সংবাদ সম্মেলনে ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়ন এর আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হওয়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানায়। বক্তব্যের শুরুতেই ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে বীর শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা এবং ২০২৪ সালে অন্যায়, দুর্নীতি এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়ই-সংগ্রাম করে যে সকল বীর শহীদ ছাত্র-জনতা তাদের বুকের তাজা রক্তের বিনিমিয়ে আমাদের প্রাণের বাংলাদেশকে দ্বিতীয় বারের মতো স্বাধীন করেছেন তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং দেশবাসীর প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।
আমি মো. মোহসিন প্রায় ২০ বছর যাবৎ অত্র হোটেলে কর্মরত আছি এবং বর্তমান নির্বাচিত কেবিনেট এর সভাপতি এবং এখানে আমার সাথে আমাদের কেবিনেটের সম্মানিত সাধারণ সম্পাদক এবং কেবিনেটের অন্যান্য সদস্য ও উপদেষ্টা মন্ডলী উপস্থিত রয়েছেন। আমরা বর্তমান ইউনিয়ন ৩৩৫ জন কর্মীর প্রতিনিধিত্ব করছি যা বিগত ১৩/১২/২০২৩ইং সালের নির্বাচনে বিপুল সংখ্যক ভোটে বিজয়ী হই। অত্র হোটেলের রেজিস্টার্ড শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়ন, রেজি: ১১১৬ (যাহা সম্পূর্ণরুপে বহিঃ রাজনৈতিক চর্চা মুক্ত।
ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা বাংলাদেশের প্রথম পাঁচ তারকা হোটেল হিসেবে দীর্ঘদিন যাবত দেশের পর্যটন খাতে অত্যন্ত সুনাম ও দক্ষতার সহিত বিশেষ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা’র শ্রমিক ও কর্মচারীদের নিরলস পরিশ্রমের ফলে বিশ্বমানের আতিথেয়তার স্বীকৃতিস্বরূপ গত দুই বছরে World Luxury Hotels Awards (Continent Winner: Asia 2022; Annual World Travel Awards- angladesh Leading Hotel 2022; Annual WorldTravel Awards Bangladesh's Leading Hotel Suite সহ আরো অনেক পুরষ্কার অর্জন করেছে।
বিগত ২৩/০৮/২০২৪ ইং তারিখে “ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা হোটেলের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরূদ্ধে” শিরোনামে আয়োজিত একটি সংবাদ সম্মেলন ও তৎপরবর্তী হয়রানি, বিশৃঙ্খলা ও অযৌক্তিক বিক্ষোভের প্রতি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয় যার বিরুদ্ধে আমরা ট্রেড ইউনিয়ন এর পক্ষ থেকে গত ২৬ শে আগষ্ট ২০২৪ইং তারিখে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই অসত্য, বানোয়াট ও মিথ্যা সংবাদের প্রতিবাদ ও এর বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করি। আমরা বিশ্বাস করেছিলাম আমাদের এই প্রেস বিজ্ঞপ্তির পর জনাব নুরুজ্জামান ও তার সহযোগীরা এই অপপ্রচার থেকে বিরত হবেন, কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, তিনি আবারো গত ৩০/০৮/২০২৪ইং তারিখে একইভাবে সংবাদ সম্মেলন করে আরো কিছু কাল্পনিক অসত্য ভিত্তিহীন অভিযোগ উত্থাপনের মাধ্যমে তিনি ও তার অনুসারীরা হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার অপপ্রয়াস চালিয়েছে যাচ্ছেন।
আপনাদের সদয় অবগতির জন্য জানাতে চাই, জনাব নুরুজ্জামান বঙ্গবন্ধু আন্তজার্তিক সম্মেলন কেন্দ্রে কর্মরত ছিলেন। তিনি গত কেবিনেটে সাধারণ সম্পাদক পদে ছিলেন। তার মেয়াদকালে কেবিনেট এর কিছু সদস্য ও অনুসারীরা বিভিন্ন সময় অনৈতিক কার্যকলাপ, দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ এবং নৈতিক স্খলন এর দায়ে অভিযুক্ত হয়ে যথাযথ তদন্ত প্রক্রিয়ায় চাকুরিচ্যুত হয়েছিলেন। বিগত সময়ে তিনি ও তার অনুসারীরা কর্তৃপক্ষকে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন সময় নিয়োগ প্রক্রিয়া সহ অনেক অনৈতিক আবদার করার চেষ্টা করেছেন। বঙ্গবন্ধু আন্তজার্তিক সম্মেলন কেন্দ্র এর লিজ চুক্তি শেষ হবার পর নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় চাকুরীচ্যুত্তি ঘটলে চাকুরীচ্যুত এসব কর্মচারী বিগত সরকারের সময় বিশেষ করে গত দুই বছর বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের দিয়ে তদবির করে চাকরিতে পূনর্বহালে ব্যর্থ হয়ে কিংবা রীতি অনুযায়ী শ্রম আদালতে গিয়ে আইনের আশ্রয় না নিয়ে সাম্প্রতিক বিভিন্ন পেশা ও গোস্টীর চলমান আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে নিজেদেরকে বৈষম্যের শিকার দাবি করে বেআইনিভাবে চাকুরীতে অবিলম্বে পুনর্বহালের জন্য ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকার উর্ধতন কর্তৃপক্ষের উপর চাপ প্রয়োগ করছে। প্রকাশ থাকে যে, জনাব নুরুজ্জামান চাকুরীচ্যুত্তির পর ৫ মাস অতিবাহিত হলেও একাধিকবার নোটিশ দেয়ার স্বত্তে জোরপূর্বক কোয়ার্টার দখল করে সেখানে অবস্থান করছেন এবং প্রতিবেশীদের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। সার্বিক পরিস্থিতির কারণে সেখানে বসবাসরত সকল কর্মকর্তা, কর্মচারী ও তাদের পরিবারের নিরাপত্তা বিবেচনায় হাউজিং কমিটির পরামর্শক্রমে কাফরুল থানায় একটি সাধারণ ডাইরি করা হয় যা তার সংবাদ সম্মেলনে বিকৃতরূপে উপস্থাপিত হয়। উল্লেখ্য যে, তিনি ও তার কেবিনেট সদস্যরা বিগত সময় ক্ষমতায় থাকাকালে প্রথম বারের মতো মুজিব কোট ধারণ করে আমাদের এই ইউনিয়নকে রাজনৈতিক রূপ দেয়ার চেষ্টা করেছেন যা বিগত ৫০ বছরের ইতিহাসে কোনো নজির নেই। তার রাজনৈতিক পরিচয়, মতাদর্শ এবং ক্ষমতাচ্যুত বিগত প্রধানমন্ত্রীর ভয়ভীতি প্রদর্শনের প্রমাণস্বরূপ আমাদের লিখিত বক্তব্যের সাথে কিছু প্রমাণাদি আপনাদের দেয়া হয়েছে।
জনাব নুরুজ্জামানের প্রধান অভিযোগ যে, হোটেল দুর্নীতির কারণে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে তার জবাবে আমি বলতে চাই, ধ্বংস বলতে তিনি কিছু মনগড়া কথামালা ছাড়া তার স্বাপেক্ষে কোনো তথ্য প্রমান উপস্থাপন করতে পারেন নাই, এর মাধ্যমে তিনি হোটেলটির সুনাম যেমন নষ্ট করার অপপ্রয়াস চালিয়েছে একই সাথে সকলকে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছেন। হোটেল এর সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর আন্তরিক পরিশ্রমের ফসল বিগত দুই বছরে ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা এর ইতিহাসে সবচেয়ে ভালো ব্যবসায়ীক সাফল্য অর্জন করেছে এবং বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেড সরকারি কোষাগারে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব প্রদান করছে এবং পাশাপাশি হোটেল প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেছে। ২০২৩ সালে ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকার মোট আয় ২০২১ সালের তুলনায় ১২৭.৪% বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মুনাফা ৪৩৩% বৃদ্ধি পেয়েছে, এছাড়াও হোটেল গত মার্চ ২০২৪ এ ১৯.৩১ কোটি টাকা আয় করেছে যা এক মাসের হিসাবে হোটেলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ আয় এবং একই সাথে কর্মীদের জন্য সর্বোচ্চ সার্ভিস চার্জ অর্জিত হয়। এখানে আরও উল্লেখ্য যে, ৫ তারকা হোটেলের অবস্থা মূল্যায়নের যতগুলো মাপকাঠি আছে তার সবগুলোতেই আমাদের হোটেল সফলতার সাথে উন্নীত হয়েছে যার সীকৃতি স্বরূপ হোক।