সারাদেশে যখন উত্তাল বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে। ঠিক এই সময়ে আন্দোলনে যোগ দেন ঢাকায় গার্মেন্টসের কর্মরত নাজমুলও। আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে আহত হন নাজমুল। এরপর তাকে একটি হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে নাজমুল।
নাজমুল হোসেন (২৫) বাড়ি গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার কামারপাড়া ইউনিয়নের নুরপুর গ্রামে। অভাব টানাটানি মধ্যে দিয়ে বেড়া ওঠা তার। নাজমুলের বাবা রিকশাচালক ছিলেন। বছর খানেক আগে তিনি মারা যান। মা গোলেনুর বেগম সংসার চালাতে হিমসিম খেয়ে পড়েন। এ পরিস্থিতিতে সংসারে হাল ধরেন নাজমুল। পাড়ি দেন ইট পাথরের শহর ঢাকায়। শুরু করেন গার্মেন্টসের চাকুরী। কিন্তু সে চাকুরীর কপালে আর থাই হলো না নাজমুলের। নাজমুলের মৃত্যুতে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল মা গোলেনুর বেগম স্বপ্ন।
সরেজমিনে (১৭ আগস্ট) শনিবার খোঁজ নিতে ওই বাড়িতে যাওয়া হয়। এসে দেখা যায় নাজমুলের কবর পাশে দাঁড়িয়ে অঝড়ে কাঁদছেন মা গোলেনুর। ছেলেহারা শোক আর সংসার চালানোর চিন্তায় যেনো আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে ওঠছে তার। কান্নায় মুহুর্তে মুহুর্তে মুর্ছে যাচ্ছেন। কোনো ক্রমেই থামাছে না এই মায়ের আর্তনাদ। এমনভাবে ছেলের লাশ দেখতে হবে তা কখনো কল্পনা করতে পরেননি মা গোলেনুর।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, জীবিকার তাগিদে ঢাকার আশুলিয়া এলাকায় একটি গার্মেন্টেসে চাকুরী করছিলেন নাজমুল হোসেন। সারাদেশ যখন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে উত্তাল, তখন নাজমুল হোসেনও এই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এরই মধ্যে গত ৪ আগস্ট আশুলিয়ার বাইপেল এলাকায় আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হয়। সেই গুলি ঢোকে পেটের ভেতর। এসময় কয়েকজন শিক্ষার্থী তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করায়।
সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার (৯ আগস্ট) সন্ধ্যার পর মারা যায় নাজমুল। এরপর ধারদেনা করে তার লাশ গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। শনিবার (১০ আগস্ট) সকালে স্থানীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
এরপর সোমবার (১২ আগস্ট) গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সভাপতি ডা. মইনুল হাসান সাদিক শোকাহত পরিবারে গিয়ে আর্থিক সহযোগিতা করেন। এই টাকা দিয়ে মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) শহীদ নাজমুল হোসেনের রুহের মাগফেরাতের জন্য দোয়া-মাহফিলের আয়োজন করে স্বজনরা।
নিহত নাজমুল হোসেনের মা গোলেনুর বেগম কান্নাজড়ি কণ্ঠে বলেন, আমার ৪ শতক বসতভিটা ছাড়া আর কোন সহায় সম্বল নেই। একমাত্র ছেলেই নাজমুল। পিতৃহারা দুই মেয়েকে অতিকষ্টে বিয়ে দিয়েছি। স্বপ্ন ছিলো ছেলেটা চাকরি করে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরাবে। এরই মধ্যে ঢাকার আশুলিয়ার বাইপেল এলাকায় বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে গিয়ে আমার ছেলে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। এখন আমার সব স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেলো। এখন কীভাবে জীবিকা নির্বাহ করবো, সেই চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাটছে।
তিনি আরও বলেন- এই আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের রাষ্ট্রীয় মার্যাদা দিয়েছে। এছাড়া পরিবারে গিয়ে রাজনৈতিক নেতাকর্মী, অন্তর্বতীকালিন সরকার ও বিত্তশীল ব্যক্তিরা খোঁজ-খবর নেওয়াসহ নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। কিন্তু আমার পরিবারে পাশে এখনো দাঁড়ায়নি কেউ।
এ ব্যপারে গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মইনুল হাসান সাদিক বলেন, নিহত নাজমুল হোসেনের পরিবারে গিয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে সহযোগিতা করেছি। ভবিষ্যতেও পরিবারটির প্রতি খেয়াল রাখা হবে।
ভোরের আকাশ/ সু