গণপূর্ত অধিদপ্তরের (পিডব্লিউডি) প্রধান কার্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির এক কর্মচারীর চারটি ফ্ল্যাটের সন্ধান পাওয়া গেছে। রাজধানীর খিলগাঁওয়ের রিয়াজবাগ এলাকার একটি বহুতল ভবনের চারটি ফ্ল্যাটের মালিক তিনি। বিলাস-বহুল প্রতিটি ফ্ল্যাটের বাজারমূল্য প্রায় তিন কোটি টাকা। এই হিসেবে চারটি ফ্ল্যাটের মূল্য ১২ কোটি টাকা। ওই কর্মচারী নাম মো. ফয়জুল কবির শিহাব। এরই মধ্যে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত রয়েছেন শিহাব। বর্তমানে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সংস্থাপন ও সমন্বয়) মো. শহিদুল আলমের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। তবে নিজের নামে ফ্ল্যাট থাকার কথা অস্বীকার করেছেন তিনি।
পিডব্লিউডির একাধিক কর্মচারীর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, শিহাব গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঢাকার মিরপুর সার্কেলে কর্মরত থাকা অবস্থাতেই নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। পরবর্তী সময়ে অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর ব্যক্তিগত সহকারীর দায়িত্ব পেয়ে ক্ষমতাধর হয়ে ওঠেন। সেই সঙ্গে তিনি হাতে পেয়ে যান ‘আলাদিনের চেরাগ’। দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত অর্থে অবৈধভাবে সম্পদ গড়ে তুলছেন তিনি। বিষয়টি অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে জানাজানি হয়েছে। এরপর তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে গণপূর্ত অধিদপ্তর।
সূত্র জানায়, রাজধানীর খিলগাঁও থানার রিয়াজবাগ মহল্লায় একটি বহুতল ভবনে শিহাবের চারটি ফ্ল্যাট রয়েছে। এলাকাবাসীর কাছে ভবনটি ‘গণপূর্ত ভবন’ নামেই পরিচিত। হাফিজুর রহমান শফিক নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, গণপূর্ত অধিদপ্তরের বিভিন্ন শ্রেণির কর্মচারীরা এই ভবনের সব ফ্লাটের মালিক। সেখানে অন্য কোনো পেশার লোকের ফ্ল্যাট কেনার সুযোগ নেই। তবে ভাড়াটিয়া হিসাবে বসবাসের সুযোগ রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সাড়ে তিন শতাংশ জমির ওপর গড়ে তোলা হয়েছে একটি ছয়তলা ভবন। গণপূর্তের তৃতীয় শ্রেণির কয়েকজন কর্মচারী মিলে ভবনটি নির্মাণ করেছেন। এই ভবনের তিনটি ফ্লোরের চারটি ফ্ল্যাটের মালিক শিহাবের পরিবার। ফ্ল্যাটগুলো চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠতলায় অবস্থিত। এরমধ্যে ৬ তলায় দুটি এবং চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় একটি করে ফ্ল্যাট তাদের। সবগুলো ফ্ল্যাটই অন্য ব্যক্তিদের নামে ভাড়া দেওয়া। এগুলো থেকে প্রতি মাসে প্রায় ৭০ হাজার টাকা ভাড়া আদায় হয়। একই ভবনে শিহাব নিজেও বসবাস করেন। তবে তিনি অন্যের ফ্ল্যাটে ভাড়ায় থাকেন। এমনকি ফ্ল্যাটগুলোর দলিলের নিবন্ধনও নিজের নামে করাননি। দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) অন্যান্য সংস্থার চোখ ফাঁকি দিতে স্বজনদের নামে নিবন্ধন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী ফয়জুল কবির শিহাবের বাবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। আর শিহাবের ভাই আমিনুলও গণপূর্তের একজন কর্মচারী (মুদ্রাক্ষরিক)। কথিত গণপূর্ত ভবনে তিনিও সপরিবারে বসবাস করেন।
নিজের নামে চারটি ফ্ল্যাট থাকা প্রসঙ্গে ফয়জুল কবির শিহাব বলেন, এই সম্পত্তি তার নয়। এসব ফ্ল্যাটের মালিকানার কোথাও তার নাম নেই। তিনি দাবি করেন, তিনি একজন ক্ষুদ্র কর্মচারী। তাকে নিয়ে এমন প্রতিবেদন করে কোনো লাভ হবে না। কারণ তিনি কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নন।
এ বিষয়ে গণপূর্তের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সংস্থাপন ও সমন্বয়) মো. শহিদুল আলম বলেন, শিহাবের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভোরের আকাশ/মি