logo
আপডেট : ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:৪২
জুলাইয়ে এডিপি বাস্তবায়ন, ২৬৩ প্রকল্পে খরচ হয়নি এক টাকাও
ভোরের আকাশ প্রতিবেদক

জুলাইয়ে এডিপি বাস্তবায়ন, ২৬৩ প্রকল্পে খরচ হয়নি এক টাকাও

প্রকল্প বাস্তবায়নে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকেই হিমশিম খাচ্ছে সরকার। অর্থসংকটের কারণে অনেক প্রকল্পেই অর্থ খরচ করা সম্ভব হচ্ছে না। সদ্য শেষ হওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরেও ইতিহাসের সর্বনিম্ন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন হয়েছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই মাসে ২৬৩টি প্রকল্পে এক টাকাও খরচ করা কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। অর্থাৎ এসব প্রকল্পের কোন কাজই করেনি তারা। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) জুলায় মাসের এডিপির অগ্রগতি প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণে এ চিত্র পাওয়া যায়।

এডিপির জুলাইয়ের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে এডিপি বরাদ্দ ২ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রথম মাসে মাত্র ২ হাজার ৯২২ কোটি টাকা খরচ করতে পেরেছে সরকারের মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো। অর্থাৎ মোট বরাদ্দের ১ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ খরচ করা সম্ভব হয়েছে। অথচ আগের অর্থবছরে ২ লাখ ৭৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের পরও খরচ করতে পেরেছিল ৩ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা বা মোট বরাদ্দের ১ দশমিক ২৭ শতাংশ।

জুলাইয়ের এডিপির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এডিপিতে চলতি অর্থবছরে ১ হাজার ৩৫২টি প্রকল্প রয়েছে। এর মধ্যে ২৬৩টি প্রকল্পে অর্থবছরের প্রথম মাসে এক টাকাও খরচ করা সম্ভব হয়নি। গড় হিসেবে মোট প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে ১ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খরচ হয়েছে নিজস্ব অর্থায়ন থেকে। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো নিজস্ব অর্থায়নে বরাদ্দের ২ দশমিক ৮১ শতাংশ খরচ করেছে। নিজস্ব অর্থায়ন থেকে বরাদ্দের এমন খরচ বেশি হয়েছিল সর্বশেষ করোনার বছরে। ওই বছর নিজস্ব অর্থায়নের ২ দশমিক ৩৮ শতাংশ খরচ করেছিল মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো।

অর্থবছরের শুরুতে কাজ কম হওয়ার বিষয়ে আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বলেন, অর্থবছরের শুরুতে সাধারণত প্রকল্পের সারা বছরের কাজের পরিকল্পনা নিতে হয়। বিভিন্ন ধরনের পেপারওয়ার্ক থাকে। টেন্ডারের বিষয় থাকে, ক্রয় প্রস্তুতির বিষয় থাকে। এসব কাজে তো তেমন অর্থ খরচ হয় না। এসব কারণে অর্থবছরের শুরুতে কাজ হলেও অর্থ ব্যয় না হওয়ায় এডিপি বাস্তবায়নে ধীরগতি দেখা যায়। এডিপি বাস্তবায়নে সবচেয়ে এগিয়ে আছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। জুলাইয়ে তারা বাস্তবায়ন করেছে মোট বরাদ্দের ৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) বাস্তবায়ন করেছে ৫ দশমিক ৬২ শতাংশ।

সম্প্রতি ইআরডির বাস্তবায়নাধীন চারটি কারিগরি প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনায় সভা করেন সংস্থাটির সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী। সভায় তিনি বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট সকল প্রকল্পের চলমান কার্যক্রম অব্যাহত রেখে নির্ধারিত সময়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সচেষ্ট থাকতে হবে। এছাড়া কর্মকর্তাদের বৈদেশিক প্রশিক্ষণের জন্য অর্থ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে এবং এক্ষেত্রে যথাযথ প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট নির্বাচন করার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। জুলাই মাসে এডিপি বাস্তবায়নে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ। তারা বাস্তবায়ন করেছে ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ। এক টাকাও খরচ করতে পারেনি ১৯টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ৬৬ কোটি টাকা খরচ করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯৩৮ কোটি টাকা খরচ করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। গত প্রায় ১০ বছর ধরেই অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে বাস্তবায়ন হার দুই শতাংশ ছুঁইছুঁই। কোনভাবেই এই সময়ে ২ শতাংশের বেশি কাজ করতে পারেনি। আইএমইডির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ১ দশমিক ২৭ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছিল শূন্য দশমিক ৯৬ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ দশমিক ১৪ শতাংশ, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১ দশমিক ৫২ শতাংশ, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ দশমিক ৮৪ শতাংশ, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে শূন্য দশমিক ৫৭ শতাংশ, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে শূন্য দশমিক ৯৩ শতাংশ, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে শূন্য দশমিক ৫৬ শতাংশ, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ শতাংশ, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২ শতাংশ এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ছিল ২ শতাংশ।

ভোরের আকাশ/ সু