logo
আপডেট : ১৭ আগস্ট, ২০২৪ ১৭:১০
ময়মনসিংহে মেয়র, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা আত্মগোপনে 
জনপ্রতিনিধিরা কাজ চালাতে হিমশিম
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

ময়মনসিংহে মেয়র, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা আত্মগোপনে 

ময়মনসিংহে মেয়র, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা আত্মগোপনে থাকায় দৈনন্দিন কাজ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন নির্বাহী কর্মকর্তারা। একদিকে রাজস্ব আদায় হচ্ছে না সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদে, অন্যদিকে ঠিকাদারদের টাকা দিতে না পারায় উন্নয়নমূলক সব ধরনের কাজ বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কর্মকান্ড। দ্রুত এর উন্নতি চান নির্বাহী কর্মকর্তারা।

গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র, জেলার বিভিন্ন পৌরসভার মেয়র, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। এমন অবস্থায় জনপ্রতিনিধিরা জীবন বাঁচাতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন।

জানা গেছে, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ জেলার সবগুলো পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং বেশিরভাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আত্মগোপনে রয়েছেন। এতে দৈনন্দিন কাজ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন নির্বাহী কর্মকর্তারা।

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটুর বাড়িতে হামলা ও লুট করা রাজস্ব আদায় না হওয়ায় ঠিকাদারের বিল পরিশোধ করা যাচ্ছে না। স্থবিরতা নেমে এসেছে বেশিরভাগ উন্নয়ন প্রকল্পে হয়। জীবন বাঁচাতে ওই দিন থেকেই তিনি আত্মগোপনে চলে যান। সিটি করপোরেশনের ৩৩টি ওয়ার্ডের অধিকাংশ কাউন্সিলররাও চলে যান আত্মগোপনে। তবে এখন কাউন্সিলররা জনসম্মুখে আসা শুরু করেছেন বলে নির্বাহী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা, ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ি, ময়লার গাড়িসহ পাঁচটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। সিটি করপোরেশনের ছয়টি কাউন্সিলর অফিস আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ভাঙচুর করা হয় টাউন হলের বিভিন্ন স্থাপনা।

মুক্তাগাছা পৌরসভার মেয়র বিল্লাল হোসেন সরকারের বাড়িতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আগুন দেওয়া হয়েছে তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও। তার জামাতা জেলা পরিষদের সদস্য মাহবুবুল আলম মনির বাসায় আগুন দেওয়া হয়েছে। আগুন দেওয়া হয়েছে তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও। লুট করা হয়েছে একই উপজেলার বাঁশাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উজ্জল কুমার চন্দের দুটি অটো রাইস মিলের প্রায় ১০ হাজার বস্তা চাল। আগুন দেওয়া হয়েছে একই উপজেলার ঘোগা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শরীফ আহমেদের বাড়িতে। এভাবে জেলার প্রতিটি উপজেলায় পৌরসভার মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। দুর্বৃত্তদের ভয়ে জনপ্রতিনিধিরা জীবন বাঁচাতে আত্মগোপনে রয়েছেন। এতে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রতিটি অফিসে।

এদিকে জনপ্রতিনিধিরা আত্মগোপনে থাকায় বিভিন্ন কাজের বিল তুলতে পারছেন না ঠিকাদাররা। ফলে উন্নয়নমূলক কাজগুলো বন্ধ রয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শাপলা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী এবিএম জহিরুল হক বলেন, সড়কের কাজ করে রেখেছেন, কিন্তু টাকা পাচ্ছেন না। টাকা না পাওয়ায় তারা চরম সংকটে পড়েছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে তারা মহাবিপদে পড়বেন।

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী বলেন, 'মেয়র অনুপস্থিত থাকায় কাজ চালাতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। এ ছাড়া মানুষের ভেতরে অস্থিরতা থাকায় রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। আর ব্যাংক থেকে দুই লাখ টাকার বেশি তুলতে না পারায় ঠিকাদারদের বিল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এতে সব ধরনের উন্নয়মূলক কাজ বন্ধ রয়েছে।' অন্যদিকে সিটি করপোরেশনের কয়েকটি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ায় তারা জটিলতার মধ্যে রয়েছেন।

একই কথা বলেন মুক্তাগাছা পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম আহমেদ। তিনি বলেন, মেয়র না থাকায় তাদের কাজ চালিয়ে যেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

ভোরের আকাশ/ সু