logo
আপডেট : ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:২০
ঢিমেতালে চলছে পুলিশের কাজ, স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে আরও
হেলাল সাজওয়াল

ঢিমেতালে চলছে পুলিশের কাজ,
স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে আরও

সরকার পতনের পর কর্মবিরতি শেষে ৯ আগস্ট আবার শুরু হয় পুলিশের কার্যক্রম। তবে এখনও স্বাভাবিক হতে পারেনি পুলিশ। সরেজমিন দেখা গেছে ঢিমেতালে চলছে পুলিশের কাজ। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলছে পেশাদারিত্ব ফিরিয়ে আনতে নেয়া হয়েছে নানান উদ্যোগ। তবে কর্মকর্তারা বলছেন স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে আরও।

৫ আগস্ট সরকার পতনের আগে ঢাকার প্রতিটি থানায় গড়ে ৪০ থেকে ৮০টি জিডি ও ৫ থেকে ১০টি মামলা হতো। সেই সংখ্যা এখন অনেক কম। যেসব থানায় হামলা হয়েছিল, এখনো সেসব থানা ভবন মেরামতের কাজ চলছে। গতকাল বিকেল পর্যন্ত ঢাকার কয়েকটি থানা ঘুরে দেখা গেছে, থানাগুলো এখনো আগের মতো লোকজন আসছেন না। যেসব থানায় হামলা হয়েছিল, এখনো সেসব থানা ভবন মেরামতের কাজ চলছে। কোন কোন থানায় এখনো আনসার সদস্যদের পাহারা দিতে দেখা গেছে।

মতিঝিল, ওয়ারী জোনে কর্মরত কয়েকজন উপ-পরিদর্শকের (এসআই) সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনেক কথাই বলেন। প্রকৃতপক্ষে থানার সব কার্যক্রম এখনো চালু হয়নি। পুলিশ আসামি গ্রেপ্তারে বাইরে যেতে ভয় পাচ্ছে এখন।

ছাত্র আন্দোলনের সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্রজনতার সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে অনেক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। সরকার পতনের আগে-পরে তিন দিন পুলিশের বেশ কিছু স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর সারা দেশে পুলিশি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ সদস্যরা থানায় আসতে সাহস পাননি। স্থাপনা পাহারা দেওয়ার জন্য আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়।

সরকার পতনের পর ঢাকার যে কয়টি থানায় হামলা হয়েছিল, তার একটি ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানা। ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই এই থানাটি আক্রমনের শিকার হয়। পরে ৫ আগষ্ট সরকার পতনের পর দুর্বৃত্তরা আগুন লাগিয়ে দিলে পুড়ে যায় পুরো ভবন। ৯ আগস্ট রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় সীমিত পরিসরে কার্যক্রম শুরু হয়। পরে পর্যায়ক্রমে সারা দেশের সব থানায় কার্যক্রম চালু হলেও যাত্রাবাড়ী থানাতে এখনও কার্যক্রম চালু হয়নি। কর্তব্য রত ডিউটি অফিসার মোবাইল ফোনে জানান, ডেমরা থানার একটি রুমে অস্থায়ীভাবে স্বল্প পরিসরে চলছে যাত্রাবাড়ী থানার কাজ। খুব শিগগিরই ভবনের মেরামত কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন যাত্রাবাড়ী থানার ওসি মাইনুল ইসলাম।

তিনি বলেন, আমি নিজে তদারকিতে রয়েছি হয়তো দু-চারদিনের মধ্যে ভবনের পুড়ে যাওয়া দেয়াল প্লাস্টার ও রং করা শেষ হবে। পুলিশ সদস্যদেও মনোবল ফিরিয়ে আনা প্রসঙ্গে মাইনুল ইসলাম ভোরের আকাশকে বলেন, ব্যাক্তিগতভাবে আমার মনোবল ঠিক আছে। তিনি বলেন, যারা অন্যায় করেছে তারা তাদের শাস্তি পেয়েছে। আমরা ছাত্র জনতার বিরুদ্ধে দাড়াইনি। সুতরাং আমি মনে করি পুলিশকে সব কিছু ভুলে জনগনের জান মালের রক্ষার দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করতে হবে। আগের মতো তৎপর নয়।

হামলার শিকার ঢাকার কদমতলী থানা। আন্দোলন চলার সময় ব্যাপক হামলার ভয়ে সরকার পতনের দুদিন আগেই এই থানাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওসি মো. মাহমুদুর রহমান জানান, থানার সেবা কার্যক্রম পুরোদমে চালু হয়েছে। যেহেতু কদমতলী থানায় হামলা হয়েছিল, তাই অনেকের মধ্যে এখনো ভয় কাজ করছে। তবে আমি আসার পর এখন প্রতিদিন টহল ডিউটি চলছে। আমি নিজে বিভিন্ন সময় ফোর্স নিয়ে প্রায় সব এলাকায় জনসাধারনের সাথে মিটিং করেছি। শুক্রবার নামাজের পর মুসল্লিদের সাথে মতবিনিময় করেছি। সবাই আমাদের আসস্থ করেছে নতুনভাবে দেশ গড়ার কাজে পুলিশকে সহায়তা দিবে তারা। মাহমুদুর রহমান ভোরের আকাশকে বলেন, কদমতলীথানার কাজ পুরোদমে শুরু হয়েছে। থানার কাজ স্বাভাবিক রয়েছে ।

পুলিশের একটি উধ্বতন সূত্র বলছে, যদিও থানার কাজ শুরু হয়েছে এবং পুলিশ তাদের কাজে মনোযোগি হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পুলিশ তার জন্মেও পর থেকে এ ধরনের সিচুয়েশন মোকাবিরা করেনি। এমন একটি পরিস্থিতির জন্য পুলিশ তৈরী ছিল না। এখন পুলিশ যে কোন অভিযানে বের হতে ভয় পায়। সবকিছু মিলিয়ে পুলিশের স্বভাবিক হতে এখনও বেশ সময় দরকার। সূত্রটি মনে করছে সংস্কার এর মাধ্যমে ক্যাডার নন ক্যাডার একটি ব্যালেন্স করে সেবার মনোভাব সম্পন্ন বাহিনি গড়তে পারলে পুলিশের মনোবল ফেরানো সম্ভব।

ডিএমপি’র উপ পুলিশ কমিশনার মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন মো. ফারুক হোসেন দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, যে পরিমান ক্ষতি হয়েছে তা পুরন করতে বেশ সময় দরকার। তিনি বলেন, পুলিশের থানা জ¦ালিয়ে দেওয়া হয়েছে। অস্ত্র লুট করা হয়েছে। গাড়ী পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন পুলিশের এসব সরঞ্জাম যোগান দিতেও সময়ের দরকার সেই হিসেবে পুলিশের স্বাভাবিক কাজে ফিরতে কিছুটা সময়তো লাগবেই।

ডিএমপি কমিশনার মায়নুল ইসলাম গতকাল একটি দৈনি পত্রিকার সাথে বলেন :

আমরা কন্টিনিউয়াসলি চেষ্টা করছি পুলিশের হারানো গৌরবময় ইমেজ ফিরিয়ে আনতে। এখন তাদেরকে আমরা মোটিভেশনাল জায়গাটা ইমপ্রুভ করার চেষ্টা করছি। নিয়মিত পিটি-প্যারেড, ড্রিল, ঘন ঘন অ্যাড্রেসিংয়ের মাধ্যমে ইস্যুগুলো সমাধান করার বিষয়ে আমরা জোর দিচ্ছি। মনোবল বৃদ্ধির জন্য কালোকটিভ যেসব ইস্যুগুলো আছে সেগুলোও সামাধান করার চেষ্টা করছি। কারণ একটা সুশৃঙ্খল বাহিনীর মনোবল দৃঢ় না থাকলে কাজ করবে কীভাবে? পুলিশের প্রতি সাধারণ মানুষের যে মনোভাব তা একদিনে হয়নি। আবার একদিনেও তা কারেকশন হবে না। তবে রুলস এবং রেগুলেশন অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করতে পারলেই আমরা দ্রুত সাধারণ মানুষের আস্থার একটি অবস্থানে ফিরতে পারব।

তিনি বলেন, আমরা পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্বটা পালন করতে চাই। আমাদের ওপর যে অর্পিত দায়িত্ব এবং কর্তব্য আছে তা যদি ঠিকমতো সততার সঙ্গে, ন্যায্যতার সঙ্গে, দায়িত্বশীলতার সঙ্গে পালন করতে পারি অর্থাৎ রাষ্ট্রের যে দায়িত্ব আছে তা ভালোভাবে ডিসচার্জ করতে পারলেই আস্থা অটোমেটিক্যালি ফিরে আসবে।

 

ভোরের আকাশ/মি/সু