চরম অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। দুই দফায় ২০ বছর ৬ মাস ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের লেজুড়বৃত্তি করে সব ধরনের সুবিধাভোগ করলেও আদর্শ ও নীতি-নৈতিকতাহীন দলটির নাম এখন বিপন্ন তালিকাভুক্তির পথে। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ও দলটির প্রতিষ্ঠাতা স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদের পতনের পর কয়েক দফায় বহুধাবিভক্ত জাতীয় পার্টির একাংশ পতিত এরশাদের নামেই টিকে আছে এবং মূল জাতীয় পার্টি হিসেবে এই অংশকেই এখনো গণ্য করা হয়। তবে সাবেক সেনাপ্রধান ও সামরিক শাসক এরশাদকে জেনারেল মঞ্জুর হত্যাসহ একাধিক মামলা থেকে বাঁচাতে এবং দলের কিছু নেতার ভোগবিলাসীতার স্বার্থে সব সময়েই আওয়ামী লীগের সঙ্গে লিখিত ও অলিখিত গাঁটছাড়া বেধে এতোদিন টিকে ছিল জাপা।
এরশাদ সেনাপ্রধান থাকাকালে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে দিয়ে জোরপূর্বক সামরিক শাসন জারি করিয়ে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিযুক্ত হন। এর চার বছরের মাথায় ১৯৮৫ সালের শেষদিকে নতুন দল জাতীয় পার্টি গঠন করেন তিনি; যার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি। ওই বছরের ৫ মে অনুষ্ঠিত তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে প্রথমবারের নিরঙ্কুশ জয় ছিনিয়ে নেয় জাপা। এর আগে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের অনেক বড় নেতাসহ বিভিন্ন দলের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতাকে দলে ভিড়িয়ে নেন এরশাদ।
দ্বিতীয় দফায় ১৯৮৮ সালে চতুর্থ সংসদ নির্বাচনেও ২৬১ আসনে জয় ছিনিয়ে নেয় জাপা। তবে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, সিপিবি ও জামায়াতসহ অধিকাংশ দল ওই নির্বাচনে অংশ নেয়নি। কিন্তু এতেও শেষ রক্ষা হয়নি। তীব্র ছাত্র-গণআন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পতন ঘটে এরশাদের স্বৈরশাসকের। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর গ্রেপ্তার হন এরশাদ। একই সময়ে জাতীয় পার্টির অনেক নেতাও গ্রেপ্তার হন। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে গঠিত দেশের প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে জামায়াতের সমর্থনে সরকার গঠন করে বিএনপি। দলটির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। অন্যদিকে গ্রেপ্তারের পর এরশাদসহ জাপার নেতাদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা হতে থাকে। এসব মামলার মধ্যে অবৈধ অস্ত্র আইনের এক মামলায় এরশাদকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। তবে ক্ষমতাচ্যুতির পরও ওই নির্বাচনে ৩৫টি আসনে জয় পায় জাপা এবং এর মধ্যে কারাবন্দী এরশাদ একাই পাঁচ আসনে জয়ী হন।
১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও সরকার গঠনের প্রয়োজনীয় ১৫১ আসনে পরিবের্ত ১৪০ আসন পায় আওয়ামী লীগ। তবে জাপার সমর্থন নিয়ে ঐকমত্যের সরকার গঠন করে বিজয়ী দল। ওই নির্বাচনে মাত্র একটি আসন পাওয়া জাসদও সমর্থন করে আওয়ামী লীগকে। দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা ঐকমত্যের সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। জাপা থেকে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও জাসদ থেকে আ স ম আবদুর রব ওই সরকারের মন্ত্রী নিযুক্ত হন। আওয়ামী লীগ সরকারের দয়ায় কিছুদিনের মধ্যেই কারামুক্ত হন হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ। এর থেকেই শুরু হয় এরশাদের আওয়ামীপ্রীতি। তবে মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় সরকারের সঙ্গে মতবিরোধ সৃষ্টি হয় জাপার। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন এরশাদ। কিন্তু এতে তীব্র আপত্তি তোলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। শুরু হয় জাপার গৃহবিবাদ। মন্ত্রীত্ব টিকিয়ে রাখতে মঞ্জুর নেতৃত্বে গঠিত হয় জাতীয় পার্টি (জেপি) বা জাপা (মঞ্জু)। যাত্রা শুরু হয় ব্রাকেটবন্দী জাপার। কিছুদিনের মধ্যেই বিএনপির সঙ্গে গাঁটছাড়া বাধেন এরশাদ। আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত ও ইসলামী ঐক্যজোট মিলে ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০০ সালের মাঝামাঝি গঠিত হয় চারদলীয় জোট। শুরু হয় সরকারবিরোধী আন্দোলন।
অবস্থা বেগতিক দেখে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটকে দুর্বল ও আওয়ামী লীগের পাল্লা ভারী করতে এরশাদের জামিন বাতিল করে তাঁকে কারাবন্দী করে আওয়ামী লীগ। অসুস্থ এরশাদকে আনা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয় হাসপাতালের প্রিজন সেলে। সেখানে বসেই এরশাদের সঙ্গে দফারফা হয় সরকারের। কারাযন্ত্রণা এড়াতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ফের জোট গড়ার পক্ষে মত দেন এরশাদ। এতে বেজায় ক্ষিপ্ত হন দলটির আরেক প্রভাবশালী নেতা ও ঢাকার সাবেক মেয়র নাজিউর রহমান মনজুর। এ নেতার নেতৃত্বে আরেক দফা ভাঙনের মুখে পড়ে জাপা। গঠিত হয় বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)। পরবর্তী সময়ে এই বিজেপিই আবার দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। বিশিষ্ট চক্ষু চিকিৎসক অধ্যাপক এম এ মতিন গঠন করেন আলাদা জাতীয় পার্টি। সর্বশেষ এরশাদের পুরোনো রাজনৈতিক সহকর্মী কাজী জাফর আহমেদ দল ভেঙে আলাদা হন। আবার এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টি পুনর্গঠনের ঘোষণা দেন তাঁর সাবেক স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিক। এভাবে নেতৃত্বের কোন্দল, এরশাদের নারীপ্রীতি, একাধিক বিয়ে, দাম্পত্যকলহ ও সরকারের কাছ থেকে সুবিধা আদায়কে ঘিরে জন্মের পর থেকে সাতবার ভাঙনের মুখে পড়েছে জাপা।
২০০১ সালের ১ অক্টোবরের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জয় পায় এবং সরকার গঠন করে। তবে চারদলীয় জোট (বিএনপি-জামায়াত জোট) সরকারের মন্ত্রিসভায় বিএনপির বাইরে জামায়াতের দুই নেতা ছাড়া ইসলামী ঐক্যজোটসহ ব্রাকেটবন্দী জাপার কোনো অংশের নেতাকেই মন্ত্রীত্ব দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে জেপির সভাপতি আনোয়ার মঞ্জু এবং জাসদের সভাপতি আ স ম আব্দুর রব শেখ হাসিনার ঐকমত্যের সরকারের মন্ত্রিসভায় থাকলেও দল দুটি আওয়ামী লীগকে ছাড়াই আলাদা আলাদা নির্বাচন করে। এরপর নবম সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০০৬ সালের শেষের দিকে এরশাদের জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, ড. কামালের গণ ফোরাম, হাসানুল হক ইনুর জাসদ, মোজাফ্ফর ন্যাপ, গণতন্ত্রী পার্টি, দিলীপ বড়ুয়ার বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল, গণ আজাদী লীগ, নজিবুল বাশার মাইজভাণ্ডারীর তরীকত ফেডারেশন, প্রশিকার চেয়ারম্যান কাজী ফারুকের ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন ও কমিউনিস্ট কেন্দ্রসহ আরো কয়েকটি ক্ষুদ্র দলকে নিয়ে মহাজোট গঠন করে আওয়ামী লীগ। যদিও সংঘাতময় পরিস্থিতিতে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশে জরুরি অবস্থা জারির (এক-এগারো নামে পরিচিত) কারণে পূর্বঘোষিত ২২ জানুয়ারির নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়।
স্থগিত নবম সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ওই নির্বাচনে অংশ নেয় মহাজোট। তবে গণ ফোরাম ও ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলনকে মহাজোটের বাইরে রাখা হয়। নির্বাচনে ভূমিধস জয় পায় আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। আর তখন থেকেই নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির পরিবর্তে আওয়ামী লীগের সঙ্গে নিরবিচ্ছিন্নভাবে গাটছড়া বাঁধে এরশাদের জাপা; যা এরশাদের মৃত্যু পর্যন্ত অটুট ছিল। এমনকি তাঁর মৃত্যুর পরও তাঁর ভাই ও দলটির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের (জি এম কাদের) নেতৃত্বে সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। জনশ্রুতি আছে- বিএনপি, জামায়াত, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল- বাসদসহ অনেকগুলো দলের বর্জনের মুখে নির্বাচনে গ্রহণযোগ্যতা পাওয়া এবং সংসদে গৃহপালিত বিরোধী দল বানানোর জন্য গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে বল প্রয়োগ করে জি এম কাদেরকে নির্বাচনে আসতে বাধ্য করেছিলেন সদ্য ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা।
তবে বিগত সময়ে প্রথম দফায় পাঁচ বছর ও সর্বশেষ তিন দফায় ১৫ বছর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে গভীর সখ্যের কারণে জাপার কিছু নেতা ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হলেও কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সিংহভাগ নেতাকর্মী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সেই সঙ্গে সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে পড়ায় বিধ্বস্ত হয়েছে দলটি। শীর্ষ নেতাদের সমালোচনা করায় অনেক নেতাকে বহিস্কারের ঘটনাও ঘটেছে। গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সারাদেশে জাপার জনবিচ্ছিন্নতার ক্ষত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। দলটির অধিকাংশ নেতাই মনে করেন, দিন দিন কমছে কর্মী-সমর্থক ও সাংগঠনিক শক্তি। সেই সঙ্গে জনসমর্থন নেমে এসেছে তলানিতে। দলটি সাধারণ মানুষের কাছে বিশ^াসযোগ্যতা একেবারেই হারিয়ে ফেলেছে। অথচ জাতীয় রাজনীতিতে জাপার অবস্থান এক সময়ে তৃতীয় ছিল। দলটিতে লবিং গ্রুপিং এখনো চলমান। এমন বাস্তবতায় দলটির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদের নেতৃত্বে এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় ভাঙনের মুখে পড়ে জাপা। বিধ্বস্ত অবস্থায়ও দলটি চলছে দেবর-ভাবি তথা রওশন ও কাদেরের আলাদা আলাদা নেতৃত্বে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকরা বলছেন, একটি রাজনৈতিক দলের কাছে সাধারণ মানুষের অনেক প্রত্যাশা থাকে। এছাড়া সংসদে টানা তিন মেয়াদের বিরোধী দলের কাছে চাওয়াটা খুব বেশি থাকাও স্বাভাবিক। অথচ রাজনৈতিক সংকট, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্য যেকোনো সংকটে জাপার কোনো ভূমিকা দৃশ্যমান নয়। নেতাকর্মীদেরও রাস্তায় দেখা যায় না। মানুষের প্রতি দলের দায়দায়িত্ব থাকারও প্রমাণ মেলে না। মাঠ পর্যায়ে পার্টির কার্যক্রমও কার্যত স্থবির। জনগণের কাছে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা কিংবা সেতুবন্ধনরও নেই। দলটির কার্যক্রম সংসদে সরকারবিরোধী বক্তব্য আর দলীয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। সর্বশেষ তিনবার বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় দলটির পেছনে রাষ্ট্রের প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়েছে। এরশাদকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত, রওশন ও জি এম কাদেরকে বিরোধী দলের নেতা, উপনেতা, হুইপ থেকে শুরু করে জাপার পক্ষে অনেকেই সংসদ সদস্য হয়েছেন। প্রটোকল নিয়েছেন। মূলত তাদের পেছনেই নিয়ম অনুযায়ী রাষ্ট্রের বিপুল অর্থ ব্যয় হয়েছে। রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার মোটা টাকা খরচ করে এরশাদভক্তদের ব্যবহার করেছে। প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনের আগে নানা নাটকীয়তায় হাস্যরসের পার্টিতে পরিণত হয়েছে দলটি। অনেকেই ‘সার্কার্স পার্টি’ হিসেবেও তাচ্ছিল্যের সঙ্গে দলটির নাম ব্যবহার করেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, জাপা রাজনৈতিকভাবে রুখে দাঁড়ালে শেখ হাসিনার সরকার একতরফাভাবে বিতর্কিত অনেক সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধাবোধ করতো। বাস্তবে জাপা তা করতে পারেনি। ২০২১ সালের ২৭ নভেম্বর জাপা নেতা মুজিবুল হক চুন্নু সংসদে বলেছিলেন, ‘মাননীয় স্পিকার, এমন অবস্থা হয়েছে যে, সরকারের পক্ষে কথা বললে পাবলিক আমাদের আওয়ামী লীগের দালাল বলে। আর বিপক্ষে বললে, সরকার ক্ষিপ্ত হয়।’ সাইবার নিরাপত্তা বিল, নির্বাচন কমিশন আইন, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন নিয়ে সংসদের ভেতরে ও বাইরে নানা বিতর্ক হলেও কার্যকর ভূমিকা নেয়নি জাপা। কখনও কখনও বিরোধীতা করলেও তা ছিল লোক দেখানো। আইন পাশ হওয়ার সময়ে নিরবে থেকেছে অথবা সমলোচনার ভয়ে ওয়াকআউট করে দায় সেরেছে, আবার কখনও সমর্থন দিয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, খুন, ঘুষ, অর্থ কেলেঙ্কারি, নিত্যপণ্যের উর্ধ্বগতি, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট, ডলার কেলেঙ্কারী, অনিয়ম, দুর্নীতি, দখল, বাকস্বাধীনতা হরণসহ জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে জনগনের প্রত্যাশা অনুযায়ী ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়েছে জাপা।
এসব বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে এরশাদের মন্ত্রিসভার সদস্য ও বর্তমানে রওশনপন্থী অংশের নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, কাজের সঙ্গে কথার কোনো মিল না থাকায় জাতীয় পার্টি সম্ভাবনাময় এবং গণমানুষের দল হতে পারেনি।’ তিনি বলেন, জাপার বর্তমান চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের কথা ও কাজে মিল নেই। তিনি পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠ কেন্দ্রীয় নেতা ও তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করে দল পরিচালনাসহ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মূলত সঠিক নীতির অভাবে জাপা মানুষের কাছে অস্থাহীনতার দল ও ব্র্যাকেটবন্দি হয়েছে। পার্টিতে অন্ত:কলহ ও রাজনৈতিক মতবিরোধ থাকার কথা স্বীকার করে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, দিনের পর দিন দলে ভাঙাগড়ার খেলা চলছে। এ কারণে জাপা জনতার কাতার ও মানুষের মন থেকে সরে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ দলটির প্রতি একেবারেই আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। কোনোভাবেই তা পুনরুদ্ধার করা যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে দলটি হারিয়ে যাওয়ার পেছনে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে দায়ী করেন সাবেক এই মন্ত্রী।
যদিও কাজী ফিরোজ রশীদের এসব বক্তব্যের অনেকাংশের সঙ্গেই দ্বিমত পোষণ করেছেন জি এম কাদেরের অনুসারীরা। জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, রাজনৈতিক চাপে স্বাধীনভাবে রাজনীতি করতে পারেনি জাতীয় পার্টি। মূলত এ কারণেই সাধারণ মানুষ মনে করতে পারে তাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। তবে এরশাদের সঙ্গে থাকা জাপার পরীক্ষিত নেতা হিসেবে পরিচিত ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, জি এম কাদেরের সুবিধা ভোগের মানসিকতা দলের জনপ্রিয়তা শূন্যের কোঠায় নিয়ে গেছে।
ভোরের আকাশ/মি