১৫ আগস্ট মঙ্গলবার ২০২৪ অন্যায়, দুর্নীতি এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করে যে সকল বীর শহীদ ছাত্র-জনতা তাদের বুকের তাজা রক্তের বিনিমিয়ে বাংলার ইতিহাসের নিকৃষ্টতম স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় বারের মতো স্বাধীন করেছেন তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছেন, প্রতিষ্ঠানটির সিবিএ নেতা ও সভাপতি মাহমুদ হাসান, সাধারণ সম্পাদক সনিজত চক্রবর্তী এবং প্রধান উপদেষ্টা রফিকুল ইসলামসহ সকল ভুক্তভোগীরা।
প্রতিষ্ঠানটির সিবিএ নেতা এবং সভাপতি মাহমুদ হাসান ও সাধারণ সম্পাদক সনিজত চক্রবর্তী, ৩৮০ জন শ্রমিকের পক্ষে ১৩ আগস্ট মঙ্গলবার, জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, আমরা স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার দোসর এবং তার নানাবিধ অপকর্মের দীর্ঘ দিনের সঙ্গী ও পৃষ্টপোষক সালমান এফ রহমান ওরফে দরবেশ বাবার মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সাইনোভিয়া ফার্মা পিএলসি এর ৩৮০ জন নিগৃহীত এবং সর্বাপেক্ষা বঞ্চিত শ্রমিক-কর্মচারীবৃন্দ।
আজ অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হৃদয়ে পেটের তাড়নায় এবং পরিবারসহ সদ্য স্বাধীন দেশে প্রাপ্য অধিকারসহ বেঁচে থাকার প্রয়োজনে আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি।
আপনারা অবগত আছেন যে, সদ্য বিদায়ী স্বৈরশাসক কিভাবে আইনি কাঠামোর অপপ্রয়োগ করে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে, একটি ভিত্তিহীন মামলায় শাস্তি দিয়েছিল। যেখানে তিনি তার শ্রমিক-কর্মচারীদেরকে বাংলার ইতিহাসে সর্বোচ্চ পরিমাণ সুবিধা এবং মুনাফার অংশ প্রদান করেছিলেন। অন্যদিকে, দরবেশ বাবা ২০২১ সালে দেশের স্বনামধন্য বহুজাতিক ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি সানোফি বাংলাদেশ লিমিটেড (বর্তমানে সাইনোভিয়া ফার্মা পিএলসি) এর মালিকানা ও কর্তৃত্ব ক্রয় করে স্বৈরাচারী ক্ষমতার ব্যবহার এর মাধ্যমে আমাদের ৩৮০ জন শ্রমিক কর্মচারীকে বিগত জানুয়ারি, ২০২২ থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত (দীর্ঘ ৩১ মাস) সম্পূর্ণ বে-আইনিভাবে প্রাপ্য বেতন, ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাদি থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে।
এ বিষয়ে দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের মহামান্য আপিল বিভাগ অত্র শ্রমিক- কর্মচারীদেরকে চাকরিচ্যুত না করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করিলেও তা কখনই দরবেশ বাবার জন্য বাধ্যকর হয়নি। তারা উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে রিভিউ এর আবেদন করে ব্যর্থ হলেও উক্ত আদেশ প্রতিপালনের কোনোরূপ প্রয়োজনীয়তা তারা অনুভাব করেনি। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের উক্ত রায় ও আদেশের প্রতি দিনের পর দিন বৃদ্ধাংগুলি দেখিয়ে অত্র শ্রমিক কর্মচারীদের এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিয়েছে ঐ তথাকথিত দরবেশ বাবা ও তার দোসররা।
তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের একটি দ্বৈত বেঞ্চ এ শ্রমিক-কর্মচারীদের দ্বারা গঠিত ট্রেড ইউনিয়নের (সানোফি বাংলাদেশ লিমিটেড ওয়ার্কার্স- এমপ্লয়ীজ অ্যাসোসিয়েশন,বি-২২০৭) কার্যক্রমের বৈধতা দিয়েছেন এবং উক্ত ট্রেড ইউনিয়ন কর্তৃক দায়েরকৃত অপর একটি মামলায় সিবিএ নির্বাচন করার জন্য শ্রম মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মহোদয়কে নির্দেশনা দিয়েছেন। বিগত প্রায় দেড় বছর এ মামলা দুটির দীর্ঘ শুনানিঅন্তে রায় ও আদেশ ঘোষণার পর রায়ের কপি হাতে আসার আগেই সদ্য বিতাড়িত স্বৈরশাসকের তোষামোদী এক বিচারপতি মামলার বিষয়বস্তুর উপর স্থিতি অবস্থা বজায় রাখার নির্দেশনা প্রদান করেন।
উক্ত অবস্থাধীনে ৩৮০ জন শ্রমিক-কর্মচারী দীর্ঘ ৩১ মাস যাবৎ সকল প্রকার বেতন-ভাতাদি থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে এবং আজ তারা পরিবার-পরিজনসহ অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছে। বর্তমান সরকারের কাছে বেক্সিমকোর নিয়ন্ত্রণাধীন সাইনোভিয়া ফার্মার অত্র ৩৮০ জন শ্রমিক কর্মচারীর একটাই দাবি তাদের পক্ষে যেন ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং দরবেশ বাবা কর্তৃক অনৈতিক উপায়ে সানোফিকে দখল করার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলকে অনুরোধ জানাচ্ছি।
সানোফি বাংলাদেশ লিমিটেড এর নির্যাতিত শ্রমিক কর্মচারীরা বিগত ১২/০৮/২০২৪ তারিখ সকালে সেগুনবাগিচাস্থিত প্রধান কার্যালয়ের সামনে ন্যায় বিচারের জন্য এক গণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করার মধ্য দিয়ে বিগত তিন বছর যাবৎ তাদের সাথে ঘটে যাওয়া অধ্যায়গুলো তুলে ধরেন এবং তার যথাযথ প্রতিকার প্রত্যাশা করেন, কিন্তু অদ্যাবধি কোনো প্রকার সুবিচার এবং বৈষম্যহীন চাকরির নিশ্চয়তা তারা এখনও পায়নি।
এমতাবস্থায়, আমরা সাংবাদিক ভাইদের অনুরোধ করবো আপনারা আপনাদের লেখনী ও মিডিয়ার মাধ্যমে স্বৈরচারী ক্ষমতার যাতাকলে পিষ্ট নিপীড়িত ও বৈষম্যের শিকার অত্র প্রতিষ্ঠানের ৩৮০ জন শ্রমিক-কর্মচারীর দীর্ঘ ৩১ মাস যাবৎ প্রাপ্য বেতন ভাতাদি থেকে বঞ্চিত হওয়ার বিষয়টি যথাযথ গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরবেন। এ বিষয়ে আমরা আপনাদেরকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে সর্বদা তৎপর থাকবো।
উপস্থিত সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি সংবাদ সম্মেলন শেষ করেন।
ভোরের আকাশ/ সু