logo
আপডেট : ২৮ আগস্ট, ২০২৪ ১৮:৫৪
ময়মনসিংহে প্রকাশ্যে যুবককে গুলি করা আ'লীগের ক্যাডার রাজিব
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

ময়মনসিংহে প্রকাশ্যে যুবককে গুলি করা আ'লীগের ক্যাডার রাজিব

ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার পর আনন্দ মিছিলে গুলিতে আহত সাবেক ছাত্রদল নেতা আকতার (৪০)। তবে, মামলা হওয়ার পরেও প্রকাশ্যে ঘুরছেন সাবেক আওয়ামীলীগের ক্যাডার মো. রাজিব (৩৬)। ওই ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছিলেন। গুলিবিদ্ধ আকতার পৌর শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের শিলাসী এলাকার মৃত সিরাজ উদ্দিন। তিনি সাবেক ছাত্রদল নেতা।

অস্ত্রধারি রাজিব পৌর শহরের রাঘাইচটি এলাকার আ. মোতালেবের ছেলে। আব্দুল মোতালেব এই মামলার প্রধান আসামী ও তার বড় রাজিব ২ নম্বর এবং ছোট ছেলে রাকিব ৩ নম্বর আসামী।

এ ঘটনায় গত ২২ আগস্ট আহত আকতারের বড় ভাই মো. জয়নাল আবেদীন চাঁনু বাদী হয়ে ১৪ জনের নামে ও অজ্ঞাত ৫০/৬০ জনকে আসামী গফরগাঁও থানায় মামলা দায়ের করেন। এর আগে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার পর পৌর শহরের কলেজ রোড এলাকায় আনন্দ মিছিলে হামলা ও গুলি করার ঘটনা ঘটে।

গফরগাঁও থানার ওসি মো. শাহিনুজ্জামান খান বলেন, মামলা নথিভুক্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মামলার নথির বরাত দিয়ে তিনি বলেন, গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর বিকালের দিকে পৌর শহরের আনন্দ মিছিল করে ছাত্রজনতা। ওই মিছিলে যোগ দেন সাবেক ছাত্রদল নেতা আকতার ও তার সাথে থাকা লোকজন। আনন্দ মিছিলটি পৌর শহরের কলেজ রোড এলাকায় আসতেই মোতালেবের দুই ছেলে রাজিব, রাকিবসহ ৬০ থেকে ৭০ জন আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশিয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আনন্দ মিছিলে হামলা করে। এসময় আনন্দ মিছিলে অংশ ছাত্রজনতাকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করে সন্ত্রাসীরা। এসময় ছাত্রজনতা পালিয়ে যেতে চাইলে সন্ত্রাসী রাজিব প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র উচিয়ে গুলি করে। এতে আকতার গুলিবিদ্ধ হয় ও দুটি গুলি তার ডান হাতের বাহুতে লাগে এবং এ ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হয়।

এমতাবস্থায় হামলাকারি যাওয়ার সময় আকতার ও অন্যান্যদের হত্যার হুমকি দিয়ে চলে যায়। পরে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখান থেকে গুলিবিদ্ধ আকতারকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। পরে সেখানে গুলি বের করে দুই দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কলেজ রোড এলাকায় চারতলা সুরম্য ভবনের মালিক আব্দুল মোতালেব এক সময়ে করাতকলের শ্রমিক ছিলেন। নিজের নষ্ট চরিত্রের কালিমা দিয়ে তিন সন্তানের দুইজনকে একই পথের পথিক হিসেবে তৈরি করেছেন। বড় ছেলে রাজিব ও ছোট ভাই ছেলে রাকিব সাবেক এমপি ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের ক্যাডার হিসেবে চাঁদাবাজি, জমিদখল জড়িত। মাদক ও অস্ত্র ব্যবসা করে বিপুল টাকা সম্পত্তির মালিক হয়েছেন।

সুত্র জানায়, মোতালেব ও দুই সন্তান জমি দখল, চাঁদাবাজি, অস্ত্র, মাদক, চোরাই মোটরসাইকেল বিক্রির বিশাল সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। রাজিব ও রাকিবের ভয়ে কুঁকড়ে থাকত এলাকার মানুষ।

সুত্র জানায়, রাজিব ২০২১ সালে পৌর এলাকায় নিজ বাসভবন মোতালেব প্লাজায় চোরাই মোটরসাইকেল বিক্রির সময় জেলা গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালায়। পরে বেশ কয়েকটি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ।

দুই ভাই পৌর এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। সাবেক এমপি বাবেল অন্যতম ক্যাডার। বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগ-যু্বলীগের নামে এই সন্ত্রাসীরা বিরোধী দলের শত শত নেতাকর্মীর উপর অত্যাচার নির্যাতন, হামলা, মামলা এবং চাঁদাবাজি করেছেন।

অভিযোগ রয়েছে, পৌর এলাকার চর শিলাসী, চর ষোলহাসিয়া ও জন্মেজয় মৌজায় অসংখ্য মানুষের কাছে জাল দলিল করে জমি বিক্রি করেন বাবা-দুই ছেলে।

ভুক্তভোগী জাহাঙ্গীর বলেন, আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে জাল দলিল করে দেয়। এখন সেই জমির ফয়সালা হয়নি, টাকা ফেরত চাইলেই ভয়ভীতি দেখায়। তাদের প্রতারনার ফাঁদে পড়ে নিস্ব হয়েছে অসংখ্য মানুষ।

গুলিবিদ্ধ আক্তার বলেন, গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার মিছিলে প্রকাশ্যে অস্ত্র উচিয়ে গুলি করে। এতে আমার বাম হাতে দুটি গুলি ও আরও একজন গুলিবিদ্ধ হয়। পরে আমাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে গুলি বের করার পরেও দুদিন চিকিৎসাধীন ছিলাম। এ ঘটনায় মামলার পরেও রাজিব প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এতে আমি আমার পরিবার নিরাপত্তা হিনতায় ভুগছে। আমার দাবি রাজিবকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হোক।

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত রাজিবের নাম্বারে একাধিকবার ফোন করলেও সেটি বন্ধ দেখায়।

গফরগাঁও থানার ওসি শাহিনুজ্জামান খান বলেন, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামী রাজিব ও অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

ভোরের আকাশ/ সু