logo
আপডেট : ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১৬:৩৪
চট্টগ্রামে ছাত্রীদের হোস্টেলে অভিযান চালানো ওসিরা বহাল তবিয়তে, বাড়ছে ক্ষোভ
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

চট্টগ্রামে ছাত্রীদের হোস্টেলে অভিযান চালানো ওসিরা বহাল তবিয়তে, বাড়ছে ক্ষোভ

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার, দেওয়ানবাজার, বহদ্দারহাট-চান্দগাঁও এলাকার বেসরকারি ছাত্রীনিবাসগুলোতে থাকা ছাত্রী ও কর্মজীবী নারীদের রাতের আঁধারে হোস্টেল থেকে বের করে দেওয়া দুই থানার ওসি এখনো বহাল তবিয়তে দায়িত্ব পালন করছেন। এ নিয়ে ভুক্তভোগীদের মধ্যে বাড়ছে ক্ষোভ।

ভুক্তভোগীরা জানান, ৩০ জুলাই দুপুর ২টা থেকে চকবাজার ও চান্দগাঁও থানা পুলিশ সদস্যরা বিভিন্ন হোস্টেলে যায় কোটা আন্দোলনে সহিংসতার মামলায় আসামি খুঁজতে। এসময় সন্ধ্যার মধ্যে সব ছাত্রী ও কর্মজীবী নারীকে দুই ঘণ্টার মধ্যে হোস্টেল ছাড়ার নির্দেশ দেয়। এমন নির্দেশনায় বিপুলসংখ্যক ছাত্রী ও কর্মজীবী নারী হঠাৎ বিপদে পড়ে যান। শেষমেষ তাদের বাধ্য হয়ে হোস্টেল ছাড়তে হয়।

এদিকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনারকে বদলি হলেও হোস্টেলে অভিযান চালানো ওসিরাসহ সংশ্লিরা এখনও বহাল তবিয়তে তাদের দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের চাকরি থেকে বহিষ্কারসহ শাস্তির আওতায় দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

জানা যায়, ৩০ জুলাই (মঙ্গলবার) দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার, দেওয়ানবাজার, বহদ্দারহাট-চান্দগাঁও এলাকায় অবস্থিত অন্তত ৩০টি ছাত্রীনিবাসে অভিযানে যায় পুলিশের একাধিক টিম। গিয়ে ছাত্র আন্দোলনে কেউ গিয়েছে কিনা খোঁজ নেন এবং হোস্টেল খালি করার নির্দেশ দেন।

এসময় অনেক ছাত্রী ও কর্মজীবী নারী তাদের গ্রামের বাড়ি দূরে হওয়ায় একদিনের সময় দেওয়ার অনুরোধ জানালে পুলিশ তাদেরকে আত্মীয়ের বাসায় চলে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। এরপর পুলিশি চাপের মুখে অনেক হোস্টেল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় মালিকপক্ষ।

সেদিন বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে পুলিশ জানায়, কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতার ঘটনায় বিভিন্ন মামলার আসামি খুঁজতে তারা এসব হোস্টেলে গিয়েছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, অভিযানকালে চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার এলাকার চট্টগ্রাম কলেজের আশপাশে মাতৃছায়া, মাতৃনীড়, মাতৃছায়া, আইডিয়াল, পরশমণি, মাতৃনিলয়, প্রশান্তি, প্যারেন্ট কেয়ার ও মহানগর মহিলা হোস্টেলসহ বেশ কয়েকটি হোস্টেলে যায় পুলিশ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চকবাজার এলাকার এক ছাত্রীনিবাসের মালিক জানান, ‘মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) দুপুর ৩টার দিকে পুলিশের প্রায় ২০-২৫ জনের একটি দল হোস্টেলে আসে। এ সময় তারা হোস্টেল থেকে কতজন কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন জানতে চান এবং সন্ধ্যার মধ্যে হোস্টেল থাকা নারীদের বাড়ি চলে যাওয়ার নির্দেশ দেন। এরপর হোস্টেলে থাকা সকলে চলে যেতে বাধ্য হয়। কেউ কেউ উঠেন আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে।

সেদিন চকবাজার এলাকার বিভিন্ন হোস্টেলে অভিযান চালান চকবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক সারোয়ার আজম। তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, আন্দোলনের সময় অনেক শিক্ষার্থী না বুঝে অংশ নিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করেছে। আমরা ছাত্রীদের বলেছি—যেহেতু কলেজ বন্ধ, বাইরে ঘোরাঘুরি না করে বাড়ি চলে যেতে।

এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতার ঘটনায় বিভিন্ন মামলার আসামি খুঁজতেই পুলিশ এসব হোস্টেলে যাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন চকবাজার থানার ওসি ওয়ালীউদ্দীন আকবর।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী একাধিক হোস্টেল মালিক, ছাত্রী ও কর্মজীবিরা নারীরা সেদিন চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে নিরাপত্তার কথা চিন্তা না করে জোরপূর্বক হোস্টেল থেকে বের করে দেওয়া সংশ্লিষ্ট থানার ওসি, এসআই ও এএসআইসহ অভিযানে অংশ নেওয়াদের চিহ্নিত করে বহিষ্কারসহ শাস্তির আওতায় দাবি জানিয়েছেন।

ভুক্তভোগীরা নারীরা জানান, সেদিনের দুর্ভোগের কথা বলে শেষ করা যাবে না। পুলিশ কমিশনারকে বদলি করা হলে সংশ্লিষ্ট থানার ওসিরা এখনো কীভাবে বহাল তবিয়তে দায়িত্ব পালন করছেন? সংশ্লিষ্ট থানার ওসিসহ অভিযানে অংশ নেওয়াদের বহিষ্কারসহ শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান।

প্রসঙ্গত, বুধবার (২১ আগস্ট) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব মো. মাহাবুর রহমান শেখ স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার মো. সাইফুল ইসলামকে রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমিতে সংযুক্ত করা হয়।

ভোরের আকাশ/ সু