বিশ্বের রাজনীতি-করণ-প্রক্রিয়া বোঝা আমার জন্য জটিল বিষয়। তাই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ-রাজনীতি-করণ-প্রক্রিয়া নিয়েই ভাবা যাক। মনে হতে পারে- এ বিষয়ে ভাবা কি খুব জরুরি? উত্তর হলো - একজন দায়িত্ববান ও সচেতন নাগরিক হিসেবে এটি খুবই জরুরি যার ফলসরূপ দেশের উন্নতি-প্রক্রিয়া চলমান থাকে।
বাংলাদেশের প্রায় সর্বক্ষেত্রেই অসুস্থ-রাজনীতি-করণ প্রক্রিয়া বিদ্যমান। শুধু সুস্থ-রাজনীতিই পারে দেশের উন্নতি চলমান রাখতে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মহোদয় অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেন বিগত ২০-০৮-২০২৪ পদত্যাগ করলেন। অবিশ্বাস্য ঘটনা হলো এই যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই এই পদত্যাগ চায়নি এবং বিষয়টি মেনে নিতে তাদের কষ্ট হয়েছে। কারণ, তারা "কোটা-আন্দোলন" এর সময় সরাসরি উনার সমর্থন পেয়েছিল, যেহেতু আন্দোলনটি ছিল যৌক্তিক ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। ওই সময় ঘটে যাওয়া উত্তপ্ত পরিস্থিতিতেও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে পুলিশ প্রশাসনের প্রবেশের বিষয়টি তিনি শক্ত ভাবে দমন করেছিলেন। ফলে, পুলিশ-প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে ঢুকতে পারেনি। তখনকার পরিস্থতিতে তারা ভিতরে ঢুকতে পারলে সেখানে শিক্ষার্থীদের একটি বড় ধরনের হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়ে যেতো বলে আমি ধারণা করি। তিনি বলেছিলেন, "খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো পুলিশ ঢুকবে না, এখানে আমিই প্রশাসন"।
সর্বক্ষেত্রে একই প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করা গেলে "সুস্থ-রাজনীতি-করণ" দেশের সকল ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হতো এবং দেশের উন্নতি হতো। সেই সাথে সংস্কারের কাজে যাঁরা নেমেছেন, তাঁদের সার্থকতা শতভাগ পূর্ণ হতো এবং নামগুলো ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকতো। নিজের সমস্যার কথা বিবেচনায় না নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভালবেসে তাদের যাতে কোনো বিপদ না আসে- এমন সাহসী উদ্যোগ একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির পক্ষেই নেয়া সম্ভব। এমন একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি পাওয়া দুষ্কর এবং তিনি রিওয়ার্ড পাবার যোগ্য বলে আমার বিশ্বাস, কারণ সেই দুঃসময়ে আর কোনো ভিসি মহোদয়ের এমন সাহসী উদ্যোগ নেয়া সম্ভব হয়নি। অথচ রিওয়ার্ডে ভূষিত হবার পরিবর্তে তাঁকে পদত্যাগ করতে হলো!
এখন প্রশ্ন হলো, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পরবর্তী ভিসি কে হবেন? ঘটে যাওয়া দুঃসময়ে শুধুমাত্র নিজের জীবনকে বাঁচাতে ব্যস্ত থাকা মানুষকে এই পদে অভিষিক্ত করা হলে "বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন" এর মৃত্যু ঘটবে! সেইসাথে যাঁরা সমাজ সংস্কারের কাজে নেমেছেন - তাঁরা সমাজে প্রশ্নবোধক চিহ্নটির চর্চায় ব্যস্ত আছেন বলে মনে হবে! আর এটির আত্মপ্রকাশ ঘটলে বলবো - "অসুস্থ-রাজনীতি" বিরাজমান।
আর যদি দলীয়করণের মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হয়, তাহলে তো তিনি হবেন কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের ভিসি। শুধুমাত্র তাদের/তাঁদের স্বার্থ রক্ষার কাজেই তিনি বহাল থাকবেন! সেক্ষেত্রে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বা শিক্ষকদের পদত্যাগ নিয়ে তামাশা করার কি কোনো প্রয়োজন আছে? সেক্ষেত্রেও "বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন" ও "সমাজ সংস্কারের কাজ" সাংঘাতিকভাবে অকার্যকর হয়ে যাবে। ফলে যার অর্থ দাঁড়বে এমন - তা হলো "একটি ভাড়াটেকে উঠিয়ে অপরিষ্কার বাসা মেরামতের কাজ শেষে আরেকটি ভাড়াটেকে বাসা ভাড়া দেবার মতো"। এরপরে আবারো রক্ত ক্ষয়ের মাধ্যমে ভাড়াটিয়া বদল প্রক্রিয়ার ... চলমান...। সেটিও "অসুস্থ-রাজনীতি"।
তাই যে দলেরই হোন না কেন দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেন এর মতো পরোপকারী দায়িত্বশীল যোগ্য মানুষকে দায়িত্ব দেয়া সম্ভব হতো, তাহলে শিক্ষার্থীদের রক্তের বিনিময়ে ওদের আত্মত্যাগ সার্থক হতো। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সত্যিকারের বা যথার্থই সংস্কার করা সম্ভব হতো। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনও সমাজ সংস্কারের কাজ এর সর্থকতা প্রায় শতভাগ সফল হোত। এটিই হলো সুস্থ-রাজনীতি-করণ-প্রক্রিয়া। বাংলাদেশের সর্বক্ষেত্রে একই প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করা গেলে "সুস্থ-রাজনীতি-করণ" দেশের সকল ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হতো এবং দেশের উন্নতি হতো। সেই সাথে সংস্কারের কাজে যাঁরা নেমেছেন, তাঁদের সার্থকতা শতভাগ পূর্ণ হতো এবং নামগুলো ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকতো।
লেখক : অধ্যাপক, গণিত বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
ভোরের আকাশ/ সু