logo
আপডেট : ৩০ আগস্ট, ২০২৪ ১২:১১
প্রসঙ্গ আগামী নির্বাচন
বিএনপির উল্টো সুর জামায়াতের
শিপংকর শীল

বিএনপির উল্টো সুর জামায়াতের

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট ভারতে চলে যান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের চাওয়ায় এর তিন দিন পর নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই ড. ইউনূস রাষ্ট্র সংস্কারের ঘোষণা দেন। সেই অনুযায়ী সর্বোচ্চ বিচারালয় থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায় সর্বত্রই বইছে পরিবর্তনের হাওয়া।

শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বড় বড় পদে থাকা ব্যক্তিদের ইতোমধ্যে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখনও যারা আছেন, ধাপে ধাপে তাদেরও সরানোর প্রক্রিয়া চলছে। এর মধ্যে আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছে আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গটি। বিশেষ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন সভায় আগামী নির্বাচন নিয়ে কথা বলে চলেছেন। বিএনপি নেতারা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চান।

অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেছেন, ‘নির্বাচনের রোডম্যান দিন, রাষ্ট্র সংস্কার করবে নির্বাচিত সরকার।’ কিন্তু বিএনপির দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী জামায়াত ইসলামী নির্বাচন প্রসঙ্গে ভিন্ন সুরে কথা বলছেন। তারা ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারকে সময় দেওয়ার পক্ষে। দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, নির্বাচনের জন্য যৌক্তিক সময় দিতে হবে। সংবিধান, প্রশাসন, বিচার বিভাগ ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির সংস্কার দরকার। বিচার বিভাগকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা বলতে কিছু নেই। এসবের সংস্কারের পরই নির্বাচনের পক্ষে তারা।

নির্বাচন নিয়ে বিএনপি ও জামায়াত ইসলামীর ভিন্ন মতের মধ্যেই গত রোববার জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবনা স্পষ্ট করেছেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘কখন নির্বাচন হবে সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, আমাদের সিদ্ধান্ত নয়। দেশবাসীকে ঠিক করতে হবে আপনারা কখন আমাদের ছেড়ে দেবেন। আমরা ছাত্রদের আহ্বানে এসেছি। তারা আমাদের প্রাথমিক নিয়োগকর্তা। দেশের আপামর জনসাধারণ আমাদের নিয়োগ সমর্থন করেছে। আমরা ক্রমাগতভাবে সবাইকে বিষয়টি স্মরণ করিয়ে যাব যাতে হঠাৎ করে এই প্রশ্ন উত্থাপিত না হয় আমরা কখন যাব। তারা যখন বলবে আমরা চলে যাব।’

নির্বাচনের রোডম্যাপ চায় বিএনপি

নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্রুত আলোচনার ব্যবস্থা করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গত শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ভাসানী অনুসারী পরিষদ আয়োজিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমেদের ৯ম মৃত্যুবার্ষিকীর আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অন্তর্বতী সরকারের কাছে আমাদের অনেক প্রত্যাশা রয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, তারা একটি যুক্তিসংগত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। এই সরকারের প্রতি আমাদের আস্থা আছে, জনগণের আস্থা আছে। তবে অবশ্যই এটা (নির্বাচন) সীমিত সময়ের মধ্যে, একটি যুক্তিসংগত সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত। অন্যথায় ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের অভিষ্ট উদ্দেশ্য সম্পূর্ণভাবে পরাজিত হবে।’

নির্বাচনের পাশাপাশি দ্রুত অন্তর্বতী সরকারকে সংস্কারের রোডম্যাপ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, অন্তর্বর্তী সরকারে যারা কাজ করছেন, তারা সবাই আন্তরিক ও যোগ্য লোক। তবে আমরা চাই, এই কাজ দৃশ্যমান ও স্বচ্ছ হোক। আমরা দেখতে চাই, প্রধান উপদেষ্টা যা করতে চান, তার পরিকল্পনা জনগণের সামনে উপস্থাপন করছেন। তিনি কীভাবে দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের জন্য কাজ করছেন, কীভাবে তিনি প্রয়োজনীয় সংস্কার আনবেন, তার একটি রোডম্যাপ উপস্থাপন করা উচিত।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে রাষ্ট্রীয় সংস্কার করতে হবে। এখন পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এজেন্ডাভিত্তিক কোনো আলোচনা করেনি। কয়েকজন মিলে সংস্কারের উদ্যোগ নিলে তা কার্যকর হবে না। কারণ, এ জন্য জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি দরকার। আমি বিশ্বাস করি না, কিছু লোক সংস্কার করতে পারে। আমি বিশ্বাস করি, জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সংস্কার হওয়া উচিত।’

বিগত সরকারের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, যেসব সচিব তাদের অন্যায় কাজে সহযোগিতা করে এসেছেন, তাদের আর স্বপদে দেখতে চায় না জনগণ। এ সময় গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগের আহ্বানও জানান তিনি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমি পুনর্ব্যক্ত করতে চাই, আমরা আশা করি, এই অন্তর্বর্তী সরকার অবশ্যই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচনের আলোচনায় গতি বৃদ্ধি এবং জনগণের জরুরি প্রয়োজন মেটাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার বাস্তবায়নে কাজ করবে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি নির্বাচনের ওপর জোর দিতে চাই। যেসব সংস্কার প্রয়োজন, তার জন্য নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের সংস্কার কীভাবে আসবে? একটি নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে এসব সংস্কার আসবে। এর বিকল্প কিছু নেই।’

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে রাশিয়ান রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মান্টিটস্কির সঙ্গে বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীও একটি যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছেন। তিনি, বিএনপি এ ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকারকে কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেননি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি তাদের (বিএনপি) পূর্ণ সমর্থনের রয়েছে।

নির্বাচনের নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে আমীর খসরু বলেন, রাশিয়ান রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মান্টিটস্কি নির্বাচনের ‘টাইম ফ্রেম জানতে চেয়েছে আমরা কোনো টাইম ফ্রেম বলিনি। আমরা বলেছি, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং তাদের কার্যক্রমে আমরা পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যে রিফর্মগুলো নিয়ে আলোচনা হবে, সেগুলো তাড়াতাড়ি করে একটা নির্ধারিত সময়ে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।

সরকারকে সময় দিতে চায় জামায়াত

গত মঙ্গলবার রাজধানীর পল্টনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের কার্যালয়ে ভারতীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সংগঠন ইমক্যাবের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন। এ সঙ্গে জামায়াতের আমীর বলেন, গণঅভ্যুত্থানে শত শত শহীদ হাত পা হারিয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন আহতরা। বন্যায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন অনেকে। এ সময় রাজনৈতিক দলের কোনো কোনো নেতা জনগণের পাশে না দাঁড়িয়ে নির্বাচন নিয়ে বারবার কথা বলছেন।

জামায়াত আমীর বলেন, যারা রাজনীতি করেন মানুষের মনের ভাষা তাদের পড়তে হবে। মনের সাহিত্য পড়তে হবে। যদি আমরা না পারি আমরাও ব্যর্থ। আল্লাহর শুকরিয়া, ওই ধরনের বাড়াবাড়ির মধ্যে আমরা যাইনি।

তিনি বলেন, একদিকে শহীদ পরিবারগুলো আহাজারি করছে। আহতরা হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন। ইতোমধ্যে বন্যার ভয়াবহতা শুরু হয়েছে। যারা জনগণের জন্য রাজনীতি করে তাদের উচিত এ বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানো। এ সময়টা ওখানে না দাঁড়িয়ে নির্বাচন নির্বাচন জিকির করলে জাতি এটাকে কবুল করবে? তাদের তো নির্বাচন লাগেও না। আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছরে যা যা দখলে নিয়েছিল সেই ফুটপাত থেকে শুরু করে তারা (বিএনপি) সবকিছু দখলে নিয়েছে।’

তিনি বলেন, অনেক রক্তের বিনিময়ে আমরা এই স্বাধীনতা পেয়েছি। কিন্তু যারা সীমা লঙ্ঘন করছে তারা এই স্বাধীনতার শত্রু। কেউ তাদেরকে সহিংসতা করার সুযোগ দেবেন না। কারো সম্পদ নিয়ে টানাটানি কাপুরুষতা। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হলে সব অপরাধীর বিচার হবে। কেউ পার পাবে না। রাজনীতিতে ভাগাভাগি নয়। এই মুহূর্তে আমরা চারটা কাজ করছি। প্রথম কাজ হচ্ছে সমাজের শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। দ্বিতীয় কাজ হচ্ছে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের পরিবারের দোয়া নেওয়া। তৃতীয় কাজ হচ্ছে যারা আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন তাদের পাশে দাঁড়ানো। চতুর্থ কাজ হচ্ছে- আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া।

নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা অর্পণ জনগণের প্রত্যাশা, মত সুজনের

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা রাষ্ট্র ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করা এবং নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা অর্পণ করা উচিত বলে মত দিয়েছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। রাষ্ট্র সংস্কারের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার বলে মনে করে এই নাগরিক সংগঠনটি। এ লক্ষ্যে নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারে সংগঠনটির পক্ষ থেকে বেশকিছু সুপারিশ প্রস্তাব করা হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর আজিমুর রহমান কনফারেন্স হলে ‘বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব সুপারিশ উত্থাপন করেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। বলেন, একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রথম এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো নির্বাচন। আর নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হলো সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য একটি যথাযথ আইনি কাঠামো সৃষ্টি, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত সংবিধান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিধি-বিধান। এর লক্ষ্য হলো একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ তথা সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ ও অর্থবহ নির্বাচন আয়োজন করে বিজয়ী দলের কাছে ক্ষমতা অর্পণ।

সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ছাড়াও সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ বলে জানায় সুজন। এই বিষয়ে দিলীপ কুমার সরকার বলেন, একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হলো সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা। আর নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতা নির্ণয়ের বেশ কিছু আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ও নিয়ম রয়েছে। তাই দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারে বেশ কিছু সংস্কার প্রস্তাব তুলে ধরেন তিনি।

নির্বাচন ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার প্রস্তাবগুলো হলো- অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক নির্বাচন পদ্ধতি প্রবর্তনের কথা ভাবতে হবে। এক্ষেত্রে সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদে সংশোধনী আনা প্রয়োজন। নারীদের জন্য এক-তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষণ এবং উক্ত আসনসমূহে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠনের ব্যাপারে বিবেচনা করা। মনোনয়ন বাণিজ্য অবসানের লক্ষ্যে প্রতিটি দলকে আসনভিত্তিক সংশ্লিষ্ট সকল আসনের জন্য গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দুইজন করে প্রার্থী নির্ধারণ করা এবং কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড কর্তৃক উক্ত দুইজনের মধ্য থেকে একজন প্রার্থীকে মনোনয়ন প্রদান বাধ্যতামূলক করা। প্রার্থী হওয়ার শর্ত হিসেবে মনোনয়ন পেতে আগ্রহী ব্যক্তিকে কমপক্ষে তিন বছর পূর্বে সংশ্লিষ্ট দলের সদস্যপদ গ্রহণের বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা। ভোটার কর্তৃক অপছন্দের প্রার্থীদের বর্জনের জন্য ‘না’ ভোটের বিধান পুনঃপ্রবর্তন করা। প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয় কমানোর জন্য নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রার্থীদের পোস্টার ছাপানো, হলফনামার তথ্য প্রচার ও আসনভিত্তিকভাবে প্রার্থী পরিচিতি সভা আয়োজন করা। একইসঙ্গে প্রতিটি আসনে তদারককারী নিয়োগের মাধ্যমে নির্বাচনী ব্যয়সীমা মেনে চলা নিশ্চিত করা। বিরুদ্ধ হলফনামা প্রদানের বিধান আইনে সন্নিবেশন করা। সংরক্ষিত আসনের প্রার্থীদের হলফনামা প্রদানে বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করা। মনোনয়নপত্র ও হলফনামার ইলেক্ট্রনিক ফাইলিং বাধ্যতামূলক করা এবং হলফনামা ও আয়কর বিবরণী সাথে সাথেই নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে আপলোড করার বিধান আইনে যুক্ত করা।

এছাড়া গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯২ ও ৯৩ ধারায় বর্ণিত দায়মুক্তির বিধান বাতিলের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া। সেনাবাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করা। ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণের বিষয়টি রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া। ভোটার তালিকায় জেহুরা গ্যাপ নিরসনের লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। নির্বাচনি হলফনামায় প্রার্থীদের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তালিকার সাথে অর্জনকালীন মূল্যসহ বর্তমান বাজারমূল্য বাধ্যতামূলকভাবে উল্লেখ করার বিধান করা। হলফামা যাচাই-বাছাই করে অসত্য তথ্য প্রদানকারীদের প্রার্থীতা বাতিল করা। নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইনকে যথাযথ করা। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল তথ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিতের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ভোটার তালিকায় জেন্ডার গ্যাপ থাকলে তার কারণ অনুসন্ধান করা।

সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমাদের ভোটার তালিকায় ত্রুটি রয়েছে। ২০০৭ সালের ভোটার তালিকায় পুরুষের তুলনায় ১২ লাখ নারী ভোটার বেশি ছিল। কিন্তু এখন পুরুষ ভোটারের তুলনায় নারী ভোটারের সংখ্যা কম। তার মানে এখানে জেন্ডার গ্যাপ হয়েছে। এর কারণ হলো, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা করা হয়নি। আওয়ামী লীগের অফিসে বসে এই ভোটার তালিকা করা হয়েছে। এর বিহিত হওয়া দরকার, জেন্ডার গ্যাপ দূরীভূত করা দরকার। এছাড়া ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনের মতো যেসব অন্যায় হয়েছে, সেই অন্যায়গুলোর পুনরাবৃত্তি যেন আর না হয়।

যে ছাত্রদের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে, সেই ছাত্রদের কাছে অনুরোধ জানিয়ে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আব্দুর রউফ বলেন, সত্যিকার গণতন্ত্র উদ্ধারের পর ভোটারদের ভোট পরিচালনার সুযোগ দিতে হবে। ভোটারদের তৃণমূল পর্যায়ে ভোট পরিচালনা, ভোট সংরক্ষণ ও ভোটের ফলাফল নির্বাচন কমিশনে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

সভায় অন্যদের মধ্যে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আব্দুর রউফ, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং অ্যালায়েন্সের (ফেমা) সভাপতি মুনিরা খান, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক ও কবি সোহরাব হাসান, নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলি, সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট ফয়েজ আহমদ তৈয়ব, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. আব্দুল আলীম প্রমুখ বক্তৃতা করেন।

ভোরের আকাশ/ সু