শিগগির অস্ত্রগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হবে। আর জনগণের সেবায় আবারো নিজেদের শতভাগ নিয়োজিত করতে পারবেন তারা।
জানা গেছে, ক্ষমতার পালাবদলের পরই সারাদেশে পুলিশের বিভিন্ন থানা, ফাঁড়ি থেকে অস্ত্র লুটের ঘটনা ঘটে। অভিযোগ আছে, দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের নির্দেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলন প্রতিরোধ করতে গিয়ে একদিকে যেমন বহু

পুলিশ সদস্য আহত হন, তেমনি নিহত পুলিশ সদস্যদের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। সার্বিক পরিস্থিতিতে একপর্যায়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে নিজেদের নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়ে ১১ দফা দাবিতে কর্মবিরতিতে যান নন-ক্যাডার পুলিশ সদস্যরা। পরে সরকারের পক্ষ থেকে মতবিনিময় করে তাদের কাজে ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়ার পর তারা ধীরে ধীরে দায়িত্বে ফিরছেন।

রাজধানীর বিভিন্ন থানা ঘুরে গত কয়েকদিনে দেখা গেছে, ধীরে ধীরে সরব হয়ে উঠছে থানাগুলো। আগের মতো দলীয় নেতাকর্মীদের ভিড় কিংবা হৈ চৈ না থাকলেও সাধারণ মানুষ তাদের নানা ধরনের সুবিধা-অসুবিধার কথা পুলিশকে জানাতে থানাতে হাজির হচ্ছেন। দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তারাও সবটুকু সামর্থ্য দিয়ে জনগণকে সর্Ÿোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে অনেক থানা থেকে এখনো খোয়া যাওয়া অস্ত্র উদ্ধার না হওয়ায় পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে কিছুটা শঙ্কাও রয়েছে।

থানা পুলিশের দায়িত্বে থাকা একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভোরের আকাশকে বলেন, পুলিশের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে গেলে খোয়া যাওয়া অস্ত্রগুলো উদ্ধার করা খুব জরুরি। তাহলে অপরাধ দমনে তাদের কাজ করা অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে। তাছাড়া এখন বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে যে ডাকাতির ভয়ভীতি তৈরি হয়েছে- সেগুলো মোকাবেলা করতে হলেও জরুরিভিত্তিতে খোয়া যাওয়া অস্ত্রগুলো উদ্ধার দরকার।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, খোয়া যাওয়া অস্ত্র উদ্ধারের জন্য বিভিন্নভাবে তৎপরতা চালাচ্ছেন তারা। নানাভাবে নানা ধরনের মানুষের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করে তাদের আহ্বান জানাচ্ছেন, কেউ থানা থেকে অস্ত্র নিয়ে থাকলে তারা যেন সেগুলো যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে ফেরত দিয়ে যান। তারই অংশ হিসেবে কেউ কেউ নিজেরাই উৎসাহী হয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের কাছে তাদের সঙ্গে থাকা অস্ত্র ফেরত দিয়ে যাচ্ছেন। তাছাড়া কারো কাছে অস্ত্র থাকার তথ্য থাকলে এবং সেটি কেউ ফেরত দিতে না চাইলেও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে বলেও জানান কর্মকর্তারা।

গতকাল বুধবার র‌্যাব ও পুলিশ সদর দফতর আলাদাভাবে থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারের কথা সাংবাদিকদের জানান। র‌্যাব সদর দফতর থেকে বুধবার জানানো হয়, পুলিশের বিভিন্ন থানা, ফাঁড়ি থেকে লুট হওয়া ৯৭টি অস্ত্র, সাড়ে ছয় হাজার গুলি ও গ্রেনেড উদ্ধার করেছে র‌্যাব। তাদের সদর দফতর থেকে পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়, র‌্যাব-৭ এর সদস্যরা ৩৫টি অস্ত্র, ২৭৫টি গুলি, ৮টি সাউন্ড গ্রেনেড ও ৫টি ম্যাগজিন উদ্ধার করেছে। র‌্যাব-১০ উদ্ধার করেছে ৯টি অস্ত্র, ৬৬১ গুলি, ৯টি সাউন্ড গ্রেনেড ও মাল্টিটিয়ার গ্রেনেড এবং ১০টি ম্যাগজিন। আর ১০টি অস্ত্র, ৭৭টি গুলি, ৪টি সাউন্ড গ্রেনেড, ২টি ম্যাগজিন উদ্ধার করেছে র‌্যাব-১১। এছাড়া র‌্যাব-১২ এর সদস্যরা ৪৩টি অস্ত্র, ৫,৫৫৯টি গুলি ও ১১টি ম্যাগজিন উদ্ধার করেছে।

গতকাল বুধবার পুলিশ সদর দফতর থেকে জানানো হয়েছে, সম্প্রতি লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ হতে বিভিন্ন ধরনের ৩০৯টি অস্ত্র, ৬ হাজার ২৫৮ রাউন্ড গুলি, ৩১৮ টিয়ার গ্যাস সেল, ২টি টিয়ার গ্যাস গ্রেনেড ও ৯টি সাউন্ড গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশ সদর দফতরের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের এআইজি ইনামুল হক সাগর ভোরের আকাশকে জানান, কি পরিমাণ অস্ত্র লুট হয়েছে তার সঠিক সংখ্যা এখনো বের করা যায়নি। তবে সংখ্যাটি বের করতে পুলিশ কাজ করছে। এরই মধ্যে অস্ত্র উদ্ধার হওয়া শুরু হয়েছে। খুব শীঘ্রই লুট হওয়া অস্ত্রগুলো উদ্ধার করা যাবে বলেও আশা করা যেতে পারে।

 

ভোরের আকাশ/মি