গ্যাসের একটি পুনসংযোগ দেওয়ার বিষয়ে হাইকোর্টের আদেশ মানছে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে তারা আপিল করলেও শুনানিতে অংশ নিচ্ছেন না। ফলে সংযোগ না পেয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন ভুক্ত আব্দুর রহিম।
জানা গেছে, ভুক্তভোগী আব্দুর রহিম একজন সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট। তিতাসের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও তিনি সংযোগ পাননি। পরে তিনি হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। যার স্মারক নং ২৮.১৩.০০০০.১৯০.০৬.০০.২৪/১২; তারিখ ২৫.০৪.২৪। আবেদনকারীর গ্রাহক নং ১০৪০৪৫৫৫৯। গত ৩০ মে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হক সংযোগ ফিরিয়ে দেওয়ার আদেশ দেন।
এতে বলা হয়, আবেদনকারীকে পুনরায় আবাসিক গ্যাস সংযোগ কেন দেওয়া হবে না এবং তা জানতে ৪ নং বিবাদীর বিরুদ্ধে রুল নিশি কেন জারি করা হবে না; তা জানাতে হবে। একই সঙ্গে ২ থেকে ৭ নং বিবাদীকে জানাতে হবে এই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। যেহেতু সকল পাওনা পরিশোধ করা হয়েছে; (কপি দেখেছেন আদালত) সেহুতু ২ থেকে ৬ নং আসামিকে নোটিশ পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে পুনরায় গ্যাস সংযোগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হইলো। একই সঙ্গে বাদীকে নিয়মিত গ্যাস বিল পরিশোধ করার নির্দেশ দেওয়া হলো। ৪ সপ্তাহের মধ্যে রিটের শুনানি করা হবে। বাদীকে এই আদেশের কপি রেজিস্ট্রার্ড ডাক যোগে বিবাদীদের কাছে পাঠাতে হবে। এই রিটে ৭ জনকে বিবাদী করা হয়েছিল।
জানা গেছে, এই আদেশের কপি সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের কাছে পৌঁছানো হয়। পরে তারা আপিল করেন। কিন্তু নির্ধারিত দিনে তারা হাজির হননি। আবার পুনরায় সংযোগও দেননি। বাদী আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, যেহেতু বিবাদী শুনানিতে হাজির হননি। সেহুতু আপিল বাতিলের আবেদন করা হবে।
এদিকে, তিতাসের পক্ষে এই মামলা পরিচালনাকারী কোনো আইনজীবীকে পাওয়া যায়নি। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তারা এখনো তিতাসের সঙ্গে আছেন কি না; কিংবা নতুন আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে কি না; তা-ও কেউ জানাতে পারেননি।
জানা গেছে, ভুক্তভোগী আব্দুর রহিম শের-ই-বাংলা নগর আধুনিক প্রেস ক্লাবের সভাপতি। তিনি নিয়মিত বিভিন্ন পত্রিকায় কলাম লিখে থাকেন। তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে তিনি একটি আবেদন করেন। এতে বলা হয়, তিনি রাজধানীর পশ্চিম কাফরুল এলাকার ১৬৭/৩/সি/৬ নং প্লটের বাসিন্দা। বকেয়ার কারণে গত ৩১ জানুয়ারি তিতাস গ্যাস কর্মকর্তা মীর মোহা. শফিকুল ইসলাম তার গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাউজার নিয়ে যান। পরে আলোচনারভিত্তিতে শফিকুল তাকে দুই কিস্তিতে বিল পরিশোধের সুযোগ দেন। সেই মোতাবেক তিনি ৭ ফেব্রুয়ারি প্রথম কিস্তির টাকা পরিশোধ করেন। এ সংক্রান্ত কাগজপত্র শফিকুল ইসলাম রেখে দেন এবং অফিসের খরচ বাবদ ২৫ হাজার টাকা দাবি করেন।
আব্দুর রহিম নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেন এবং তাকে ১০ হাজার টাকা দেন। পরদিন ৮ ফেব্রুয়ারি দুইজন লোক দিয়ে লাইনটি সচল করে দেন শফিকুল ইসলাম। কিন্তু ২২ ফেব্রুয়ারি তিতাসের আরেক কর্মকর্তা শ্যামল কুমার চক্রবর্তী কয়েকজন লোক নিয়ে এসে তার সংযোগটি ফের বিচ্ছিন্ন করেন। এ সময় বাড়ির ভাড়াটিয়ারা বিল পরিশোধের কাগজ দেখালেও তারা কর্ণপাত করেননি। পরে তিনি মিরপুরে তিতাস গ্যাস অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করলে শ্যামল চক্রবর্তী বলেন, তিনি (আব্দুর রহিম) অবৈধ গ্যাস সংযোগ ব্যবহার করছেন। এ সময় তাকে ভয়ভীতি দেখানো ও চাঁদাদাবি করা হয়। পরে তিনি ৬ মার্চ পুরো গ্যাস বিল পরিশোধ করেন। এরপরও সংযোগ না পেয়ে ১০ মার্চ তিনি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে একটি অভিযোগ দেন। ২৫ মার্চ মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয়। সংযোগ পেতে আব্দুর রহিম তিতাস গ্যাসের জেনারেল ম্যানেজার রশিদুল আলমের শরণাপন্ন হন। তিনি ডিজিএম আব্দুল জব্বারকে বিষয়টি দেখার নির্দেশ দেন। তিনি (জব্বার) তাকে পাঠান সেলস বিভাগের ডিজিএম জাহাঙ্গীর আলম মুন্সীর কাছে। এ সময় পুনঃসংযোগের জন্য জাহাঙ্গীর আলম জরিমানা ও ডিমান্ড নোটের জন্য ২৩ হাজার ৩৯২ টাকা জমা দেওয়ার জন্য তাকে একটি চিঠি পাঠান। তিনি ওইদিনই ব্যাংকে ওই টাকা জমা দেন এবং জাহাঙ্গীর আলম মুন্সী বরাবর একটি আবেদন করেন। এ সময় এই কর্মকর্তা বলেন, এই আবেদন তিনি এমডির কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন। কয়েক দিন পর জাহাঙ্গীর আলম একটি চিঠি ইস্যু করেন। এতে বলা হয়, বর্তমান নিয়মানুসারে নতুন সংযোগ দেওয়া সম্ভব নয়।
জানা গেছে, যখন আব্দুর রহিমের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়; ঠিক একই সময় আরও ৮ থেকে ১০টি বাড়ির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে অভিযানিক দল। টাকার বিনিময়ে অনেকের রাউজার গাড়ি থেকে ফেরত দেওয়া হয়। দেওয়া হয় পুনঃসংযোগ। কেবল সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার কারণেই মারপ্যাঁচে ফেলে তার সংযোগটি দেওয়া হচ্ছে না। তিনি বিষয়টি বিবেচনার জন্য এবং দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। অভিযোগের বিষয়ে জানার জন্য শ্যামল কুমার চক্রবর্তীকে কয়েক বার ফোন করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন কল গ্রহণ করেননি।
ভোরের আকাশ/ সু