পাটের সোনালী আঁশ সংগ্রহ করার পরে থাকে পাঠকাঠি। বিশ্বজুড়ে পাট ও পাটজাত দ্রব্য ব্যাপক সমাদৃত। আগে শুধু রান্নার জ্বালানি, ঘড়ের বেড়া হিসাবে ব্যাবহৃত হতো পাঠকাঠি। কিন্তু এখন আর পাঠকাঠি হেলাফেলার দ্রব্য নয়, এটি বিশ্ববাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় বিদেশে রপ্তানি হয় প্রতি বছরেই। মাঠে পাঠকাঠি রোদে শুকাতে দিচ্ছেন কৃষকরা। চলতি মৌসুমে গাইবান্ধায় বাণিজ্যিকভাবে বেড়েছে পাটকাঠির কদর।
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর বৃষ্টির কারণে জেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলে বন্যায় অনেক কৃষকের পাট নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তার কিছু পরে আবার পানি নেমে যাওয়ায় যখন পাট কেটে জাগ দেওয়ার সময়, তখন আবার পর্যাপ্ত পানি না থাকায় মাটি খুঁড়ে পাট জাগ দিতে হয়েছে। এতে নষ্ট হয়েছে পাটের গুণগত মান। ফলে দামও তুলনামূলক কম পেতে হচ্ছে। তবে বাজারে পাট বিক্রি করে কোনো রকমে উৎপাদন খরচ উঠলেও পাটকাঠি বিক্রি করে সে ক্ষতি হয়েছে তা অনেকটা পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন কৃষকরা।
গাইবান্ধা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার ৭টি উপজেলায় এ বছর ১৬ হাজার ২৫৪ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এতে উৎপাদন হয়েছে ১৩ হাজার ৭৯০ হেক্টর। আর বন্যায় নষ্ট হয়ে গিয়েছে ১৪শত ৩ হেক্টর।
সরেজমিনে জেলার সদর উপজেলার ঘাঘোয়া, গিদারী, কামারজানি, মালিবাড়ী, কুপতলা সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর,কঞ্চিবাড়ি, শ্রীপুর, বাবুর বাজার, ছকের বাজার, উত্তর ধুমাইতাড়ি, বেলকা, হরিপুর,কাঁপাশিয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায় পাট ধোঁয়ার পর বেশ যত্নের সঙ্গে পাটকাঠি শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। গ্রামীণ সড়কের পাশে মাইলের পর মাইল জুড়ে চলছে পাটকাঠি শুকানো কাজ।
সদর উপজেলার ঘাঘোয়া ইউনিয়নের তালতলা এলাকার কৃষক জামিল মিয়া বলেন, এ বছর ৪বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। পাট থেকে যে পাটকাঠি পেয়েছি সুন্দরভাবে শুকিয়ে পরিস্কার করে বিক্রি করতে পারলে তা থেকে ১০-১২ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। পাটকাঠি সরাসরি চালকল বা বোর্ড ফ্যাক্টরিতে দিতে পারলে আরো বেশি দামে বিক্রি করা যেতে পারতো। তাহলে আমাদের মতো কৃষকরা আরও পাট চাষে দিন আগ্রহী হয়ে উঠবে।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার উত্তর ধুমাইতাড়ি এলাকার কৃষক জাহিদুল ইসলাম বলেন, এ বছর পাটকাঠির চাহিদা থাকায় ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। পাটকাঠি বিক্রি করে কিছুটা লোকসান পুষিয়ে নেওয়া যায়। পাটকাঠি আগে শুধু জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হলেও বর্তমানে নানামুখী কাজে ব্যবহারের ফলে কৃষকরা বাড়তি লাভবান হচ্ছেন। ইতি মধ্যেই বাড়ি থেকে পাটকাঠি কিনে তা শহরে বিক্রি করতে শুরু করেছেন।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম ভোরের আকাশকে বলেন, গাইবান্ধার সব কয়টি উপজেলাতে কম বেশি পাটের আবাদ হয়েছে। এ জেলার পাট চাষিদের আমরা সব সময় পরামর্শ দিয়ে এসেছি। আমরা চাষিদের সঙ্গে উঠান বৈঠক পথসভা করে যাচ্ছি। প্রাথমিক অবস্থায় তাদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের রপ্তানির জন্য কৃষি বিভাগ থেকে সহযোগিতা করা হবে।
ভোরের আকাশ/ সু