কোট সংস্কার আন্দোলন এবং পরবর্তী সময়ে সরকার পতনের আন্দোলনে যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে; তার নিরপেক্ষ ও স্বাধীন তদন্তের জন্য আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘ থেকে একটি প্রতিনিধি দল আসবে। তারা তদন্তের পর দায়বদ্ধতা নিশ্চিতে একটি পথনির্দেশিকা দেবেন বলেও জানিয়েছেন জাতিসংঘ আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস। গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠকের পরে তিনি সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
গোয়েন লুইস বলেন, তারা বাংলাদেশে আসার জন্য টিকিট করে ফেলেছেন এবং আগামী সপ্তাহে আসবেন। এই প্রতিনিধি দল প্রাথমিকভাবে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিংয়ের কাজটি করবে। তাদের কাজের পরিধি, টার্মস অব রেফারেন্স, কত সময় কাজ করবে; সেটি নিয়ে এখনও কাজ চলছে। কিন্তু আমরা কাজ করতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভ্যন্তরীণ যে তদন্ত প্রক্রিয়া (বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি) ছিল, সেটিতে জাতিসংঘের তদন্ত দলের অন্তর্ভুক্তি চেয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে ভিন্ন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ওই সময়ে জাতিসংঘ সেটি মেনে নেয়নি। এখন যে তদন্ত দল আসবে, সেটির নেতৃত্ব দেবে জাতিসংঘ এবং সেটি নিরপেক্ষ হবে। এর বিশ্বাসযোগ্য থাকবে এবং এটি দায়বদ্ধতার একটি পথনির্দেশিকা দেবে।
তদন্ত দলের সমুদয় খরচ জাতিসংঘ বহন করবে জানিয়ে তিনি বলেন, তারা জেনেভা থেকে আসবেন। বাংলাদেশে যারা রয়েছেন, তারা এক্সটার্নাল দল হিসেবে কাজ করবেন। যখন সরকারের সঙ্গে তার কাজ করা কাঠামোর বিষয়টি চূড়ান্ত হবে, তখন বিশেষজ্ঞ দল বাংলাদেশে এসে কাজে নেতৃত্ব দেবেন। তারা স্বাধীনভাবে কাজ করবেন।
কারিগরি দলের টার্মস অব রেফারেন্সের বিষয়ে তিনি বলেন, এটি এখনও প্রস্তুত হয়নি এবং এটি নিয়ে কাজ চলছে। এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশের সরকার কী চায় এবং কী ধরনের টেকনিক্যাল সহায়তার প্রয়োজন হবে। কাজেই জটিল কিছু বিষয় এখানে রয়েছে। এটি আগামী কয়েক সপ্তাহ ধরে হবে এবং এটি শিগগির হবে। তারপরে সিনিয়র যে দলটি আসবে, তারা সিদ্ধান্ত নেবে।
সামনের দিনগুলোতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে অগ্রাধিকারগুলো নির্ধারণ করবে, সেগুলোতে একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে জাতিসংঘ সম্মত রয়েছে বলেও জানান গোয়েন লুইস। তিনি বলেন, আমরা যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে একমত হয়েছি সেগুলো হচ্ছে বাংলাদেশের যুব সম্প্রদায়কে মানবাধিকার সম্প্রসারণে সহায়তা করা এবং তদন্ত কাজে সহায়তা করা, যেটিতে সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস গত সন্ধ্যায় একমত হয়েছেন।
বাংলাদেশে ১৫টি জাতিসংঘ সংস্থা উন্নয়ন ও মানবিক সহায়তার কাজ করছে এবং তারা তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী সহায়তা করবে জানিয়ে তিনি বলেন, অর্থনীতি একটি অগ্রাধিকার বিষয়ে এবং এক্ষেত্রে জাতিসংঘ কিভাবে সহায়তা করতে পারে সেটি নিয়ে আলোচনা করেছি। এছাড়া রোহিঙ্গা, বন্যা সহায়তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যাবেন অর্ন্তর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। এ বিষয়ে গোয়েন লুইস বলেন, সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যখন ড. ইউনূস যাবেন, তখন তাকে আমরা কীভাবে সহায়তা করতে পারি; সেটি নিয়েও আমাদের চিন্তা করতে হবে।
বর্তমানে মিয়ানমারে যা হচ্ছে, সেটি নিয়ে সবার উদ্বেগ আছে জানিয়ে গোয়েন লুইস বলেন, আমরা জানি সংঘাতের সঙ্গে সঙ্গে আরও মানুষ বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করতে চাইছে। অবশ্যই এই সরকারের প্রথম অগ্রাধিকার হচ্ছে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন। তবে মিয়ানমারে যে অবস্থা রয়েছে সেটি প্রত্যাবাসনে একটি বড় বাধা। আমরা মিয়ানমারের বিশেষ দূতের সঙ্গে কাজ করার বিষয়ে একমত হয়েছি।
ভোরের আকাশ/মি